নেপালে যোগের বিকাশ, মুসলিমদের প্রতিবাদ
নেপালে যোগের বিকাশ, মুসলিমদের প্রতিবাদ - সংগৃহীত
বাগমতি বোর্ডিং স্কুল। একদল নেপালি কিশোর হাতের তালু প্রসারিত করে, চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে। ধ্যান ও উদ্দীপ্ত ব্যায়াম পর্বের মধ্য দিয়েই প্রশিক্ষক হাঁটতে শুরু করলেন ছাত্রদের মধ্য দিয়ে।
১৫ বছরের অভিয়ান ভট্ট বলেন, যোগ আসলেই নিজের যত্ন নিতে সহায়তা করে। তিনি জানান, তিনি হাঁটুর সমস্যায় ভুগছিলেন। কাঠমান্ডুর এই স্কুলে যোগ প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেছেন।
যোগের এই ক্লাস ইলেক্টিভ। তবে নেপালে যোগের ক্লাস আর এক্সট্রাকারিকুলার কার্যক্রমে সীমিত থাকছে না। আগামী মাসে নতুন একাডেমিক টার্ম শুরু হলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে দেশটিতে অত্যাবশ্যিক বিষয়ে পরিণত হবে।
সংশোধিত কারিকুলামে অত্যাবশকীয় বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে গণিত, বিজ্ঞান, নেপালি ভাষা, ইংরেজি। এখন যোগের পাশাপাশি আয়ুর্বেদ ও বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নেপালের শিক্ষামন্ত্রী গিরিরাজ মনি পোখরেল এক সাক্ষাতকারে বলেন, যোগ হলো আমাদের প্রাচীন বিজ্ঞান। আমরা চাই ছাত্ররা তা শিখুক, আমি মনে করি, এটাই ঠিক সময়।
সারা বিশ্বেই যোগ সাধনার স্কুল ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শত শত পাবলিক স্কুলে গভীরভাবে শ্বাস নিতে ছাত্রদের জন্য সময় বরাদ্দ করছে। নেপালের প্রতিবেশী ভারতে যোগের জন্ম হয়েছিল। সেখানে ইতোমধ্যেই কিছু কলেজ ও সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে হলে এ ধরনের কোর্স করতে হয়।
তবে নেপালে যোগকে বাধ্যতামূলক করার ফলে সেখানে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে এ ধরনের ব্যয়ামকে ধর্মীয় ও আদর্শগত অর্থে প্রয়োগ করা হয়। এর সাথে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা সন্ধান করা হয়।
মুসলিম গ্রুপগুলো ‘ওম’ শব্দটিকে হিন্দুধর্মের বলে মনে করে। তাছাড়া সূর্য প্রণামকেও তাদের একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলামের পরিপন্থী বিবেচনা করা হয়।
ভারতে হিন্দু প্রথম এজেন্ডা বাস্তবায়নে উদ্যোগী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সূর্য প্রণাম ও সংস্কৃত মন্ত্রকে হিন্দু জাতীয়বাদী গ্রুপগুলোর সামরিক কায়দার ড্রিলের সাধারণ অংশ। সর্বভারতীয় জাতীয় সচেতনতা লালন করার জন্যই এসব করা হয়।
উগ্র ডানপন্থীরা এখনো নেপালে তেমন শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অবশ্য সেক্যুলার গণতান্ত্রিক নেপারে রয়েছে বিপুল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ভারত ও চীনের মধ্যে থাকা নেপাল প্রায়ই বৈরী অবস্থার মুখে পড়ে, কুশলী কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়।
নেপাল ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের ঘনিষ্ঠ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চীনা বিনিয়োগকারীরা সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে কয়েক মিলিয়ন ডলার ঢেলেছে। ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধন থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির অধীনে ভারতের নির্ভরতা কাটানোর চেষ্টা করছে নেপাল।
কিন্তু তা সত্ত্বেও নেপালের মুসলিম অ্যাক্টিভিস্টরা বলছে, ছাত্রদের যদি হিন্দু দেবতা সূর্যকে নমস্কার জানানোর সূর্য প্রণাম করা বাধ্যতামূলক করা হয়, তবে তারা প্রতিবাদ জানাবে। স্কুল প্রশাসন জানিয়েছে, তারা কিভাবে এই কোর্স পরিচালনা করা হবে তা বোঝার চেষ্টা করছে।
দেশটিতে যোগ্য যোগ শিক্ষক আছেন অল্প কয়েকজন। নতুন ক্লাসের কথা ঘোষণা করার আগে সরকার তাদের সাথে পরামর্শও করেনি। ‘রুমাল চুরির’ মতো খেলা ও শারীরিক কসরতের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে যোগকে।
নেপাল মুসলিম ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি নজরুল হোসাইন বলেন, কোনো বিশেষ ধর্মের সাথে সম্পর্কিক কিছু বাধ্যতামূলক করা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী। আমরা সূর্য প্রণাম করব না, তাদের স্বাস্থ্যের সাথে ধর্মকে সম্পৃক্ত করা উচিত হবে না।
নেপালি কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে নেপালে যে সরকার কারিকুলাম পরিবর্তন করেছে তারা কট্টরপন্থী হিন্দু নয়, বরং নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির। তারা উল্লেখ করেন, কেবল চতুর্থ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রদের যোগ ক্লাস করতে হবে। তারা আরো বলেন, সক্রিয় লাইফস্টাইলের দিকে জোর দেয়া হচ্ছে। অন্য ছাত্ররা ইচ্ছা করলে এই বিষয়টি নিতে পারবে।
নেপালের কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক গনেশ ভট্টরাই বলেন, কোনো বিশেষ ধর্মকে প্রচারের জন্য এটি করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ওম’ কোর্সের অংশ নয়। ছাত্ররা অস্বস্তি বোধ করলে সূর্য প্রণাম এড়াতে পারবে।
তিনি বলেন, গণশিক্ষার জন্য এই কোর্স। কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো কিছু থাকলে তা সংশোধন করা হবে।
কয়েকজন ছাত্র জানিয়েছে, তারা তাদের স্কুলে নতুন কিছুর জন্য প্রস্তুত।
নিউ ইয়র্ক টাইমস