যত ঘুম, তত লাভ
যত ঘুম, তত লাভ - সংগৃহীত
আপনার কি পর্যাপ্ত ঘুম হয়? নাকি ব্যস্ততার কারণে ঘুমানোর সময়ই পান না? যত ব্যস্ত থাকুন না কেন, ঘুম মিস করবেন না। পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। এতে শেষ পর্যন্ত আপনার লাভই হবে বেশি। আসুন দেখা যাক ঘুমানোর কত উপকারিতা।
১. শুধু চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল মুছতে বা মন ভালো রাখতেই যে ঘুমের প্রয়োজন তা নয়। পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থ রাখে আপনার হৃত্পিণ্ড, নিয়ন্ত্রণে রাখে ওজন।
২. ঘুমালে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়বে। ডাক্তাররাই বলছেন, ভালো করে ঘুমোন, আপনার ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে।
৩. অতিরিক্ত অথবা খুব কম ঘুমোলে তার প্রভাব পড়বে আপনার আয়ুষ্কালের উপর। ২০১০-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০-৭৯ বছর বয়সে মৃত নারীদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে কম বা বেশি ঘুমানোর জন্য। তাই ডাক্তারদের পরামর্শ, If you sleep better, yoy can certainly live better. অর্থাত্ পর্যাপ্ত ঘুমান, ভালোভাবে বাঁচুন।
৪. হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, অকাল বার্ধক্যের থেকে শরীরে জ্বলুনি অনুভূতি হয়। গবেষণা বলছে, যাঁরা রাতে ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোন, তাঁরাই বেশিরভাগ এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। কারণ তাঁদের রক্তে ইনফ্লামেটরি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০১০-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা কম ঘুমোন, তাদের শরীরে বেশি পরিমাণে দেখা দেয় সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
৫. ঘুমালে বাড়বে সৃজনশীলতা। হার্ভার্ড ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ঘুমানোর সময় স্মৃতি ও নানা কাল্পনিক বিষয় মাথায় ঘোরাফেরা করে। এজন্য ভালো ঘুম হলে তা সৃষ্টির কাজে বিশেষ সহায়ক হয়। বিশেষত ছবি আঁকার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ প্রযোজ্য।
৬. আপনি যদি খেলোয়াড় হন, তবে আপনার সাফল্যের অন্যতম অস্ত্র নিঃসন্দেহে ঘুম। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজের ফুটবল খেলোয়াড়রা, যারা রাতে ১০ ঘণ্টা ঘুমান, ৬-৮ সপ্তাহ পর তাদের স্ট্যামিনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দূরে চলে যায় যাবতীয় ক্লান্তি।
৭. গবেষণা বলছে, কলেজে যেসব ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেন, তারা অন্যদের থেকে বেশি ঘুমোন। যারা কম ঘুমোন, তাদের ফলাফল হয় খারাপের দিকে।
৮. ঘুম কম হলে শিশুরা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭-৮ বছরের শিশুরা রাতে ৮ ঘণ্টার কম ঘুমোলে বদরাগী ও অমনোযোগী হয়ে পড়ে।
৯. পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে স্বাস্থ্যকর ওজন পান। আপনি যদি সুস্বাস্থের জন্য ডায়েট চার্ট মেন্টেন করেন, তবে ঘুমনোর ব্যাপারটিও মাথায় রাখুন। গবেষণা বলছে, ডায়েটের পাশাপাশি যাঁরা যথোপযুক্ত ঘুমোন তাঁদের ওজন অন্যদের থেকে ৫৬% বেশি কমে।
১০. স্ট্রেস কমাতে বিশেষ সহযোগী ঘুম। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ঘুমের জুড়ি মেলা ভার।
১১. পর্যাপ্ত ঘুমোলে হতাশা কমে। ঘুমে ঘাটতি থেকে আসে হতাশা ও উদ্বেগ।
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনেক...
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঘুমের বিশেষজ্ঞ-টিপস
১. একটা নির্দিষ্ট সময় তৈরি করুন ঘুমতে যাওয়ার ও ওঠার।
২. দিনে ঘুমনোর অভ্যেস থাকলে তা ৪৫ মিনিটের বেশি যেন না হয়।
৩. ঘুমের অন্তত ৪ ঘণ্টা আগেই মদ্যপান শেষ করুন। ঘুমনোর আগে কিছুতেই ধূমপান করবেন না।
৪. ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করবেন না। অত্যধিক মশলাদার খাবার খেয়েই ঘুমোতে যাবেন না।
৫. আরামদায়ক বিছানায় ঘুমোন।
শিশুদের জন্য ঘুমের বিশেষজ্ঞ-টিপস
১. রাতে প্রতিদিন একই সময় ঘুমোতে যেতে হবে। রাত ৯টা হলে সবচেয়ে ভালো।
২. দিনে মাঝে মাঝে অল্প বিশ্রাম নেয়ার অভ্যেস তৈরি করতে হবে।
৩. শিশুর ঘুমনোর জায়গাটি প্রস্তুত করতে হবে। অন্ধকার, ঠিকঠাক তাপমাত্রা এবং পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
৪. শিশুকে একা ঘুমনোর অভ্যেস এবং একা একা ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যেস করান।
৫. ঘুমনোর আগে কোনোভাবেই ফোন, কম্পিউটার গেম, টিভি দেখা যাবে না। অন্তত ২ ঘণ্টা আগেই বন্ধ করতে হবে।
সূত্র : এই সময়