করোনা নিয়ে ত্রিমাত্রিক আলোচনা!

গোলাম মাওলা রনি | Mar 12, 2020 06:06 pm
করোনা

করোনা - ছবি : সংগ্রহ

 

নিয়তিনির্ভর বাংলাদেশের লোকজন করোনাভাইরাস নিয়ে ত্রিমাত্রিক আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। একদল বলছে, এই ভাইরাস এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এগুলো আল্লাহর সৈনিক। বাংলাদেশে যেভাবে অন্যায়-অত্যাচার-অবিচার-অনাচার ইত্যাদি বেড়ে গেছে তাতে আসমানের মালিকের ক্রোধ হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য যেসব দেশে বাংলাদেশের মতো অপকর্ম হচ্ছে সেই সব দেশেও করোনা আক্রমণ চালিয়েছে। অন্যদল বলছে, করোনা এসেছে মূলত বাংলাদেশে মহব্বত পয়দা করার জন্য। কারণ রোগটি ছোঁয়াচে বটে এবং দ্রুত বিস্তারকারী কিন্তু এই রোগে মৃত্যুর হার অত বেশি না। অতীতে ইবোলা কিংবা সার্স ভাইরাসে মৃত্যুর হার ছিল শতকরা আট থেকে পনেরো ভাগ। অথচ এ যাবৎকালে করোনায় আক্রান্ত রোগী এবং তাদের মৃত্যুর সংখ্যা দেখে জানা যায় যে, মাত্র দুই ভাগ রোগী মারা যায়। কাজেই রোগটি প্রচুর দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে বটে কিন্তু সে তুলনায় প্রাণঘাতী নয়। এই শ্রেণীর লোকজন বলছে যে, করোনাকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক ঐক্য হবে। সরকার আখেরাতের কথা মনে করে এবং নিজেদের ভুলভ্রান্তি স্মরণ করে হয়তো তাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করবে এবং জেল থেকে অনেককে ছেড়ে দিতে পারে; যার ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে সুবাতাস বইতে আরম্ভ করবে এবং দেশে পুনরায় গণতন্ত্র চালু হয়ে যাবে।

উপরোক্ত দু’টি মতের বাইরে তৃতীয় মত হলো, করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে দেবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন সব কিছুতে ধস নামবে। যেহেতু রোগটি ইতোমধ্যে ১০০ দেশে আক্রমণ করেছে, সেহেতু এটি সারা বিশ্বে মহামন্দা সৃষ্টি করে ফেলবে। অনেক দেশকে ধনী রাষ্ট্র থেকে দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং অনেক রাষ্ট্রকে রীতিমতো ভিখিরি বানিয়ে ফেলবে। অনেক রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে এবং সেই দুর্ভিক্ষে সাহায্য করার মতো কোনো দেশ দুনিয়াতে থাকবে না। বিশ্বে তেলের দাম ও সোনার দাম বিগত ১০০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যাবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশসমূহ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারে মহাপতন শুরু হয়ে যাবে এবং অনেক মার্কেটকে বিলুপ্ত বা দেউলিয়া ঘোষণা করতে হবে।

উল্লিখিত তৃতীয় মতের প্রবক্তাদের মতে, বিমান পরিবহন, পর্যটন এং হোটেল ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এই খাতের হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়বে। বিশ্বের বড় বড় চেইন স্টোর, কর্পোরেট হাউস, গ্রুপ ইত্যাদি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। সারা দুনিয়ায় এমন হাহাকার শুরু হয়ে যাবে যে, কোনও কোনও দেশের মানচিত্র পর্যন্ত বদলে যেতে পারে। অনেক দেশের সরকারের পতন ঘটবে- অনেক নতুন রাজনীতির সৃষ্টি হবে এবং বিশ্ব রাজনীতির মোড়লিপনারও শেষ হবে। জাতিসঙ্ঘের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে এবং বিশ্বের জলবায়ু মারাত্মক সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়বে।

করোনা নিয়ে ত্রিমাত্রিক আলাপ আলোচনার মাঝে বাংলাদেশের একশ্রেণীর মানুষ অবশ্য যারপরনাই করোনার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, করোনার কল্যাণে বাংলাদেশে মোদির আগমন প্রাকৃতিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। মোদি ছাড়াও আরো সব বিরক্তিকর বিষয়াদি করোনার প্রভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে বিধায় লোকজন বেজায় খুশি। কিছু মানুষের অব্যাহত হম্বিতম্বি দিনরাতের মিথ্যাচার এবং উল্টাপাল্টা বকরবকর করোনার প্রভাবে আপাতত বন্ধ হয়েছে বিধায় লোকজনের কান-চোখ এবং মেজাজ-মর্জিতে বসন্তের হাওয়া লেগেছে। তাই তারা অনেকের মতো করোনাকে ভয় না পেয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ লোকজনের মতো নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি অবলোকন করার চেষ্টা করছে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us