ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ১০ সহজ উপায়
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ১০ সহজ উপায় - ছবি : সংগ্রহ
দিন যত যাচ্ছে, চিকিৎসকেরা ক্যান্সার হওয়ার ততই নতুন নতুন কারণ খুঁজে বের করছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে এই ঘাতক ব্যাধিতে। প্রতিটি মানুষেরই জীবনের কোনো না কোনো সময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সুখের কথা এই যে, বেশির ভাগ ক্যান্সার- তা সে বংশগত কিংবা পরিবেশগত, যে কারণেই হোক না কেন, প্রতিরোধ করা সম্ভব। জীবননাশক ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চিকিৎসকরা ১০টি সহজ উপায়ের কথা বলেছেন, যা মেনে চললে দোরগোড়া থেকেই ছুটে পালাবে ক্যান্সার- লিখেছেন ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল
১. ক্যান্সার-বিরোধী খাবার খান
এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে ফলমূল এবং সবজি। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ফলমূল ও সবজি রাখবেন। রান্নার ঠিক আগের মুহূর্তে এগুলো কেটে ধুয়ে ফেলুন। তবে খেয়াল রাখবেন, টুকরোগুলো যেন বেশি ছোট না হয়। টুকরো যত বড় করবেন, ভিটামিনও তত বেশি থাকবে। টুকরো ছোট হলে অক্সিজেনের সংস্পর্শে ভিটামিনগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
খাদ্যে ভিটামিন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে দারুণভাবে যুদ্ধ করে। ফলমূল কিংবা সবজির আঁশ আপনার শরীর থেকে ক্যান্সারের উপাদান বিতাড়িত করে। গবেষকদের মতে, যারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফলমূল এবং সবজি খান, তারা ক্যান্সারে মৃত্যুর হাত থেকে অর্ধেকটাই বেঁচে যান। এসব খাবার শতকরা ৫০ ভাগ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
২. দিনে চার গ্লাসের বেশি পানি পান করুন
তথ্যটি অবাক করার মতো, সন্দেহ নেই। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা ৪৬২ জন পুরুষের ওপর এক জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, যারা দৈনিক চার গ্লাসের বেশি পানি পান করেছেন, তাদের কান্সারের ঝুঁকি শতকরা ৩২ ভাগ কমে গেছে। পানি পান করার জন্য তৃষ্ণার্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সারাদিনে চার গ্লাসের বেশি পানি পান করুন। অনেক পানির বদলে অন্য পানীয় যেমন- সফট ড্রিংকস, অ্যালকোহল বা কফি পান করতে ইচ্ছুক। কিন্তু এগুলো পানির বিকল্প নয়।
৩. টমেটোর চাটনি খান
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ৪৮ হাজার পুরুষের ওপর এক গবেষণা চালিয়েছেন। দেখা গেছে, যারা নিয়মিত টমেটোর তৈরি খাবার খেয়েছেন, তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি শতকরা ২১ ভাগ কমে গেছে, আর যারা দিনে দুই থেকে চারবার খেয়েছেন তাদের কমেছে শতকরা ৩৪ ভাগ। টমেটোতে থাকে ‘লাইকোপেন’ নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কিন্তু টমেটো থেকে উপকার পেতে কখনো টমেটোর জুস কিংবা সালাদ খাবার কথা চিন্তা করবেন না। হয় টমেটো দিয়ে সস বানিয়ে খাবেন অথবা চাটনি বানিয়ে খাবেন। রান্না করা টমেটো থেকেই কেবল আপনি ক্যান্সার-বিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেতে পারেন। গবেষকদের মতে, রক্তে লাইপোকেন সঞ্চালনের জন্য খুব সামান্য চর্বির প্রয়োজন হয়।
৪. পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের চপ খান
নিয়মিত পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের চপ খেলে শতকরা ৫০ ভাগ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। পেঁয়াজে থাকে ব্যাকটেরিয়াবিরোধী উপাদান এবং ‘অ্যালাইলিক সালফাইডস।’ এটি একটি শক্তিশালী ক্যান্সার প্রতিরোধক। অ্যালাইলিক সালফাইডস ক্যান্সার উৎপাদনকারী উপাদানগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। নেদারল্যান্ডে তিন হাজার ১২৩ জন লোকের ওপর চার বছর ধরে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দৈনিক একটার অর্ধেক পেঁয়াজ খেয়েছেন তাদের পাকস্থলীতে ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেকই কমে গেছে।
৫. সঠিকভাবে ব্যায়াম করুন
