ভারত-বিএনপি সম্পর্কে আরো অবনতি!
নরেন্দ্র মোদি ও খালেদা জিয়া - সংগৃহীত
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিগত বছরগুলোতে হেন কোনো পথ নেই, যা অবলম্বন করেনি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটিকে সবসময়ই নিরপেক্ষ অবস্থানে চেয়েছিল দলটি। কিন্তু দলটির সেই আশার ছিটেফোঁটাও পূরণ হয়নি। বছরের পর বছর উপেক্ষিত হওয়ার ফলে এখন সম্পর্ক গড়িয়েছে অনাস্থার দিকে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, ভারতের সাথে এখন তারা আর তোষামোদির সম্পর্ক চায় না। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে তাদের অবস্থান ভারতের বিরুদ্ধে গেলেও, সেটিই হবে দলের মূল ভিত্তি।
গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফরকালে তার সাথে বিএনপির বিদেশবিষয়ক কমিটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের পক্ষ থেকে বৈঠকটি বাতিল করার পর বিএনপিও দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে। প্রতিবেশী দেশটির ওপর আস্থা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে তারা।
বিএনপি নেতাদের দাবি, তাদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় দূতাবাসই বৈঠকটি বাতিল করে। তারা মনে করছেন, দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে কিছু দিন আগে যে বিবৃতি দিয়েছিল বিএনপি, তারই জের ধরে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। বিবৃতি ছাড়াও বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ বিষয়টিও ভারত আমলে নিয়েছে বলে কেউ কেউ বলছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় নির্ধারিত ওই বৈঠক বাতিলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বিএনপির কাছে জাতীয় স্বার্থ এবং দেশের মানুষের সেন্টিমেন্টই মূল বিবেচ্য। এমন অবস্থানে কেউ যদি নাখোশ হয়, তাহলে তাদের কিছুই করার নেই।
বিএনপির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের সাথে তোষামোদির সম্পর্ক চায় না বিএনপি। গত দু’টি জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে একটি সুনির্দিষ্ট দলের পক্ষে দেশটির ভূমিকাও দলটির নেতাদের মধ্যে দাগ কেটেছে। এই সময়ে দলটি নানামুখী চেষ্টা করেও ভারতের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি। নেতারা বলছেন, দেশটি বিএনপিকে অহেতুক কারণে আস্থায় নেয়নি। বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারত ইচ্ছা করলে প্রতিবেশী দেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারত।
দশম সংসদ নির্বাচনেও ভারতের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল বিএনপি। এরই ধাাবাহিকতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপি ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। ২০১৮ সালে দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দিল্লি সফর করে ক্ষমতাসীন বিজেপির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এবং দিল্লির বিভিন্ন থিংকট্যাংক প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। ওই সফরে দিল্লির কাছে বিএনপির অনুরোধ ছিলÑ ‘নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে খোলাখুলি সমর্থন না করে ভারত অন্তত একটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখুক।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের ভূমিকায় এমন কিছুই দেখতে না পেয়ে চরম নাখোশ হয় বিএনপি। এর ফলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপির অভ্যন্তরে ভারতের সাথে উপযাচকসুলভ সম্পর্কের বিদ্যমান ধারা পুনর্মূল্যায়নের চিন্তা শুরু হয় বলে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক তৈরি না করে ভারত একটি দলের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে; যার কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট প্রবলভাবে কাজ করছে।
বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীদের হত্যার বিরুদ্ধে আবারো সরব হতে দেখা যায়। গত বছর ভারতের সাথে সম্পাদিত চারটি চুক্তিকে দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে মাঠে নামে বিএনপি।