আল্লাহর ৩ নির্দেশ
আল্লাহর ৩ নির্দেশ - ছবি : সংগ্রহ
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান-১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বাংলাদেশ সরকার