কাশ্মিরিরা কী চায়
কাশ্মিরিরা কী চায় - সংগৃহীত
ভারত-পরিচালিত কাশ্মিরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ওপর পরিচালিত জরিপে ৯০ ভাগের বেশি জবাবদাতা বলেছেন, তারা চান যে এই অঞ্চল থেকে ভারতীয় বাহিনী পুরোপুরি বিদায় নিক। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন পোস্টে জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়।
গত আগস্টে মুসলি-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার নয়া দিল্লির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে কাশ্মিরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ইয়র্কের স্কিডমোর কলেজের গবেষকেরা এই গবেষণা পরিচালনা করে। এতে প্রায় ৬০০ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অংশ নেয়।
বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় ভারত আগে থেকে থাকা অর্ধ লক্ষাধিক সৈন্যের সাথে আরো হাজার হাজার সৈন্য পাঠায়। এছাড়া সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। চলতি মাসের প্রথম দিকে তা আবার চালু হয়েছে।
ভারতীয় বাহিনী কাশ্মিরের স্বাধীনতা বা প্রতিবেশী পাকিস্তানের সাথে একীভূত হওয়ার লড়াইয়ে নিয়োজিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
নয়া দিল্লি বলছে, সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের জন্যই সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কাশ্মিরকে অভিহিত করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সামরিককরণ করা এলাকা।
জাতিসঙ্ঘ ও অধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করে আসছে যে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মিরি জনসাধারণের ওপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে।
২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপ অনুযায়ী ৯১ ভাগ জবাবদাতা চায়, এই অঞ্চল থেকে ভারতীয় বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হোক।
ভবিষ্যত নির্ধারণে গণভোট
অনেকে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের ভবিষ্যত নির্ধারণে গণভোট আয়োজনের কথা বলেছে।
নয়া দিল্লি বলে আসছে যে কাশ্মির হলো ভারতের অখণ্ড অংশ। কিন্তু কাশ্মিরিরা বলছে, তাদের ভাষ্য নির্ধারণের জন্য তাদেরকে গণভোটের সুযোগ দেয়া হোক। পাকিস্তানও দীর্ঘ দিন ধরে কাশ্মিরকে তাদের নিজের বলে দাবি করে আসছে।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহেরলাল নেহরু ১৯৫৩ সালে কাশ্মির সঙ্ঘাত নিরসনে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
ভারতভিত্তিক গবেষক হারুন রশিদ আল জাজিরাকে বলেন, সহজাত অধিকার ছাড়াও কাশ্মিরি জাতীয়তাবাদের ইতিহাস ভারতীয় ও পাকিস্তানি জাতি-রাষ্ট্রের চেয়েও প্রাচীন। উভয় দেশ থেকে মুক্ত কাশ্মির হবে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু ফ্ল্যাশপয়েন্টের অবসান।
সঙ্ঘাতে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা প্রশ্নে ৬৪ ভাগ জবাবদাতা ইতিবাচক জবাব দেন। আর ৭৯ ভাগ বলেন, তারা চান পাশ্চাত্যের মধ্যততাকারীদের যেকোনো আলোচনায় কাশ্মিরিদেরকে মূল পক্ষ বিবেচনা করা উচিত।
কাশ্মিরি তরুণদের জরিপ
স্কিডমোর কলেজের রাজনীতি বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ও জরিপের সহ-লেখক ইয়েলেনা বিবারম্যান আল জাজিরাকে বলেন, জরিপের আলোকে বলা যায় যে কাশ্মিরি তরুণরা অন্তত কিছুটা স্বায়ত্তশাসন চায়।
তবে জিন্দাল স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ডিন অধ্যাপক শ্রীরাম চৌলিয়া বলেন, কাশ্মিরিদের এই অভিমত কাশ্মির প্রশ্নে ভারতীয় পদক্ষেপে কোনো প্রভাব বিস্তার করবে, এমনটা বলার সময় আসেনি।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, স্বায়ত্তশাসন বাতিল হয়েছে মাত্র সাত মাস আগে। এই পদক্ষেপের ব্যাপারে সাধারণ ধারণার প্রকৃতি বুঝতে হলে ৫ থেকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছিল কাশ্মিরের প্রধান নগরী শ্রীনগরে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজছাত্রের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে তা কয়েক হাজার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মিরকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি বড় সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে কয়েকবারই মধ্যস্ততা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু নয়া দিল্লি একে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা মনে করে করে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ নাকচ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার লাফায়েত্তি কলেজের ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক হাফসা কাঞ্জওয়াল মনে করেন, কাশ্মিরিরা মনে করে যে বিরোধটিকে দ্বিপক্ষীয় হিসেবে অভিহিত করাতে লাভ কিছু হচ্ছে না।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ভারতে রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব থাকায় মনে হচ্ছে, এই সঙ্ঘাত অদূর ভবিষ্যতে নিরসন হবে না।
আল জাজিরা