রাশিয়া-ভারত-চীন জোটে উত্তেজনা!

রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালান | Mar 18, 2020 07:31 am
রাশিয়া-ভারত-চীন জোটে উত্তেজনা!

রাশিয়া-ভারত-চীন জোটে উত্তেজনা! - সংগৃহীত

 

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চলতি মাসের শেষ দিকে রাশিয়া যাবেন। সেখানেই ইউরেশিয়ান তিন দেশীয় গ্রুপ রাশিয়া, ভারত ও চীনের সমন্বয়ে গঠিত আরআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে। সভাটি হবে ২২-২৪ মার্চ সোচিতে। এর অর্থ হলো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে নাড়া দেয়া একটি ভূরাজনৈতিক ঘটনার সৃষ্টি।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সভায় সদ্য সমাপ্ত আফগানিস্তান শান্তিচুক্তি, কোয়াডের (অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত চার জাতি নিরাপত্তা সংলাপ) প্রত্যাবর্তন, ইন্দো-প্যাসিফিক কনসেপ্ট এবং আইএনএফ (ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস) চুক্তিভুক্ত অঞ্চলের অবসানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ২০১৯ সালে ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে আরআইসি নেতাদের শেষ বৈঠকটি হয়েছিল। এর ঠিক আগ দিয়ে হয়েছিল আরেকটি ত্রিদেশীয় বৈঠক। এতে তিন গণতান্ত্রিক দেশ- জাপান, আমেরিকা ও ভারত (জেএআই) অংশ নিয়েছিল।

কৌশলগত ত্রিভূজ হিসেবে আরআইসি সামনে আনেন ইয়েভগেনি প্রিমাকভ। ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি পাশ্চাত্য জোটের সাথে ভারসাম্য বিধান করার জন্য এ ধারণা দেন। রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল মার্কিন নির্দেশিত পররাষ্ট্রনীতির অবসান করা এবং ভারতের মতো দেশগুলোর সাতে পুরনো অংশীদারিত্ব পুনঃগঠন ও চীনের মতো দেশগুলোর সাথে অপেক্ষাকৃত নতুন বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ করা।

ওই সময়ে ভারতের লক্ষ্য হাসিয়ে অন্তত আংশিকভাবে হলেও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল এটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের সাথে ভারতের কৌশলগত সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে বর্তমানে দিল্লির প্রয়োজন এটি পূরণ করবে কিনা তা অনিশ্চিত। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরআইসির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করতে পারে, ইন্দো-প্যাসিফিকে ওয়াশিংটনের ভূমিকা খর্ব করতে পারে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে ভারত। বিশেষ করে কাশ্মির ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ওয়াশিংটন যে সমর্থন দিল্লিকে দিয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া চীনের উত্থান ঘটেছে ভারতের কৌশলগত অনেক সম্পৃক্ততার সামনে ও কেন্দ্রে।

ভারত ঐতিহ্যগতভাবে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে, বিশেষ করে পরাশক্তিদের বিষয়াদিতে, কোনো পক্ষ নেয়নি। ফলে আরআইসি, ব্রাজিল-রাশিয়া-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার (ব্রিকস) কিংবা সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) মতো জোটগুলোতে কাজ করা ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে পড়েছে।
এমনকি রাশিয়া যদিও এখনো ভারতের পুরনো বন্ধু হয়ে আছে, কিন্তু, দেশটি ক্রমবর্ধমান হারে চীনা নির্দেশ গ্রহণ করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ প্রকাশ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার বিরোধিতা করেছেন।
রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ ও ইন্দো-প্যাসিফিকের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা চীনকে সংযত করার উদ্যোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এটি প্রকৃতিগতভাবেই বিভেদমূলক। তিনি বলেন, এটাকে কেন এশিয়া-প্যাসিফিকের বদলে ইন্দো-প্যাসিফিক বলার দরকার হলো? এর জবাব হলো চীনকে বাদ দেয়ার তাগিদ। পরিভাষাগত ব্যবহার করা উচিত ঐক্যবদ্ধতার জন্য, বিভেদের জন্য নয়। তিনি বলেন, এসসিও বা ব্রিকসের কোনোটিই বর্জনমূলক নয়।

জম্মু ও কাশ্মিরের মতো বিষয়ও জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করেছে চীন। চীনকে রাগাতে না চেয়ে ভারতকে সমর্থন না করে মধ্যপন্থী অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। এতে মনে হয়, দিল্লির সাথে সম্পর্ক রাখাকে মস্কো গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও তারা বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
সার্বিকভাবে রাশিয়া ও চীনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে ভারতের কৌশলগত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মিলছে না। আরেকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। এমনকি তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আফগান শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করলেও আপগানিস্তানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতকে আমন্ত্রণ জানায়নি রাশিয়া। আফগানিস্তানের ব্যাপারে একটি আঞ্চলিক সমাধানের কথা বলা হলেও ভারতকে পরিকল্পিতভাবে তা থেকে বাদ রাখা হয়েছে চীন ও পাকিস্তানের অনুকূলে। রাশিয়া ও চীনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুবিধা থাকলেও আরআইসি গ্রুপিংয়ের মধ্যেও যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা রয়েছে, তা গোপন করা যায় না।

দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us