করোনা আতঙ্কে দোকান খালি করে ফেলল ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা!

করোনা আতঙ্কে দোকান খালি করে ফেলল ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা! - ছবি : সংগ্রহ
ব্রিটেনে কভোড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরেক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় বাংলাদেশীর মৃত্যু হলো ওই রোগে। সর্বশেষ মৃত্যু বরণ করেছেন যুক্তরাজ্য সফররত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান । তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দা। মঙ্গলবার সকাল ৫টা পর্যন্ত ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৪৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৫৫ জন।
স্থানীয় কবি ও সাংবাদিক নজরুল ইসলাম অকিব জানিয়েছেন, তিনি গত বছর তার (নাতনীর) ব্রিটেন প্রবাসী পুত্রের মেয়ের বিয়েতে এসেছিলেন। এর পর তিনি গত বছর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমুদ্র ভ্রবনে (বর্নমাউথ ) গিয়েছিলেন। ওই দিন পিকনিক থেকে ফেরার পরপরই ব্রেইন স্টোক করে হাসপাতালে ভর্তি হন। সম্প্রতি তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। লন্ডনে তার এক ছেলে বসবাস করেন। আরেক ছেলে বাংলাদেশে। তিনি মাহমুদ ট্রভেলসের স্বত্বাধিকারী।
উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুরণকারী প্রথম বাংলাদেশী ব্যক্তি ছিলেন ম্যানচেষ্টারে বসবাসরত ৬০ বছর বয়সী আরেক বাংলাদেশী, যিনি ৫/৬ বছর আগে ইতালি থেকে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন ব্রিটেনে। দ্বিতীয় ব্রিটিশ বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেছেন লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে। করোনার সাথে হাসপাতালে ৮ দিন যুদ্ধ করার পর শুক্রবার ভোরে পূর্ব লন্ডনের রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ৬৬ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি।
এদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরের বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও। মিনিক্যাবিং, রেস্টুরেন্ট ব্যবসাসহ একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে গ্রোসারী দোকান গুলিতে। বড় বড় সুপারস্টোরগুলির সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এসকল গ্রোসারী দোকানের মালিক কর্মচারীরা। তবে আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষজন বাড়তি জিনিসপত্র ক্রয় করে আপদকালীন খাদ্য মজুদ করছেন। ফলে স্টক সঙ্কটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত বিক্রির কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দোকানিরা বলছেন, অন্তত এক বছরের খাদ্য মজুদ রয়েছে তাদের কাছে। ক্রেতাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
রোববার ( ছুটির দিন ) দুপুরে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের হোয়াইটচ্যাপেল, ব্রিকলেইন, শেওয়েল ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের লম্বা লাইন। রাজধানী লন্ডনের বাইরে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ওল্ডহাম ও বার্মিংহামেও করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। কখন সরকারি ঘোষণায় বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক চলাফেরা। তাই ঘরে অতিরিক্ত খাবার মজুদের চিন্তা সাধারণ মানুষদের। তাদের অনেকেই বলেছেন আতঙ্কিত হয়েই তারা অতিরিক্ত খাবার ক্রয় করছেন।
তবে সাধারণ মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পূর্ব লন্ডনের বাংলা টাউনের ডাইরেক্টর রফিক হায়দার জানিয়েছেন, ব্রিটেনে কমপক্ষে ১ বছরের খাদ্য দ্রব্য মজুদ থাকে। মানুষ শুধু আতংকিত হয়ে অতিরিক্ত ক্রয় করছেন। তিনি বলেন, এটি আমাদের জন্য প্রাথমিক ভাবে শুভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির কারন হবে। একই সাথে ক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারন সামনেই রমজান। তখন বিভিন্ন কোম্পানিয় অফার দিবে। এখন অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করলে তখন আর কেউ ক্রয় করবে না। তিনি এই ক্রয়কে পেনিং বাইয়িং ( আতঙ্কে কেনাকাটা ) হিসেবে উল্লেখ করেন।
মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, স্টকে যথেষ্ট পরিমাণ মাল থাকা সত্ত্বেও সাপ্লাইয়ারের কারণে স্টোরে মালামাল আসছে না। তিনি এজন্য ড্রাইভার সঙ্কটকে দায়ী করেন।
এদিকে হোয়াইটচ্যাপেলর রানীজ সুপার স্টোরের ডায়রেক্টর তোফাজ্জাল আলম জানান, তারা সেলফে মালামাল রাখতেই পারছেন না। দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা আতঙ্কে মানুষ অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করছেন। মানুষ একই সাথে রমজানেরও খরচ করছেন। ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহ পর তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়বে। একই অভিমত শেডওয়েলের প্রিয় বাজারের ডায়রেক্টর রায়হান আহমদের।
তিনি বলেন, সাপ্লাইয়ারের অভাবে গুদাম থেকে পণ্য আসা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় মোরগ, গরু ও ভেড়ার মূল্য বৃদ্ধি করেছে স্লটার হাউজগুলো। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, আগামী এক বছরের খাদ্যপণ্য মজুদ রয়েছে তাদের। তিনি ক্রেতাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত জিনিসপত্র ক্রয় করতে গিয়ে ক্রেতারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যে পরিমাণের মজুদ রয়েছে তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং কয়েক সাপ্তাহ পর রামাদ্বান অফার দিবে কোম্পানিগুলো। একইসাথে ব্যবসায়ীরা বলছেন এই কয়েক সাপ্তাহ বেচাকেনা বেশি হলেও পরে তাদেরও ক্রেতার জন্য বসে থাকতে হবে।