নেপালে ভারতকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে চীন
নেপালে ভারতকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে চীন - সংগৃহীত
বর্তমান অর্থ বছরে নেপালের ৯০ ভাগের বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে চীন থেকে। গত বছরের অক্টোবের চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেপাল সফরের সময় বেইজিং ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হয়।
নেপালের অবকাঠামো ও পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে চীন ইতোমধ্যেই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। উভয় দেশ তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করেছে, নেপাল বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) সই করেছে।
দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলে কে ইয়ম ডিডব্লিউকে বলেন, চীন হলো উদীয়মান শক্তি এবং বিনিয়োগের মাধ্যমেই মূলত সে তার শক্তি প্রতিফলিত করে। নেপালের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট দেশের সাথে চীন তার সমৃদ্ধি ভাগাভাগি করছে এবং এসব দেশ চীন থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছে।
অবশ্য বড় বিনিয়োগের সাথে আসে বড় প্রভাব, বিশেষ করে যদি বিনিয়োগকারী হয় চীন। নেপালের অর্থনীতি বাণিজ্য-নির্ভর, আর চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এটি নেপালের ওপর বেইজিংকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে।
নেপাল-চীন সম্পর্কের পর্যবেক্ষক ও কাঠমান্ডুভিত্তিক সাংবাদিক অখিলেশ উপাধ্যায় মনে করেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে কেউ বিভাজন করতে পারে না। চীনের সাথে জোরাল বাণিজ্য সম্পর্ক থেকে সুবিধা পাচ্ছে নেপাল এবং এটি উভয় দেশের জন্যই কল্যাণকর হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের উচিত উভয় দেশের জন্য নেপাল-চীন সম্পর্ক ও বিনিয়োগকে উইন-উইন অবস্থায় দেখা।
তিনি বলেন, ভারত ও নেপালের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কও ভালো। সাংস্কৃতিকভাবে ও অভিন্ন মূল্যবোধের দিক থেকেও ভারত ও নেপাল খুবই ঘনিষ্ঠ এবং ওই পরিমণ্ডলে ভারতের বিকল্প চীন হতে পারে না।
নেপাল, তিব্বত ও বাণিজ্য রুট
অনেক দশক ধরেই নেপাল তার বাণিজ্যের জন্য ভারতীয় বন্দরগুলোর ওপর নির্ভরশীল। নেপালের দুই তৃতীয়াংশ পণ্য এসব বন্দর দিয়ে চলাচল করে। এ নির্ভরতা কাটাতে কাঠমান্ডু গত বছর বেইজিংয়ের সাথে প্রটোকলে সই করেছে।
এতে চীনের চারটি সমুদ্রবন্দর ও তিনটি স্থলবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে নেপাল। নেপালের ওপর ভারত অঘোষিত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের কয়েক মাস পরই এই প্রটোকলে সই করে নেপাল।
এদিকে নেপাল ও চীনের মধ্যকার সীমান্তটি আরো বেশি চলাচলপ্রবণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তিব্বতিরা নেপালে প্রবেশের মাধ্যমে চীনকে এড়িয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য চীন সবসময় নেপালের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। ২০১০ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন নথিপত্র অনুযায়ী, সীমান্তে সৈন্য বাড়ানোর জন্য কাঠমান্ডুর প্রতি দাবি জানিয়েছে বেইজিং। এতে আরো বলা হয়, নেপাল যদি পলায়নমান তিব্বতিদের চীনের কাছে হস্তান্তর করে, তবে নেপালি বাহিনীকে চীন পুরস্কার দেবে।
নেপাল ইতোমধ্যেই চীনের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি সই করেছে এবং সীমান্তে সহযোগিতা জোরদার করেছে। নেপাল তার মাটিতে চীনবিরোধী কোনো তৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না বলে চীনকে আশ্বস্ত করেছে।
চীনের প্রেক্ষাপটে ভারতের স্বার্থ
নেপালে চীনা চীনা প্রভাব বাড়তে থাকার বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখছে নয়া দিল্লি। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী প্রথম নীতির আলোকে প্রতিবেশীদের সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও এমনকি সামরিক সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে ভারত।
তবে আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে বিশেষ করে নেপালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ব্যাপারে চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে ভারত।
চীনের সাথে এখন নেপাল ইন্টারনেট সংযোগও প্রতিষ্ঠা করেছে। ইতোপূর্বে নেপালে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করার অবস্থায় ছিল ভারত। এখন ভারতের ওপর এ ব্যাপারে আর নির্ভরশীল নয় নেপাল। হিমালয় থাকা সত্ত্বেও চীনের সাথে সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠা করেছে নেপাল।
তবে নেপালের সংস্কৃতি, ভাষা ও সামাজিক জীবনের ব্যাপারে ঘনিষ্ঠতা অর্জনের ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত।
সূত্র : ডিডব্লিউ