একথা সবাই জানেন, জীবনের সুস্থতার জন্য ব্যায়াম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা। তবে আপনি কি জানেন, ব্যায়াম ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়? হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ৪৮ হাজার লোকের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন তাদের অন্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৫০ ভাগ কমে গেছে। ব্যায়াম কেবল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় না, ব্যায়ামের ফলে অন্ত্রে খাদ্য চলাচলের গতি বেড়ে যায় এবং এ কারণে ক্যান্সার উৎপাদনকারী বস্তুগুলো অন্ত্রে অবস্থান নেয়ার সুযোগ পায় না।
৬. কপি-জাতীয় সবজি খান
বাফেলোতে অবস্থিত রোজওয়ের পার্ক ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ৪৮৯ জন লোকের ওপর এক গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, বংশগত এবং পুষ্টিগত অবস্থা কিভাবে তাদের অন্ত্র ও পায়ুপথের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু খাদ্য এ ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি শতকরা ৪০ ভাগ কমিয়ে দেয়। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে কপি জাতীয় সবজি যেমন- ব্রুকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও শালগম। প্রাচীনকালে এসব সবজি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এগুলোতে থাকে ‘সালফোরাফেন’ নামক রাসায়নিক উপাদান যা অত্যন্ত শক্তিশালী এক ক্যান্সার-বিরোধী যৌগ।
৭. খাদ্যে সয়াবিন যোগ করুন
সয়াবিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় বটে, তবে ঠিক কতটুকু কমায় তা জানা যায়নি। সয়াবিনে থাকে ফাইটোইস্ট্রোজেন নামক উপাদান যা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারকে প্রতিহত করে। সয়াবিনের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান হলো ‘জেনিসটেইন’। এটি নতুন টিউমারের পাশে কোনো রক্তনালী গঠন হতে দেয় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাপানের পুরুষরা বেশি করে সয়াবিন খাওয়ার কারণে প্রোস্টেটের ক্যান্সারে কম ভুগে থাকেন। আপনি যখন রুটি তৈরি করবেন, তখন আটার মধ্যে সয়াবিন মিশিয়ে দেবেন। যেকোনো খাবারে রান্নার সময় একটু সয়াবিন যোগ করুন।
৮. আঙুরের রস খান
আঙুরের রস খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫-৪০ ভাগ কমে যায়। চিকিৎসকরা এক গবেষণায় দেখেছেন, আঙুরের রসে থাকে এমন এক ক্যান্সার-বিরোধী উপাদান যা ফুসফুস প্রোস্টেট ও অন্য ক্যান্সারকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে।
৯. বেশি করে খাদ্যশস্য খান
কানাডার গবেষকরা ১৫ হাজার লোকের ওপর এক গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, যারা প্রচুর খাদ্যআঁশ খেয়েছেন তাদের অন্ত্র ও পায়ুপথের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেকটাই কমে গেছে। গবেষকরা আরো দেখেছেন, দৈনিক ১৩ গ্রাম অতিরিক্ত আঁশ খেলে অন্ত্র ও পায়ুপথের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩২ ভাগ কমে যায়। এই আঁশ আপনি খাদ্যশস্য থেকেই পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভুট্টা ও যবের ভুসি উৎকৃষ্ট খাদ্যশস্য।
১০. একটি করে এসপিরিন খান
প্রাথমিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসপিরিন অন্ত্র ও পায়ুপথের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৬০ ভাগ কমিয়ে দেয় এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি ৯০ ভাগ কমিয়ে দেয়। তবে গবেষকেরা শুধু ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে এসপিরিন গ্রহণ করার সুপারিশ করছেন না। কারণ ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে এসপিরিনের কার্যকারিতা পেতে হলে বছরের পর বছর সেবন করতে হবে। কিন্তু এসপিরিন কোনো কোনো লোকের পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে থাকে। তবে আপনি যদি হৃদরোগী হন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই এসপিরিন গ্রহণ করতে হবে, আর সেখান থেকেই আপনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এসপিরিনের সুফলটা পেতে পারেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
চেম্বার-১ : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০৯৬১৩৭৮৭৮০২
চেম্বার-২ : আজগর আলী হসপিটাল, ১১১/১/এ ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
ফোন : ০১৭৮৭৬৮৩৩৩৩, ১০৬০২