৪ কারণে করোনার আঘাত!
৪ কারণে করোনার আঘাত! - ছবি : সংগ্রহ
একদিন জুমার নামাজ আদায়কালে রূপায়ণ মসজিদের খতিব মুফাসসির জামাল উদ্দিন বয়ানকালে বলেন, চার কারণে চীনাদের ওপর এই ‘আসমানি গজব’।
১. কুরআনুল কারিমে হস্তক্ষেপের ঘোষণা : মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনসহ সব ধর্মীয় গ্রন্থ নতুন করে লেখার পরিকল্পনা করছে চীন। ‘কুরআনের বিধান পরিবর্তনের অধিকার কারো নেই’। পবিত্র কুরআনকে উদ্ধৃত করে তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রতি যে ওহি অবতীর্ণ করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে আমি তো মহাদিবসের (কিয়ামতের দিনের) শাস্তির ভয় করি’ {সূরা ইউনুস, আয়াত-১৫}। পবিত্র কুরআন আল্লাহর বাণী। এতে পরিবর্তন আনার অধিকার কারো নেই। কোনো নবীকেও আল্লাহর বিধান পরিবর্তনের অধিকার দেয়া হয়নি। মহানবী সা:কেও কুরআনের কোনো বিধান পরিবর্তনের অধিকার দেয়া হয়নি। নবীরা হচ্ছেন আল্লাহর বাণীর বাহকমাত্র। এর সামান্যতম পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের ক্ষমতা তাদের নেই। নবীদের দায়িত্ব আল্লাহর বাণী সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। কিয়ামত পর্যন্ত যে কুরআনুল কারিমের একটা দাঁড়ি-কমায় হাত দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের আদলে কুরআনসহ ধর্মগ্রন্থগুলো পুনর্লিখনের বিষয়ে গত নভেম্বরে এক সভায় এ জন্য পরিকল্পনা করা হয়।
২. পরিচ্ছদ : শরীর খোলা রাখাসহ নারীদের স্বল্প বসনের দিক থেকে শীর্ষে চীন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী!) আপনি আপনার পত্নীদের ও কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদের বলুন, যখন কোনো প্রয়োজনে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এমনকি, চেহারাও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে আবৃত করে রাখে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সূরা আহজাব, আয়াত-৬০)। স্বল্প বসনের রাজ্যে আল্লাহ এমন পর্দার ব্যবস্থা করেছেন যে, এখন নারী-পুরুষ কেউ ঘর থেকেই বের হয় না। ঘরের ভেতর চোখ দু’টি ছাড়া সমস্ত শরীর চলে গেছে পর্দার আড়ালে।
৩. খাদ্য : বিশ্বের তাবৎ রাজ্যের খাবার থেকে চীনাদের খাবার একটু ভিন্ন। পবিত্র, স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারী সব ধরনের খাদ্য গ্রহণে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। যেসব খাবার অপবিত্র ও অবৈধ তা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহির মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, আহারকারী যা আহার করে তাতে তার জন্য আমি কোনো হারাম খাবার পাই না; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের মাংস- এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ’ (সূরা আন-আম, আয়াত-১৪৫)।
দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু হারাম। যেমন- বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু, বানর ইত্যাদি। পাঞ্জাধারী হিংস্র পাখি খাওয়া হারাম। যেমন- ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘রাসূল সা: দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জন্তু আর নখ দিয়ে শিকারকারী প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন’ (মুসলিম, হাদিস নং-১৯৩৪)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত’ (সূরা মায়েদা, আয়াত-৩)। নোংরা ও নাপাক কিছু খাওয়া হারাম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদের জন্য তিনি (রাসূল) পবিত্র বস্তু হালাল করেন আর অপবিত্র বস্তু করেন হারাম ’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১৫৭)। যেমন- মৃত জন্তু, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, প্রবাহিত রক্ত এবং যেসব খাবারে কোনো উপকার নেই যেমন- বিষ, মদ, খড়কুটো, মাদকদ্রব্য, তামাক ও অন্যান্য নেশজাতীয় দ্রব্য খাওয়া হারাম। ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক, চিল ইত্যাদি খাওয়াও হারাম। কারণ হাদিসে এগুলোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইসলাম কর্তৃক নিষিদ্ধ - হুদহুদ, দোয়েল, ব্যাঙ, পিঁপড়া, মৌমাছি ইত্যাদি খাওয়াও নিষিদ্ধ।
৪. ধর্মীয় কাজে বাধা : খবরে প্রকাশ, ‘একবার ভাবুন তো, আপনি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও নামাজ রোজা রাখতে পারছেন না, কুরআন ও অন্যান্য ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন না, চাইলেও নারীরা হিজাব ব্যবহার করতে পারছেন না, এমনকি সরকারি চাকরিতে হিজাব পরিহিতা নারীদের নিয়োগ বন্ধ; এক কথায়, ধর্মীয় স্বাধীনতার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এমন ঘটনা দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করে আসছে চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়। চীন সরকারের নির্মম নির্যাতন ও নৃশংসতার সাক্ষী জিনজিয়াং প্রদেশের এক কোটি ১০ লাখ মুসলমান।
চীনের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত সবচেয়ে বড় প্রদেশ এটি। জিনজিয়াং কাগজ-কলমে ‘স্বায়ত্তশাসিত’ হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।
১৯৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কিছু দিন পর কমিউনিস্ট সরকার উইঘুরদের বৃহত্তর চীনের সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব মেনে না নেয়ায় শুরু হয় উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন; নেমে আসে বিভীষিকাময় অত্যাচার। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির স্থলে কমিউনিজম চাপিয়ে দেয়ার জন্য চীনা কমিউনিস্টরা উঠে পড়ে লেগে যায়। এর অংশ হিসেবে ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়। প্রার্থনালয় ভেঙে দেয়া হয়। ধর্মীয় কার্যাবলির ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। চীনাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে যখন উইঘুররা বিদ্রোহ শুরু করে, তখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহায়তায় হাজার হাজার নিরীহ উইঘুরকে হত্যা করা হয়েছে। অনেককে করা হয় গৃহহীন। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে প্রিয়জনদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে; সন্তানদের ধরে নিয়ে রাখা হচ্ছে ক্যাম্পে। এরকম ভীতিকর পরিস্থিতির মাঝেই চলছে তাদের জীবন। উইঘুর তথা মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য যা যা করা দরকার তার কোনো কিছুই বাকি রাখছে না বেইজিং প্রশাসন।
আল্লাহ তায়ালা যেহেতু অতিশয় মেহেরবান ও দয়াময়, তাই আল্লাহ তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রয়োগ করেন না। তিনি অবকাশ দেন, সুযোগ দেন বারবার। সুযোগ পাওয়ার পরও পাপের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া, বিধর্মী কার্যকলাপ, ব্যভিচার, মাপে কম দেয়া, অন্যায় কাজে বাধা না দেয়া, হত্যা করা, দুনিয়াপ্রীতি বৃদ্ধি পাওয়াসহ ধনীরা কৃপণ হয়ে পড়লে নানান বালা-মুসিবতের মাধ্যমে ফেরাউন, নমরুদদের শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে মিশকাত, বুখারিসহ অনেক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক