আরো কঠিনভাবে আঘাত হানবে করোনা!
করোনা ভাইরাস - ছবি : সংগ্রহ
যতই দিন যাচ্ছে করোনাভাইরাসের আক্রমণে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বুধবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৩ শ' জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪ হাজার ৬৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৬৮ হাজার ২৮৫ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বিশ্বের ১২৪টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৬৯ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮২৭ জনের।
এই যখন অবস্থা; তখন কী উপায়? করোনায় আতঙ্কিত সারাবিশ্বের মানুষ এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও শুকনো খাবার মজুদ করছেন। কিন্তু এভাবে কী আসলেই করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা কিন্তু সেরকম কিছু বলছেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল অস্টারহোম। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে তিনি আগেই বিশ্বকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলছেন, বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস কমপক্ষে ছয়মাস মানুষকে ভোগাবে এবং এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস (হাত মোজা) পরাটা বোকামিপূর্ণ কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমেরিকায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরইমধ্যে এ ভাইরাসে দেশটিতে ৩৮ জন মারা গেছেন। পাশাপাশি দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। তারা জানান, বুধবার পর্যন্ত পুরো আমেরিকায় ১,০৩৫ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
এছাড়া, আমেরিকার তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খোদ রাজধানী ওয়াশিংটন, যেখানে মৃতের সংখ্যা ২৪। সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল অস্টারহোম বলেন,‘এটা তো কেবল শুরু। আঘাত, ব্যাথা, দুর্ভোগ, সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যার কথা বিবেচনা করলে বোঝা যায় যে, এটা কেবল আসলেই শুরু। এই অবস্থা সামনের মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। আর মানুষও আক্রান্ত হতেই থাকবে।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সবচেয়ে মারাত্মক সিজনাল ফ্লু’র তুলনায় করোনাভাইরাস আরো ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার যেভাবে মানুষ সুরক্ষিত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে না যে- এসব পরামর্শ মেনে চললে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ও হাত মোজা ব্যবহারের বিষয়টিকে ‘বোকামি’ (ননসেন্স) বলেও মত দেন তিনি।
তবে মাস্ক ব্যবহারকে ইতিবাচক হিসেবে মতপ্রকাশ করে অস্টারহোম বলেন, ভালো সুরক্ষা দেয় এমন মাস্ক ব্যবহারের অবশ্যই ভালো দিক রয়েছে। কিন্তু হুজুগ সৃষ্টি করে ক্ষেত্র বিশেষে মাস্ক অপ্রয়োজনীয় হলেও বেশি বেশি কিনে রেখে দেয়া হলে সেটা চাহিদার তুলনায় যোগানের স্বল্পতার সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, এন-৯৫ মাস্কটি খুবই কাযকর একটি মাস্ক। কিন্তু সমস্যা হলো- আমাদের ভালো মাস্কের ঘাটতি রয়েছে। মাস্ক মজুদ করে রাখার পিছনে বাজেটে হাসপাতালগুলোর কোনো অর্থ বরাদ্দ থাকে না।
সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল অস্টারহোম ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সংক্রমক রোগবিষয়ক গবেষণা ও পলিসি কেন্দ্রের (সিডর্যাপ) এর পরিচালক। করোনা ইস্যুতে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টিকে তিনি অনুৎসাহিত করলেও করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ এবং অন্য কোনো রোগে ক্রমাবনতিশীল রোগীকে বেশি সতর্ক থাকার বিষয়ে একমত হন তিনি।
সূত্র : ডেইলি মেইল