যেভাবে বুঝবেন আপনার নোখ সুস্থ না অসুস্থ
যেভাবে বুঝবেন আপনার নোখ সুস্থ না অসুস্থ - ছবি : সংগ্রহ
সুন্দর পরিপাটি ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান নখও একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। অযত্নে বা প্রতিদিনের কাজকর্মের ধকলে নখের নানা ধরনের সমস্যা হয়, নখ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অল্প একটু যত্ন আর কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার নখ সবসময় সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন থাকবে।
গোসল করার পর ভেজা নখ বেশ নরম থাকে। নখ কাটার জন্য এটাই সেরা সময়। যদি গোসলের আগে নখ কাটতে চান তা হলে ১৫ মিনিট পানিতে হাত ভিজিয়ে রেখে তবেই কাটুন। নখ কাটার কিছুক্ষণ যখন নখের ভেজাভাব কমে নখ শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাবে তখন বাফার দিয়ে নখ ঘষে নখের কোনাগুলো মসৃণ করে নিন। ভেজা বা নরম নখ বাফার করবেন না। এতে নখ ভেঙে যায়। নখের কোণা ঘষার সময় সাবধানে কাজটি করুন। বেশি জোরে ঘষলে সময়ের সাথে সাথে নখের গোঁড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ষ মাসে একবার ৭০ শতাংশ বা তার বেশি ইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল আছে এমন একটি সলিউশন দিয়ে নেইল কাটার ও নখের পরিচর্যার অন্যান্য যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে নিন।
ষ সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার এবং নখ ট্রিম করার পর ময়েশ্চারাইজ করতে ভুলবেন না।
ষ নখের জন্য নেইল-সেরাম পাওয়া যায় যা নখকে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও বাজারে পাওয়া যায় কিউটিকল সফটেনার। রাতে ঘুমানোর আগে এগুলো দিয়ে নখ ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করে ঘুমাতে হবে। যদি এসবের পেছেনে টাকা ঢালতে না চান তাহলে নখে আমন্ড অয়েল বা এভোকাডো অয়েল লাগান, এগুলোও ভীষণ কার্যকরী। যদি এই তেলগুলোর যেকোনো একটিও না থাকে ঘরে, তাহলে পেট্রোলিয়াম জেলিও লাগাতে পারেন।
ষ যেসব নেইলপলিশে ফর্মালডিহাইড আছে সেসব নেইলপলিশ নখকে দুর্বল করে দেয়। এ ছাড়া খুব বেশি গাঢ় রঙের নেইলপলিশও নখকে হলুদাভ ও দুর্বল করে ফেলে। তাই এ ধরনের নেইলপলিশ ব্যবহার করা কমিয়ে দিতে হবে। যদিও বা ব্যবহার করেই ফেলেন, তা হলে ব্যবহার করার পর নেইলপলিশ তুলে কয়েক দিনের জন্য নখ স্বাভাবিক থাকতে দিন। অন্য কোনো নেইলপলিশ লাগাবেন না। এতে নখ বিশ্রাম পাবে।
ষ নেইলপলিশ লাগানোর সময় প্রথমে ওয়াটার কালারের বেজ কোট লাগিয়ে নিন। এতে করে আপনার নখে দাগ পড়বে না। নেইলপলিশ লাগানোর পর ভালোমতো শুকিয়ে গেলে এর ওপর ওয়াটার কালারের আরেকটি টপ কোট লাগিয়ে নিন, এতে করে নেইলপলিশ মসৃণ ও চকচকে দেখাবে।
ষ এসেটোন-ফ্রি নেইলপলিশ রিমুভার খুব মৃদু হয়। ফলে নখকে রুক্ষ করে ফেলে না। তাই এসেটোন-ফ্রি নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করুন।
