করোনার আঘাত : প্রকৃতির প্রতিশোধ!

জয়নুল আবেদীন | Mar 11, 2020 05:44 pm
করোনার আঘাত : প্রকৃতির প্রতিশোধ!

করোনার আঘাত : প্রকৃতির প্রতিশোধ! - ছবি : সংগ্রহ

 

পরিবেশবিজ্ঞানের ভাষায়, করোনাভাইরাস প্রকৃতির প্রতিশোধ। প্রকৃতিকে নির্জীব, চলৎশক্তিহীন ও সর্বংসহা মনে হলেও আসলে তা নয়; বরং তা নির্মম প্রতিশোধ গ্রহণকারী। প্রকৃতি কারো অণু পরিমাণ অপরাধও সহ্য করে না। প্রতিশোধ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি, মহামারী ইত্যাদি প্রকৃতিরই প্রতিশোধের হাতিয়ার। ১০ অক্টোবর ২০১৮ সালে মাইকেল আসছে’ সংবাদটি আগেই জানতে পেরেছিল বিশ্বের ১ নম্বর পরাশক্তি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষে, স্মার্টআপ ও গুগলের ‘তীর্থস্থান’ আমেরিকার মতো দেশ। তবু চেয়ে চেয়ে দেখাসহ কয়েক লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

একইভাবে সুনামি, আচেহ প্রদেশে ‘মেগাথ্রাস্ট’ ভূমিকম্প : ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এ দিন ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলের দ্বীপ সুমাত্রার আচেহ প্রদেশে আঘাত হানে ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প। এর পরপরই সৃষ্টি হয় ভয়াবহ সুনামি যা সোমালিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সুনামিটি ভারত মহাসাগরের অনেক দেশেই আঘাত হানে। কেবল ইন্দোনেশিয়াতেই এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। নিহতের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি ছিল আচেহ প্রদেশে। এটাকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। জয়ীও হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে জয়ী হয়েছে বলা যায় না। প্রকৃতি প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু। এ মোকাবেলায় মানুষ বড়ই অসহায়।

সাত দশক আগে ১৯৪৯ সালে চীনের ঘটনা। কৃষিপ্রধান চীন। চড়ুইপাখি কৃষকের ধান খেয়ে দেশের ক্ষতি করে। নতুন চীনের জনক মাও সে তুং একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, সময় হয়েছে চড়ুইপাখি বিলুপ্ত করার। সে আদেশ যথাযথভাবে পালন করা হয়েছিল। এমন নির্বোধ কর্মকাণ্ডের খেসারত দিতেও বেশি সময় লাগেনি। পরের বছরই ধেয়ে এসেছে প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ। কারণ, শস্যদানার পাশাপাশি চড়ুইপাখি নানা ধরনের পোকামাকড়ও খায়। এ পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেল পোকামাকড়ের সংখ্যা। এতে করে ফসলের ক্ষেত ছেয়ে যেতে থাকে ক্ষতিকর পোকামাকড়ে। ফলে, যে শস্য বাঁচানোর জন্য এত কিছু করা হলো, তা গেল পোকামাকড়ের পেটে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শস্যভাণ্ডার খালি হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের মজুদ করা খাদ্যেও ঘাটতি দেখা দেয়। খাদ্যসঙ্কটের মুখে পড়ে যায় কোটি কোটি মানুষ। দেখা দিলো দুর্ভিক্ষ। ফলে পরবর্তী তিন বছরেই প্রাণহানির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৫ মিলিয়নে। এ দুর্ভিক্ষ ‘দ্য গ্রেট ফেমিন’ নামে পরিচিত।

প্রকৃতির নিয়ম খুবই সুশৃঙ্খল। এর চিরন্তন নিয়মের কখনো ব্যত্যয় ঘটে না। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায়- এই নিয়মে কোনো হেরফের নেই। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানই কোনো-না-কোনো শৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত। এরা একে অন্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই উপাদানগুলোর কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, নষ্ট হয় পরিবেশগত ভারসাম্য। এ ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার গুরুদায়িত্ব প্রকৃতিই নিজ কাঁধে তুলে নেয়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us