করোনা ভাইরাস : যে ১৪ তথ্য আপনার জানা থাকা দরকার
করোনা ভাইরাস - সংগৃহীত
করোনা ভাইরাস বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে দেখা দেয়ার শঙ্কা কয়েক দিন ধরেই করা হচ্ছিল। ৮ মার্চ রোববার বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর জানায় এই রোগে আক্রান্ত লোকের সন্ধান পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। আর এ ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে করোনাভাইরাস নিয়ে দেখা যাচ্ছে মানুষের বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য। না জেনে বা বুঝে অনেকেই প্রচার করছেন ভুল তথ্য।
চলুন জেনে নেয়া যাক করোনা ভাইরাস নিয়ে কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে :
১. শীতল আবহাওয়া এবং তুষারপাত করোনাভাইরাস ঠেকাতে পারে :
শীতল আবহাওয়া করোনাভাইরাস বা অন্য কোনো রোগকে ঠেকাতে পারে এটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। বাহ্যিক তাপমাত্রা বা আবহাওয়া নির্বিশেষে মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। নতুন করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা বা পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা।
২. গরম পানি দিয়ে গোসল করলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়
গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আপনি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হবেন না, এটিও একটি ভুল ধারণা। বরং বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে রক্ষার সর্বোত্তম পন্থা হলো ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলা। এর ফলে আপনার হাতে যদি ভাইরাস থেকে থাকে তাহলে তা নির্মূল হবে এবং হাত দিয়ে চোখ, মুখ বা নাক স্পর্শ করার পর ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।
৩. চীন বা অন্য যেসব দেশে ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেসব দেশে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করলে করোনা ভাইরাস ছড়াবে না :
যদিও নতুন করোনাভাইরাস কয়েক ঘন্টা বা বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত পৃষ্ঠের ওপর থাকতে পারে (পৃষ্ঠের ধরণের ওপর নির্ভর করে), তবে কোনো বস্তু সরানো, ভ্রমণ, বিভিন্ন অবস্থার সংস্পর্শে আসার পর এবং ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার পরও ভাইরাসটি পৃষ্ঠের ওপর থেকে যাবে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তারপরও আপনার যদি মনে হয় কোনো বস্তুতে ভাইরাস রয়েছে, সেক্ষেত্রে এটি পরিস্কার করার জন্য একটি জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন এবং পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৪. মশার কামড়ে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ায় না :
মশা বা মশার কামড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। নতুন করোনাভাইরাস হলো শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, সর্দি, লালা বা স্রাবের মাধ্যমে ছড়ায়। নিজেকে রক্ষা করতে, কিছুক্ষণ পর পর ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন এবং হাঁচি, কাশি হচ্ছে এমন কারও সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন।
৫. হ্যান্ড ড্রায়ার কি নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর?
না, নতুন এই ভাইরাস প্রতিরোধে হ্যান্ড ড্রায়ার কার্যকর নয়। এই ভাইরাস প্রতিরোধে অন্যতম কার্যকর উপায় হলো হাত পরিস্কার রাখা। সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়ার পর তোয়ালে বা এয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে তা শুকিয়ে ফেলুন।
৬. আলট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনী রশ্মি কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম?
হাত বা ত্বকের কোনো স্থান জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউভি ল্যাম্প ব্যবহার করা ঠিক নয়, কারণ ইউভি রেডিয়েশনের ফলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
৭. করোনাভাইরাস শনাক্তে থার্মাল স্ক্যানার কতটা কার্যকর?
নতুন করোনাভাইরাসের কারণে যারা জ্বরে আক্রান্ত (শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি থাকা) তাদের শনাক্ত করতে থার্মাল স্ক্যানার কার্যকরী। তবে জ্বরে আক্রান্ত নয় কিন্তু করোনা আক্রান্ত হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের শনাক্তে এটি কার্যকর নয়। কারণ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য বা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ২ থেকে ১০ দিন সময় লাগে।
৮. শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন স্প্রে করে কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব?
না, অ্যালকোহল বা ক্লোরিন স্প্রে করে শরীরে প্রবেশ করা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করা সম্ভব নয়। অ্যালকোহল বা ক্লোরিন কোনো বস্তু জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে, তবে তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
৯. বাড়িতে থাকা পোষা প্রাণী থেকে কি কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে?
কুকুর বা বিড়ালের মতো সহচর/পোষা প্রাণী নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, পোষা প্রাণীর সংস্পর্ষে থাকার পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত। এটি ই.কোলি এবং সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া যা প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, তা থেকে রক্ষা করবে।
১০. নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিনগুলো কি করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সক্ষম?
না, নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা ভ্যাকসিনগুলো নতুন করোনাভাইরাস থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সক্ষম নয়। ভাইরাসটি এতটাই নতুন এবং আলাদা যে, এর নিজস্ব ভ্যাকসিন প্রয়োজন। গবেষকরা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গবেষকদের সহয়তা করছে।
১১. স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক ধুলে কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ পাবে?
না, স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক ধুলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করা যাবে এর কোনো প্রমাণ নেই। অল্প কিছু প্রমাণ রয়েছে যে, স্যালাইন দিয়ে নাক ধুলে তা মানুষের সাধারণ সর্দি কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে, শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণ রোধে এটি কার্যকর নয়।
১২. করোনাভাইরাসে কি শুধু বয়স্ক ব্যক্তিরাই আক্রান্ত হতে পারেন?
যেকোনো বয়সের মানুষ নতুন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বয়স্ক ব্যক্তি, বিশেষ করে যারা হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো রোগে আক্রান্ত, করোনাভাইরাস তাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
১৩. করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক কি কার্যকর?
না, অ্যান্টিবায়োটিকগুলো শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়। তাই নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। তবে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হতে পারে, কারণ এই ভাইরাস থেকে ব্যাকটেরিয়াল কো-ইনফেকশন হওয়া সম্ভব।
১৪. করোনাভাইরাস প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ রয়েছে কি?
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি। তবে নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং পরবর্তিতে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
সূত্র : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)/ইউএনবি