ষ পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড খান। বেশি করে মাছ, বাদাম ও শিমজাতীয় সবজি খান। কেরাটিন নামের যে প্রোটিন দ্বারা নখ তৈরি হয় সেই প্রোটিন শরীরে ভালোভাবে উৎপাদন হয় তখনই যখন এই খাবারগুলো বেশি করে খাওয়া হয়। এ ছাড়াও চাইলে বায়োটিন ও ফিশ অয়েলের স্যাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। ভিটামিন-বি নখকে শক্ত করে, জিঙ্ক নখের সাদা সাদা দাগ দূর করে, ভিটামিন এ ও সি নখ চকচকে করে। তাই এই সব খাদ্যগুণ আছে এমন খাবার রাখুন আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায়।
ষ নখ অনেক বেশি সময় ধরে ভেজা থাকলে ফেটে যায় ও এর নিচে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। তাই যদি বারবার কাপড় কাঁচা, বাসন মাজা বা এ ধরনের কাজ করতে হয় তাহলে হাতে রাবারের গ্লাভস পরে নিন।
ষ কিউটিকল কাটবেন না। এতে করে নখে ছত্রাক ও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই কিউটিকল না কেটে তা ময়েশ্চারাইজ করে রাখুন, যাতে তা কম দেখা যায়। বেশি প্রয়োজন হলে কিউটিকল ভেতরের দিকে একটু ঠেলে দিন, কাটবেন না।
ষ বিউটি পারলারে ম্যানিকিওর ও পেডিকিউর করানোর সময় চেক করবেন যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তা জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কি না। এ ছাড়াও শুরুতেই বলে দেবেন যেন আপনার নখের কিউটিকল কাটা না হয়।
ষ অ্যাক্রাইলিক ও জেল ম্যানিকিওর নখের জন্য ক্ষতিকর- এগুলো থেকে দূরে থাকুন। এগুলো সেট করার জন্য যে ইউভি লাইট ব্যবহার করা হয় তা ত্বকের ক্ষতি করে। এর ফলে এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।
ষ নেইলপলিশ জমে গেলে অনেকে তাতে নেইলপলিশ রিমুভার দিয়ে ঝাঁকিয়ে তা নখে লাগান। এটি নখের জন্য ক্ষতিকর কারণ কোনো নেইলপলিশের উপাদান হিসেবেই নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করা হয় না। এ ছাড়াও রিমুভার মেশালে নেইলপলিশের রঙ ঘোলা হয়ে যায়।
ষ নখে ময়েশ্চারাইজার লাগানো অবস্থায় নখে নেইলপলিশ লাগাবেন না। নেইলপলিশ লাগানোর সময় নখ যেন একদম শুকনো থাকে সে দিকে লক্ষ রাখবেন। নখ ভেজা থাকলে নখের আয়তন বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় নেইলপলিশ লাগালে নেইলপলিশ শুকানোর পর নখ আবার আগের আয়তনে ফিরে যায়। তখন নেইলপলিশের কারণে নখের উপরিভাগের লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ষ চুল ও নখ দুটোই একই উপাদান- কেরোটিন দিয়ে তৈরি। তা চুলের যত্ন যেভাবে নিতে হয় তেমন করেই নখের যত্ন নিতে হবে। এমনকি চুলের জন্য ব্যবহৃত উপাদান যেমন- তেল, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে নখেরও যত্ন নেয়া সম্ভব।
ষ আবহাওয়া যেমন ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে, তেমনি নখের ওপরও প্রভাব ফেলে। যে দিন মনে হবে ত্বক একটু বেশি শুষ্ক, সে দিন নখকেও একটু বেশি ময়েশ্চারাইজ করুন। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে নখের আয়তন বাড়ে-কমে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় নখের আয়তন কমে, আর গরম আবহাওয়ায় আয়তন বাড়ে। এয়ারকন্ডিশন্ড ঘরে নখের আয়তন একটু কমে যায়, আর সেই ঘর থেকে বের হলে নখ আবার আগের আয়তনে ফিরে আসে। বারবার এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে ঢোকা ও বের হওয়ার ফলে নখ ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বারবার এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে যাওয়া-আসা পরিহার করুন।
ষ মাঝে মধ্যে একটি পুরনো নরম টুথব্রাশে শ্যাম্পু লাগিয়ে হালকা করে ঘষে নখ পরিষ্কার করুন। এতে করে নখের স্ক্রাবিং হয়ে যাবেÑ নখের ময়লা দূর হবে, হাত দিয়ে ভাত খাওয়ার ফলে নখে যে হলুদ আভা আসে তা চলে যাবে এবং নখ দেখাবে চকচকে।
ষ কখনো হাত দিয়ে খুটে খুটে নখ থেকে নেইলপলিশ টেনে তুলবেন না। এতে নখের ওপরের আস্তরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এর ফলে নখের ওপরের লেয়ারটি অমসৃণ ও ফুটো ফুটো হয়ে যায়।
ষ বাইরে গেলে ব্যাগে সবসময় ছোট্ট একটি ময়েশ্চারাইজার রাখুন, যাতে করে প্রয়োজনের সময় নখ ও হাত ময়েশ্চারাইজ করতে পারেন।
ষ পর্যাপ্ত পানি পান করুন। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে নখ রুক্ষ হয়ে যায়। এ ছাড়াও নখ ভেঙে বা ফেটে যায় ও নখের উপরের লেয়ারটি উঠে যায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন।
ষ যদিও বড় নখ দেখতে সুন্দর লাগে, কিন্তু ডারমাটোলজিস্টরা সবসময় নখ ছোট রাখার পরামর্শ দেন। কারণ বড় নখের চেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যবান ও মজবুত নখ। যদি নখ ভেঙে যাওয়া বা ওপরের আস্তর উঠে যাওয়ার প্রবণতা থাকে তাহলে অবশ্যই নখ ছোট রাখতে হবে। ছোট নখ সহজে ভেঙে যায় না, দেখতেও পরিচ্ছন্ন দেখায়।
ষ যা যা যত্ন হাতের নখের বেলায় নিতে হবে, তার সবই পায়ের নখের বেলায়ও নিতে হবে। যেহেতু পায়ে ধুলাবালু বেশি লাগে এবং জুতো পরার কারণে পা অনেক সময় ধরে বদ্ধ ও ভেজা ভেজা অবস্থায় থাকে, তাই পায়ে জীবাণু ও ছত্রাকের সংক্রমণও বেশি হয়। সুতরাং, পায়ের দরকার একটু বাড়তি যত্ন। পেডিকিওর করার সময় পার্লারের কোনো যন্ত্র ব্যবহার করলে অন্যের পায়ের জীবাণু বা ছত্রাক আপনার পায়ে সংক্রামিত হতে পারে। তাই পেডিকিওরের টুলস বাসা থেকে সাথে করে নিয়ে যান।
সুস্থ নখের চিহ্ন
নখে গোলাপি আভা থাকবে।
নখে কিউটিকলস থাকবে।
নখের গোঁড়ার দিকে সাদা রঙের অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির একটি দাগ থাকবে।
অসুস্থ নখের চিহ্ন
নখ ফেটে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া বা নখের উপরের আস্তর উঠে যাওয়ার মানে হলো আপনার নখ অনেক বেশি শুষ্ক অথবা আপনার দেহে রয়েছে ভিটামিনের অভাব। নখে ছোট ছোট সাদা দাগ মানে হলো হয় আপনি দাঁত দিয়ে নখ কাটেন অথবা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি নেইলপলিশ লাগান। নখে আড়াআড়ি খাঁজ তৈরি হয় দুশ্চিন্তা, বা তীব্র জ্বর অথবা নখে জোরে চাপ লাগার কারণে। সোজা নখের বদলে চামচের মতো বাকানো নখ সাধারণত রক্তশূন্যতার জন্য হয়ে থাকে।
নখের চারপাশের মাংস লাল হয়ে থাকার কারণ হলো কিউটিকল কেটে ফেলার ফলে হওয়া সংক্রমণ। আমেরিকান একাডেমি অব ডারমাটোলজির মতে- নখ যদি একদম সাদা হয় তাহলে তা লিভারের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। নখের অর্ধেক সাদা ও অর্ধেক গোলাপি হলে তা কিডনি রোগের লক্ষণ। নখ হলুদ ও ভারী হয়ে যাওয়া এবং নখের বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে হলো ফুসফুসে কোনো রোগ থাকতে পারে।