করোনা আতঙ্কে কাঁপছে ভারত
করোনা আতঙ্কে কাঁপছে ভারত - সংগৃহীত
ভারতে একজনের মৃত্যু নিশ্চিত হতেই দেশটি জুড়ে জাঁকিয়ে বসেছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, বলিউড, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রীড়াজগৎ— সর্বত্র আতঙ্কের পরিবেশ। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। অনেক রাজ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ আইপিএল। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট সিরিজ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার এক গুগল কর্মী এবং নয়ডায় একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীর করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে।
আক্রান্ত বেড়ে ৮১
সারা ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮১। শুক্রবার বিকেলে এই তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, জাপান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা ১২৪ জন এবং চীন থেকে আনা ১১২ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কারণ তাদের টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণ মেলেনি। তিনি আরো জানিয়েছেন, আক্রান্তদের কেউই আশঙ্কাজনক নন।
স্কুল-কলেজ বন্ধ
এক মাসের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের একাধিক রাজ্য। দিল্লির সঙ্গে যোগ হয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ়। তিন রাজ্যেই এক মাসের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, কেরল এবং ওড়িশায় বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
দিল্লিতে জরুরি সতর্কতা
প্রাথমিক স্কুলগুলো আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। করোনা আতঙ্কে এ বার ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিল দিল্লির প্রশাসন। তার সঙ্গে জারি হল করোনা নিয়ে ‘এমার্জেন্সি অ্যালার্ট’। দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া জানিয়েছিলেন, দিল্লিতে কোনো আইপিএল ম্যাচ হবে না। অন্যান্য খেলাও স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব সরকারি সুইমিং পুল।
বন্ধ আইপিএল
করোনাভাইরাস আতঙ্কে দু’ সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে গেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে এ বারের টুর্নামেন্ট। তার পরে টুর্নামেন্টের বল গড়ালে, তা-ও দর্শকহীন গ্যালারিতেই হওয়ার সম্ভাবনা। শুক্রবার আইপিএল-এর ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে টুর্নামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন বোর্ডের শীর্ষকর্তারা। ইন্ডিয়ান ওপেন গল্ফ-এর এবারের প্রতিযোগিতা বাতিল করা হয়েছে।
আক্রান্ত গুগল কর্মী
করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হল বেঙ্গালুরুর এক গুগল কর্মীর। তাকে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। সেখানকার কর্মীদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ অর্থাৎ বাড়ি থেকে কাজ করার বন্দোবস্ত করেছে গুগল। বছর ছাব্বিশের ওই যুবক সম্প্রতি গ্রিসে গিয়েছিলেন। তিনি যাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদেরও আলাদা করে রাখার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন।
নিশ্চিত নয়ডাতেও
নয়ডার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে শুক্রবারই নিশ্চিত হয়েছে। তার পরেই ওই সংস্থার ৭০০ কর্মীকে কোয়ারেন্টাইন বা আলাদা করে রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বিয়েও বন্ধ কর্নাটকে
করোনা সংক্রমণ নিয়ে দেশে একমাত্র মৃত্যু হয়েছে কর্নাটকেই। তার জেরে রাজ্যে চূড়ান্ত সতর্কতা ও একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। আজ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। তার পরই স্বাস্থ্য দফতরের সব কর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কলবুর্গি (মৃত্যু হয়েছে এই জেলাতেই) জেলার সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে পরীক্ষা পিছোচ্ছে না। রাজ্যের সমস্ত শপিং মল, সিনেমা হল, বিয়ের অনুষ্ঠান-সহ যেকোনো ধরনের জমায়েতের উপর রাশ টানতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা।
কলকাতার স্কুলে সতর্কতা
ছাত্রদের স্কুলে পাঠানোর প্রয়োজন নেই বলে শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল সাউথ পয়েন্ট স্কুল। পরীক্ষা ছাড়া পঠনপাঠন ও অন্যান্য কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। অভিভাবকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠানোর দরকার নেই। রিপোর্ট কার্ড নেওয়া-সহ যে কারণে তাদের স্কুলে আসার দরকার ছিল, সেই সব কিছুই বাতিল করা হয়েছে।
মমতার সতর্কবার্তা
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার জেরে তার সেই কর্মসূচি কাটছাঁট করা হয়। তিনি রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘করোনা সন্দেহ হলেই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান।’’ যদিও একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘হাঁচি কাশি হলেই যে করোনা, এমনটা নয়।’’
বন্ধ ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ
করোনা সংক্রমণের প্রভাব পডেছে ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে ট্রেন ও বাস যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দু’দেশের পক্ষ থেকে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা