ভারতে করোনার ভয়াবহ আতঙ্ক
ভারতে করোনার ভয়াবহ আতঙ্ক - ছবি : সংগ্রহ
ভারত এখন কাঁপছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে। এখন পর্যন্ত মোট ১১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ২ জন। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশটির প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই করোনার আতঙ্ক হানা দিয়েছে। এমনকি দেশটির সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত করোনার জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয় ছাড়া যেকোনো মামলার বিচার বন্ধ রেখেছে।
শুরু হয়েছিল দিল্লি দিয়ে, এখন ভারতের অনেক রাজ্যেই স্কুল, কলেজ, সিনেমা হল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হলো। করোনা আতঙ্কে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকারগুলো। পশ্চিমবঙ্গেও স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কর্ণাটক, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গোয়া, আসাম, বিহারেও তাই হয়েছে। ওড়িশাতে সিনেমা হল, সুইমিং পুল, জিমও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিহারে কোচিং ইনস্টিটিউট, পার্ক, চিড়িয়াখানা বন্ধ। পাঞ্জাবে সিনেমা হলের পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও ক্লাবও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রেও। সেখানেও সিনেমা, থিয়েটার, সুইমিং পুল, পার্ক বন্ধ। গোয়ায় ক্যাসিনো, পাব, মাল্টিপ্লেক্স সব বন্ধ।
করোনা ভাইরাস আতঙ্কের ফলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা কেবলমাত্র অত্যন্ত জরুরি মামলারই বিচার করবে। সাধারণত সুপ্রিম কোর্টে ১৪টি বেঞ্চ বসে। কিন্তু সোমবার থেকে ছয়টা বেঞ্চ বসছে। করোনাভাইরাস রুখতে সরকার বেশি লোকের জমায়েত চায় না। সেই বিজ্ঞপ্তির কথা মাথায় রেখে সর্বোচ্চ আদালত ঠিক করেছে, আইনজীবী, মামলাকারী, আদালতের কর্মী, সাংবাদিক, দর্শনার্থীদের স্বার্থে শুধুমাত্র অত্যন্ত জরুরি বিষয়েই শুনানি হবে। যারা মামলায় সওয়াল করবেন, একমাত্র সেই আইনজীবীরাই আদালতকক্ষে থাকবেন। আর মামলাকারী একজন থাকতে পারবেন। সোমবার যেমন প্রতিটি বেঞ্চে বারোটি করে মামলা রাখা আছে। তার মধ্যে নির্ভয়ার ধর্ষক মুকেশ কুমারের আবেদনও আছে। বিচারপতিরা ছয়টি করে মামলার শুনানির পর আধঘণ্টা বিশ্রাম নেবেন। আদালত চত্বরে সব ক্যান্টিন, কাফে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মামলাকারীদের জ্বর আছে কি না, তা দেখার জন্য দেহের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশই বুঝিয়ে দিচ্ছে, আতঙ্ক কোন জায়গায় পৌঁছেছে। বস্তুত দিল্লির সাধারণ জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। রাস্তায় যানবাহন কম। বাজারে ভিড় নেই। মেট্রো রেলও কার্যত শুনশান। কিছু কেনার হলে লোকে হোম ডেলিভারিতে অর্ডার দেয়াই পছন্দ করছেন। বিভিন্ন খুচরো ব্যবসার সংস্থা ক্রেতাদের এসএমএস করে জানিয়েছে, হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রেও শারীরীক ছোঁয়া বর্জন করতে হবে।
এমনিতে রাজধানীর যে সব জায়গায় ভিড় হয়, পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে চাঁদনী চক বা করোল বাগের মতো এলাকা, সেখানেও লোকের সংখ্যা কম। দিল্লির অনেক অফিসই কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। যাত্রী না থাকায় বহু ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের ফ্লাইটও বাতিল করে দিচ্ছে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি। লোকে ঘরের বাইরে বেরতে চাইছেন না। বেরলেও দ্রুত ফিরে আসছেন। এই অবস্থায় বেড়াতে যাওয়া কমে গিয়েছে। ভিসা বাতিলের জন্য বিদেশিরাও ভারতে আসতে পারছেন না। ফলে যে সব জায়গায় পর্যটকের ভিড় থাকত, সেখানে এখন কার্যত কোনও লোক নেই। এর প্রভাব অর্থনীতিতে প্রবলভাবে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে শেয়ার বাজারে করোনার প্রভাব দেখা গেছে। সোমবারও ভারতের শেয়ার বাজার ১৬০০ পয়েন্ট পড়েছে। ডলারের তুলনায় রুপির দাম আরও ৪১ পয়সা কমেছে।
এই আতঙ্কের জেরে একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল করা হচ্ছে। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন তাদের তিন দিনের বৈঠক বাতিল করেছে। এখানেই ৬ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ পালন করার কথা ছিল। বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৫০ জনের দল আসার কথা ছিল। কিন্তু ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব ভিসা বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাদের আসার সম্ভাবনা নেই। তার ওপর করোনার আতঙ্ক। তাই সেই সংস্থার বার্ষিক সম্মেলন আপাতত বাতিল করা হয়েছে। চিত্তরঞ্জন ভবনের বাংলা বইমেলা পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের বাংলা বইমেলাও সম্ভবত পিছিয়ে যাচ্ছে। বস্তুত রাজধানী শহরে স্বাভাবিক জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। একই অবস্থা ভারতের অন্য শহরগুলোতে।
এখন পর্যন্ত ভারতে ১১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্র রাজ্যে। সেখানে ৩২ জন আক্রান্ত। তারপরেই আছে কেরালা। সেখানে ২২ জনের করোনা হয়েছে।দিল্লিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাতজন। তার মধ্যে দুই জন ভাইরাস মুক্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে মারা গিয়েছেন দুই জন। ইরান থেকে আরও ৫৩ জন ভারতীয় ছাত্র ও শিক্ষককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভারতের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। কিন্তু ভারতের মতো দেশে দ্রুত করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা আছে বলেই এই ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাতে অবশ্য আতঙ্ক আরো বাড়ছে।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের দাবি, আগামী দুই সপ্তাহে ভারতে করোনার প্রভাব সব চেয়ে বেশি দেখা যাবে। তাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে প্রশাসন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে