বেসিক ব্যাংকের ৩,৮৮৪ কোটি টাকা কোথাও গেছে
বেসিক ব্যাংকের ৩,৮৮৪ কোটি টাকা কোথাও গেছে - সংগৃহীত
সরকারের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে বেসিক ব্যাংকে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটির ক্ষতি হয়েছে তিন হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। এই সময়কালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন আবদুল হাই বাচ্চু। সরকার নিযুক্ত এই ব্যক্তির সরাসরি যোগসাজশ এবং তার নিয়ন্ত্রিত পরিচালনা পর্ষদ এ অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত করেছে বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের (সিজিএ) আওতায় বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতর বেসিক ব্যাংকের এ বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। রিপোটর্টি চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অডিট প্রতিবেদনে মোট ৫৯টি অডিট আপত্তি দেয়া হয়েছে।
কিভাবে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অনিয়মের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে তার বিবরণও উঠে এসেছে অডিট প্রতিবেদনে। যেমনÑ ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বেসিক ব্যাংকের ৩১০ ও ৩১১তম বোর্ড সভায় দু’টি জাহাজ কোম্পানিকে কোনো জামানত ছাড়াই ১২৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদান অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে মেসার্স এসএফজি শিপিং লাইনকে দেয়া হয় ৬০ কোটি টাকা এবং শিফান শিপিং লাইনকে দেয়া হয় ৬৫ কোটি টাকা। এ ছাড়াও আমির শিপিং লাইনকে দেয়া হয়েছে ৯০ কোটি টাকা এবং এশিয়ান শিপিংকে দেয়া হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। এই ঋণগুলো দেয়া হয়েছে গুলশানে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছেÑ এ শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য বোর্ড সভায় পাঠানো হয়নি। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদ অসম্পূর্ণ কাগজের ওপর ভিত্তি করেই জাহাজ কেনার জন্য ২১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে।
এ বিষয়ে অডিট প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘শাখার নিয়মিত গ্রাহক না হওয়া সত্ত্বেও এবং ব্যবসায়িক যোগ্যতা না থাকার পরও প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে ঋণের শতভাগ সহায়ক জামানত না দিয়ে মেসার্স এসএফজি শিপিং লাইনকে চারটি জাহাজ কেনার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদে মাসিক কিস্তি পরিশোধের শর্তে ৬০ কোটি টাকার টার্মলোন (মেয়াদি ঋণ) মঞ্জুর করা হয়। একইভাবে অন্য দু’টি শিপিং কোম্পানিকেও কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। এ ঘটনা স্পষ্টতই আর্থিক অনিয়ম এবং ব্যাংকের স্বার্থ পরিপন্থী। ’
বাণিজ্যিক অডিট প্রতিবেদনে ব্যাংকটিতে নানা অনিয়মের জন্য ‘অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা’ ও ‘সরকারি বিধি-বিধান পরিপালন না করা’কে দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ বিতরণের সীমা ৮১ শতাংশ অতিক্রম না করা, তহবিল ব্যয় ও লোকসানি শাখার সংখ্যা কমিয়ে আনাসহ পরিচালনা মুনাফা কমে যাওয়া ও অডিট আপত্তির অর্থ আদায়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
উল্লেখ্য, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এ সময়কালে প্রতি বছরই বেসিক ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে। যেমনÑ ২০১৩ সালে ব্যাংকের লোকসান হয় ৫৩ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে লোকসান দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়ায় ১১০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে লোকসান ৩১ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে এক হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ৬৮৪ কোটি টাকা এবং ২০১৮ সালে ব্যাংকটির লোকসান হয় ৩৫৪ কোটি টাকা।