ভারতে প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস গবেষণা! বন্ধ হলো মার্কিন প্রতিষ্ঠান
ভারতে প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস গবেষণা! বন্ধ হলো মার্কিন প্রতিষ্ঠান - সংগৃহীত
ভারত সরকার মনিপালে ‘অননুমোদিত’ একটি ভারতীয় গবেষণাগারে প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস নিয়ে কাজ করার জন্য তহবিল সংস্থান করা এবং ওই কাজেও অনুমতি না নেয়ার জন্য মার্কিন সরকারের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বন্ধ করে দিয়েছে।
নিপাহকে সম্ভাব্য জৈব-অস্ত্র বিবেচনা করা হয়।
সিডিসিকে দেয়া ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয় যে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জীবাণু নিয়ে কেবল বিএসএল৪ গবেষণাগারে পরীক্ষা চালানো যাবে মর্মে সতর্কতা চালানো সত্ত্বেও কাজটি পরিচালনা করা হচ্ছিল। সর্বোচ্চ মাত্রার জৈবিক নিরাপত্তা থাকায় বিএসএল৪ ল্যাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক ও বিরল মাইক্রোব নিয়ে কাজ করা হয়। ইবোলা ও মারবার্গ ভাইরাসসহ এসব মাইক্রোব অত্যন্ত প্রাণঘাতী, এগুলোর কোনো চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন নেই।
মন্ত্রণালয় জানায়, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)/স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্ক্রিনিং কমিটিকে (এইচএমএসসি), তারাই অনুমতি প্রদান বা প্রত্যাখ্যানের কর্তৃপক্ষ, পাস কাটিয়ে ভাইরাস গবেষণার নির্দেশিকার পরিপন্থীর কাজটিকে তারা খুবই গুরুতর দৃষ্টিতে নিয়েছে।
সিডিসি স্বীকার করেছে যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাড়পত্র নেয়া নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটির প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছিল না। তারা আরো জানায়, তারা সরাসরি গবেষণাটি চালু করেনি।
এদিকে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সিডিসি ও মনিপাল সেন্টার ফর ভাইরাস রিসার্চ (এমসিভিআর) উভয়কে গবেষণা বন্ধ করতে বলেছিল।
এতে বলা হয়, মনিপাল ইনস্টিটিউটকে সব নিপাহ ভাইরাসের নমুনা পুনের সার্টিফায়েড আইসিএমআর-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে হস্তান্তর করতে হবে এবং সিডিসিকে বেআইনি সব তহবিল বন্ধ করতে হবে।
একটি স্মারকে বলা হয় যে সিডিসিকে অননোমদিত তহবিল প্রদান করা ও নিপাহ ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা বন্ধ করতে হবে। উল্লেখ্য, নিপাহ ভাইরাসটি রিস্ক গ্রুপ ৪ শ্রেণীভুক্ত। এটি জীবাণু অস্ত্রে পরিণত হতে পারে বলে একে প্রাণঘাতী বিবেচনা করা হয়।
এতে বলা হয়, সিডিসি নিপাহ ভাইরাস রোগ (এনআইভি) শনাক্ত করার জন্য এমসিভিআরের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এটি জেনেও যে এনআইভি বিএসএল ৪ মাত্রার জীবাণু। এমসিভিআর প্রশিক্ষণ প্রদানের আগে সিডিসি রীতির বরখেলাফ করে জাতীয়/সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে পরামর্শ করেনি। নিপাহ উচ্চ ঝুঁকির জীবাণু। এটি জীবাণু-সন্ত্রাসবাদের এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কাযুক্ত। এ কারণে সব নমুনা আরো সতর্কতার সাথে এবং কেবল বিএসএল৪-এ পরীক্ষা করা উচিত।
তবে সিডিসি জানায়, প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয়েছিল গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি এজেন্ডার (জিএইচএসএ) মাধ্যমে। তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের গবেষণা ব্যবস্থাকে জোরদার করা।
আটলান্টাভিত্তিক সিডিসি জানায়, সব প্রশিক্ষণ হয়েছে জৈব-নিরাপত্তার সাথে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে।
সিডিসি জানায়, অধিকতর অনুমতির প্রয়োজনের বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিল, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
