কারাগারে করোনা ভীতি : যা হচ্ছে
কারাগারে করোনা ভীতি : যা হচ্ছে - সংগৃহীত
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে দিকনির্দেশনাও। তারই ধারাবাহিকতায় আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো নতুন আসামিদের মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না সেটি নিশ্চিত হতেই কারা গেটেই ডাক্তার দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এরপরই পুরনো বন্দীদের সাথে তাদের না রেখে ভিন্ন ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মো: নুরুন্নবীর সাথে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, কারাগারে বন্দীদের ফাইলে ডেকে এনে বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে যাতে তাদের স্বজনরা কারাগারে দেখা সাক্ষাৎ কম করতে আসেন। যদি জরুরি কোনো তথ্য দেয়ার দরকার মনে করে তাহলে মেসেজ দিয়ে স্বজনকে তারাই জানিয়ে দেবেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর বকশীবাজারের কারা অধিদফতর থেকে গাজীপুরের কাশিমপুরের মহিলা কারাগারসহ ৬৮টি কারাগারে করোনাভাইরাস নিয়ে পূর্ব প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে এক জরুরি সার্কুলার পাঠানো হয়। ওই সার্কুলার জারির পর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার এবং জেলাররা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল সন্ধ্যার পর আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মুন্সীগঞ্জের জেল সুপার নুরুন্নবী কারাগারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার কারাগারে প্রতিদিন নতুন যেসব বন্দী আসছে তাদের প্রত্যেককেই কারাগেটেই ডাক্তার, নার্স দিয়ে জ্বর সর্দি আছে কি না তা চেকআপ করা হচ্ছে। এরপরই কারাগারে প্রবেশ করানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ওই আসামিদের কিন্তু পুরনো কোনো বন্দীর সাথে রাখছি না। আমরা তাদের জন্য ইতোমধ্যে একটি নতুন ওয়ার্ড খালি করেছি। ওই ওয়ার্ডেই (আইসোলেশন) তাদেরকে রাখছি। প্রাথমিকভাবে পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন ওয়ার্ডে নতুন বন্দীকে ১৪ দিন রাখব। এ ছাড়া পুরনো কোনো বন্দীর স্বাভাবিক জ্বর সর্দি হলে তাদের কারা হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। করোনাভাইরাস নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আসামিদের কী ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফাইলে যখন বন্দীরা আসে, তখন তাদের বলা হয়, বেশি বেশি করে হাত ধোয়ার পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ব্যাপারে তাদেরকে আমরা উৎসাহিত করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পূর্ব প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুই দিন আগে কারা অধিদফতর থেকে এ সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা এসেছে। এটা দেশের ৬৮টি কারাগারেই পাঠানো হয়েছে। এরপরই আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছি। বর্তমানে নতুন আসামিদের রাখার জন্য একটি ভবন (ধলেশ্বরী) খালি করেছি। তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কারাগারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের উদ্যোগ হিসেবে বন্দীদের দেখা সাক্ষাৎ কমিয়ে দিয়েছি। নির্দেশনা অনুযায়ী হাজতি ১৫ দিনে একবার আর কয়েদি প্রতি মাসে একবার সাক্ষাৎ করতে পারবে। এরপরও যদি কোনো বন্দীর কোনো জরুরি মেসেজ থাকে সেটি আমাদের জানালে তখন আমরা তার মেসেজটি স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেবো।
বর্তমানে ৩৫৯ জন ধারণক্ষমতার মুন্সীগঞ্জ কারাগারে ৬ শতাধিক বন্দী অবস্থান করছে। সহকারী সার্জন ডাক্তার ওয়াসি উদ্দিনের নেতৃত্বে দু’জন ডিপ্লোমা নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট ও মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সহকারী (কারা) বন্দীদের সেবা দিচ্ছেন। অপর দিকে ৬৮ কারাগারে ৮০ হাজারের মতো বন্দী অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কিশোরগঞ্জ কারাগারে এখনো বন্দীদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। বিশেষ করে আদালত থেকে কারাগারে যেসব নতুন বন্দী যাচ্ছে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রবেশ করানো হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে ওই কারাগারে রক্ষীদের বেশি বেশি পানি পান, হাত পা ধুয়ে পরিষ্কার ও মাস্ক ব্যবহার করার জন্য কারা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের সুুপার বজলুর রশীদের সাথে গত রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। এই কারাগারে জেলার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে সম্প্রতি বদলি হয়ে আসা নাসির উদ্দিন।