এরদোগান-পুতিন সমঝোতার ১০ বিষয়
এরদোগান ও পুতিন - ছবি : সংগ্রহ
সিরিয়া নিয়ে সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান সমঝোতায় উপনীত হয়েছেন। এ আলোচনায় কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এখানে তা তুলে ধরা হলো
১. সব সামরিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা। এতে যদি যুদ্ধ করা বুঝানো হয় তবে এক বিষয়। কেননা তুরস্কসহ অন্যরা সেখানে সমরসজ্জা অব্যাহত রেখেছে। এরদোগান চেয়েছিলেন রাশিয়ার সাথে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী শান্তি স্থাপন করতে।
পুতিন পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে না। তা হলে চুক্তিটি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞও মনে করেন, এই চুক্তি টিকবে না।
২. ৬ কিলোমিটার গভীর উত্তরে ও ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে এম-৪ হাইওয়ে বরাবর সিকিউরিটি করিডোর স্থাপন করা, যেখানে লাতাকিয়া ও আলেপ্পো সংযুক্ত হয়েছে। ফলে রাশিয়া-সিরিয়া বাহিনী উত্তর ইদলিবে সহজে প্রবেশ করতে পারবে, এটি তুরস্কের জন্য অস্বস্তিকর।
৩. তুরস্ক-রাশিয়া তুরুম্বা থেকে আইন আল হাভর যৌথ টহল দিতে চায়, এটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকা, এখানেই এম-৪ ও এম-৫ মিশেছে। রাশিয়ার মিলিটারি পুলিশ গত সপ্তাহে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। মস্কো চুক্তিতে রয়েছে সারাকিব রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত শহর হিসেবে পরিচিত থাকবে; অথচ এরদোগানকে সেটি মেনে আসতে হয়েছে। রাশিয়া সিরিয়ার সেনারা এম-৪ ও এম-৫ এলাকায় বিচরণ করছে,
৪. তুরস্ক সিরিয়ার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, বসত- এসবের গুরুত্ব দিয়েছে। অপর দিকে পুতিন জাতিসঙ্ঘ আখ্যায়িত ‘সন্ত্রাসী’ গ্রুপকে বের করে দেয়ার বিষয়কে পাত্তা দেয়নি।
৫. এই চুক্তিতে তুরস্ক সীমান্তে বাফার জোনের নিরাপত্তার প্রতি কোনো জোর দেয়া হয়নি, অথচ তুরস্কের জন্য বাফার জোন যেন ‘হট কেক’।
৬. তুরস্কের অবজারভেশন পোস্ট নিয়েও সন্তোষজনক সমাধান হয়নি। রাশিয়ার সেনা কৌশলীরা বলেছেন, ‘এগুলো ক্ষণিক সময়ের জন্য।’ এগুলোর ওপর সিরিয়া বাহিনী গতবার হামলা চালিয়েছিল। যারা তুরস্ক বাহিনীকে যমের মতো ভয় করে, তাদের নাকের ওপর সিরিয়া সরকারের বাহিনীর ‘নাচানাচি’ তুরস্ককে সহ্য করতে হচ্ছে। অনেকে বলেছেন, তুরস্কের জন্য চুক্তিটি অবমাননাকর।
৭. চুক্তিতে বলা আছে সকল পক্ষের মধ্যে আলোচনার সুযোগ করে দেয়া হবে। বুঝা যায়, তুরস্ক ও সিরিয়া আলোচনার টেবিলে আসুক- এটা পুতিন চান। তবে এর আগে যে ‘আদানা চুক্তি’ হয়েছিল তার অনেক শর্ত আসাদ সরকার পালন করেনি। আগামী আলোচনায় এসব বিষয় পথরোধ করতে পারে।
৮. ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে ‘সোচি চুক্তি’ সম্পাদিত হয়েছিল। সেখানেও তুরস্ক সীমান্তে গোলযোগ না করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বাশার আল আসাদ বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে এবং রাশিয়া ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে সোচি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে।
৯. সিরিয়া থেকে পুতিন এখন লিবিয়াতেও হাত বাড়িয়েছেন। সেখানে জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত সরকারের বিরোধী মিলিশিয়া নেতা জেনারেল হাফতারকে সমর্থন দিচ্ছেন। অপর দিকে এরদোগান হাফতারের বিপক্ষে ও সরকারি বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছেন। এখানেও রাশিয়া তুরস্ক ও পরস্পর মুখোমুখি। রুশ নেতা পুতিন কোনোভাবেই দামেস্ক হাতছাড়া করতে চাইছেন না। এরদোগানও ইদলিব ও সেফজোন ছেড়ে যাবেন না। রাশিয়া-তুরস্ক সম্পর্ক কখন কিরূপ পরিগ্রহ করে, তা বলা মুশকিল,
১০. হায়াতুত তাহরির আল শাম, সংক্ষেপে, এইচটিএসকে জাতিসঙ্ঘ ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করেছে। এরা এম৪ এর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে রেখেছে। ইদলিবে এইচটিএসের এলাকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ‘পাওয়ার সেন্টার’।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার