মার্কিন সেনারা যেভাবে চীনে করোনা ছড়িয়ে গেছে : চীনা দাবিতে তোলপাড়
মার্কিন সেনারা যেভাবে চীনে করোনা ছড়িয়ে গেছে : চীনা দাবিতে তোলপাড় - সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী মহামারী। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের উৎস নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পর দোষারোপের খেলা শুরু হয়েছে। প্রথমে এক মার্কিন সংবাদপত্র দাবি করেছিল, উহানে জৈব রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিল চীন। দুর্ঘটনাবশত সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মহামারী। যদিও তা স্বীকার করেনি বেইজিং। পরে মার্কিন স্বরাষ্ট্রসচিব মাইক পম্পেও করোনাকে ‘উহান ভাইরাস’ বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও দাবি, এটি চীনেই শুরু হয়েছে। এর জবাবে এবার আমেরিকার দিকে আঙুল তুলল বেইজিং। বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান ট্যুইটারে জানান, ‘সম্ভবত মার্কিন সেনারাই উহান শহরে এই ভাইরাসঘটিত মহামারীকে নিয়ে এসেছে।’ সেই সঙ্গে একটি ভিডিও ক্লিপিংও ট্যুইটারে পোস্ট করেছেন তিনি।
ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে — মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ডিরেক্টর রবার্ট রেডফিল্ড বলছেন, আমেরিকায় ফ্লুয়ের কারণে কয়েকজন ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন। পরে তাদের লাশে ‘কোভিড-১৯’-এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। শুক্রবার এই নিয়ে ট্যুইটারে একটি ওয়েবসাইটের করা খবরের লিঙ্কও পোস্ট করেছেন ঝাও।
ওয়েবসাইটটি ৯/১১ হামলা নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রকাশের জন্য বিখ্যাত। ঝাওয়ের পোস্ট করা ভিডিওটি এখন চীনা সোশ্যাল মিডিয়া ‘উইবো’য় ভাইরাল। অনেকেই বলছেন, এই ভিডিওই প্রমাণ যে এই ভাইরাসের উৎস আমেরিকায়। সম্প্রতি রাশিয়ার এক সংবাদমাধ্যমেও এই জল্পনা উস্কে দেয়া হয়েছিল। আমেরিকা এর তীব্র প্রতিবাদ করলেও চুপ ছিল চীন।
এবার ঝাও বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ আমেরিকা। এরপরেই তার ওই দাবি থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে বেইজিং। শুক্রবার তার ট্যুইট প্রসঙ্গে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্তরেও করোনা ভাইরাসের প্রধান উৎস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আমরা মনে করি, এটি বিজ্ঞানের বিষয়। এর জন্য পেশাদারি ও বিজ্ঞানসম্মত মূল্যায়ন প্রয়োজন। সরকার এভাবেই বিষয়টিকে দেখছে।’ পাশাপাশি, এবিষয়ে চীনের বিরুদ্ধে তোপ দাগা মার্কিন রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনিক কর্তাদেরও কটাক্ষ করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, ঝাও এর আগে পাকিস্তানে চীনের উপরাষ্ট্রদূত পদে ছিলেন। সরকারিভাবে ট্যুইটারে অ্যাকাউন্ট খোলা প্রথম চীনা কূটনীতিক তিনিই। পাকিস্তানে থাকার সময় ঝাও ট্যুইটারে চীনের সমালোচকদের আক্রমণ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন।
ধীরে ধীরে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমছে চীনে। কমে এসেছে মৃত্যুও। পরিস্থিতি খানিক নিয়ন্ত্রণে আসামাত্র উহানেই করোনার উৎস, এই দাবি খারিজ করতে শুরু করেছে তারা। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দালি ইয়াং অবশ্য বিশ্বাস করেন, ঝাও সরকারি দায়িত্ব থেকেই এই ট্যুইট করেছেন। অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ থেকে নজর ঘোরানোই এখন চীনের মূল উদ্দেশ্য।
আগে অবশ্য বেইজিং অন্য কথা বলেছিল। জানুয়ারি মাসে সেদেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রধান গাও ফু জানিয়েছিলেন, উহানের সি-ফুড মার্কেটে বিক্রি হওয়া বন্য পশুদের থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকেই এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করে চীন। সেদেশের ন্যাশনাল হেল্থ কমিশন স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ ঝোং নানশান জানান, এই মহামারী চীনেই প্রথম ছড়ায়। কিন্তু এর উৎস চীনে নাও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানিয়েছে, পশু না মানুষ— কাদের থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ভাইরাস কীভাবে উত্পত্তি হলো? প্রথমে মনে করা হয়েছিল, উহান প্রদেশের হুয়ানান সি-ফুড মার্কেট থেকে এই ভাইরাসের আমদানি। সামুদ্রিক প্রাণীর থেকে COVID-19 জীবাণু মেলে।
জাপানের একটি সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, চীনে যে এই ভাইরাস তৈরি হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। ৪টি মহাদেশের ১২টি দেশ থেকে ১০০-র বেশি জেনম সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে চীন করোনার উত্পত্তিস্থল নয়। চীনের এক গবেষণা দাবি করছে, মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণ ছড়ায় নভেম্বর থেকে। হুয়ানানে অনেক পরে এই ভাইরাসের আমদানি হয়।
গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্ট বলছে, গত বছর ডিসেম্বরে গোড়ায় নোভেল করোনাভাইরাস ছড়ায়। সে সময় চলছিল উহান মিলিটারি গেমস। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে এই গেমসে। মার্কিন সেনা প্রতিনিধিও অতিথি হিসাবে আসে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেন, ৩.৪ কোটি মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২০ হাজার।
এরপরই চীন দাবি করতে শুরু করে, তাহলে কি প্রথম করোনা সংক্রমণ ছড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে! উহান মিলিটারি গেমস হওয়ার পর থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ায় উহানে। জাপানের সংবাদ মাধ্যম আসাহি দাবি করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রথম করোনাভাইরাসের উত্পত্তি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। চীন এবং জাপানের দাবি নিয়ে মুখ না খুললেও, ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিউ ইয়র্ক সিটি, লস অ্যাঞ্জেলস, সান ফ্রান্সিসকো, সিয়াটেলে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্তদের নোভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হবে।