সিডিসি মুখপাত্র বলেন, ছাড়পত্র না পাওয়ার পর প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ভারতীয় ও মার্কিন সরকারের নীতি অনুযায়ী এমসিভিআরকে আর কেনো তহবিলের সংস্থান করা হয়নি। কিন্তু একেবারে শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটি কেন তহবিল সংস্থানের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
এমসিভিআরের পরিচালক ড. অরুনকুমার বলেন, আমরা এইচএমএসসি থেকে কোনো অনুমোদন নেইনি। পরীক্ষার আগে এমসিভিআর ভাইরাসটিকে নিস্ক্রিয় করে নেয়। নিস্ক্রিয় করা ভাইরাসটি এমসিভিআরের বিএসএল৩ স্থাপনায় নেয়া হয়। এমসিভিআর থেকে নিপাহ ভাইরাসের কোনো নমুনা অন্য কোনো ল্যাবে (এনআইভি ছাড়া) পাঠানো হয়নি।
তিনি বলেন, এমসিআরভিতে নিপাহ ভাইরাস শনাক্তকরণ প্রশিক্ষণ ২০১৭ সাল থেকে ডিজিএইচএসের জিএইচএসএ সেলে চলছে। প্রতি কোয়ার্টারে ডিজিএইচএস ও আইসিএমআর বিষয়টি পর্যালোচনা করে।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে কেরালায় প্রাদুর্ভাবের সময় নিপাহ ভাইরাসের পরীক্ষা চালানো হয়েছিল এমসিভিআরে। আইসিএমআরের ড. আর গঙ্গাখেধার বলেন, সিডিসি এই প্রশিক্ষণের তহবিল দিয়েছিল, এইচএমএসসি থেকে কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি।
সিডিসি ২০১৫ সালে জানিয়েছিল যে ভারতজুড়ে গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি এজেন্ডা (জিএইচএসএ) বাস্তবায়নের জন্য ভারতের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করবে। এই সহযোগিতা চুক্তির ফলে বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি সম্ভাব্য বৈশ্বিক রোগ হুমকির জন্য ভারতের সার্বিক প্রস্তুতি জোরদারে সহায়তা প্রয়োজন।
তহবিলপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে
• অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস
• ক্রিস্টিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিএমএআই)
• মনিপাল ইউনিভার্সিটি
• স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য শাখা
• ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল
• ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইপিমেওলজি
• ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইপিডেমিওলজি
• ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার
• ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সস
• ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন টুবারকিউলসিস
• ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভেটেরিনারি ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড ডিজিজ ইনফরমেটিক্স
• ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি, পুনে
• পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট।
সিডিসি ইন্ডিয়া তহবিল প্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি সহায়তা ও প্রকল্প সহায়তা প্রদান করবে। এই অংশীদারিত্ব সিডিসি ও ভারতের জন্য জিএইচএসএর বিভিন্ন মৌলিক কার্যক্রম তদারকিতে সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে।
সিডিসি নয়া দিল্লি ও হায়দরাবাদকে গ্লোবাল ডিজিজ ডিটেনশন রিজিওন্যাল সেন্টার, গ্লোবাল ইমুনাইজেশন ডিভিশন, ডিভিশন অব গ্লোবাল এইচআইভি ও টুবারকোলুসিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা কর্মসূচিতে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। তারা ভারত সরকার, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে সংক্রমণ রোগের ব্যাপকভিত্তিক নিরাময়ে সহায়তা করে যাচ্ছে।
জিএইচএসএর লক্ষ্য হলো সব ধরনের জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি শনাক্ত করা, প্রতিরোধ করা ও সাড়া দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য, কৃষি ও বিজ্ঞানের মতো খাতগুলোতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধ করা। জিএইচএসএ ও ইবোলা প্রস্তুতি বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য ২৪টি দেশে সক্রিয় ৪৯টি সংস্থাকে আগামী বছর সিডিসি ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা করবে।
সূত্র : এসএএম