ভারতের উস্কানি, কঠোর ব্যবস্থা নেবে চীন!
ভারতের উস্কানি, কঠোর ব্যবস্থা নেবে চীন! - সংগৃহীত
চীনা জাহাজ দা চুই ইয়ুন আবারো ভারতে শিরোনাম হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী, হংকংভিত্তিক পরিবহন জাহাজ দা চুই ইয়ুন পাকিস্তানের করাচির পোর্ট কাসিমে যাচ্ছিল। ৫ ফেব্রুয়অরি দীনদয়াল পোর্টে ভারতীয় নিরাপত্তা ও শুল্ক কর্তৃপক্ষ এটিকে আটক করে।
ভারত দাবি করছে যে তারা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে, জাহাজটিতে যেসব পণ্য রয়েছে তা পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে ব্যবহৃত হতে পারে। জাহাজটি নোঙর করার পর ভারতীয় বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করে তথাকথিত শিল্প রঞ্জক পায়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই পণ্যটি দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায়নি।
২০ ফেব্রুয়ারি ‘শিল্প রঞ্জক’ হস্তান্তর করতে বাধ্য করার পর চীনা জাহাজটিকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়নি।
চীনা কোম্পানিটি যখন আইনগত চ্যানেল ব্যবহার করে ক্ষতিপূরণ দাবি করার কথা বিবেচনা করছিল, তখন বৃহস্পতিবার হিন্দুস্তান টাইমসে দাবি করা হয় যে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার বিজ্ঞানীরা ওই ভারতীয় শিল্প সরঞ্জাম পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে এগুলো খুবই দূর পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা উপগ্রহ নিক্ষেপণ রকেট নির্মাণে ব্যবহৃত হতে পারে। ভারতীয় কর্মকর্তারা আরো বলেন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অভিহিত করবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। তাদের ভাষায় তারা চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু বিস্তারের আঁতাত আবিষ্কার করেছে। ভারত যে আরেকটি কূটনৈতিক বিরোধ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে এবং চীনকে ব্ল্যাকমেইল করতে চাচ্ছে, তা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে।
এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো শিল্প রঞ্জক (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডায়ার) বেসামরিক ও সামরিক উভয় উদ্দেশ্যে ব্যবৃহত হতে পারে কিনা। সরঞ্জামটির প্রস্তুতকারীদের (শ্যানডংয়ের একটি বেসরকারি কোম্পানি) মতে, সরঞ্জামটি শিল্প রঞ্জক নয়, বরং এটি একটি হিট-ট্রিটমেন্ট ফারনেস সিস্টেম। এটি মূলত বড় নির্মাণ মেশিনারি, অ্যান্টি-কোলিশন এয়ারব্যাগ, রাবার লিকুইড স্টারেজ ট্যাঙ্ক, রাবার পাইপ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
এই বেসরকারি কোম্পানিটির সাথে চীনা সামরিক বাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই। কোম্পানিটির পাকিস্তানি ক্রেতার সাথেও দেশটির সামরিক বাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী যে কেউ জানে যে চীন যদি পাকিস্তানকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম নির্মাণে সহাযতা করতে চায়, তবে সেগুলো ভারতীয় বন্দরের মাধ্যমে জাহাজ যোগে পাঠাবে না। ভারতের এই পদক্ষেপটি আসলে চীনকে অপমান করা। মনে হচ্ছে, চীন যদি পাকিস্তানে একটি স্টিলের প্লেট পাঠায়, তবুও ভারত দাবি করতে পারে যে এটি পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরীর জন্য পাঠানো হচ্ছিল।
চীন হলো পরমাণু বিস্তাররোধ চুক্তিতে (এনপিটি) সইকারী দেশ। দীর্ঘ দিন ধরে দেশটি এই চুক্তি সমুন্নত করে রেখেছে। একটি বড় দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে চীন তার আন্তর্জাতিক অবিস্তার বাধ্যবাধকতা পূরণ করে চলেছে। অন্যদিকে ভারত অব্যাহতভাবে এনপিটিতে সই করতে অস্বীকার করে আসছে। দেশটি চীনকে চুক্তির লঙ্ঘনকারী দেশ হিসেবে অভিযুক্ত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে দা চুই ইয়ুন ঘটনাটিকে ভারত ব্যবহার করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের কাছ থেকে চীনকে চাপ প্রয়োগের আশ্বাস লাভ করার জন্য, যাতে পরমাণু সরবরাহ গ্রুপে (এনএসজি) ভারতকে প্রবেশের সুযোগ দিতে চীন রাজি হয়।
ভারত অনেক বছর ধরেই এনএসজিতে প্রবেশের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দেশটি এনপিটিতে সই ছাড়াই এতে সামিল হতে চাইছে। শুরুতে ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি গড়ে তুলেছিল। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বেসামরিক পরমাণু চুক্তিতে সই করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের লক্ষ্য ছিল চীনকে সংযত করার মার্কিন প্রয়াসে ভারত যাতে তাদের সাথে যোগ দেয়। ভারতের পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও দক্ষিণ এশিয়ায় পরমাণু অবিস্তার প্রতিষ্ঠায় বাধার সৃষ্টি করেছে।
চীন কাজ করে যাচ্ছে ভারতের সাথে নতুন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। দুটি বৃহৎ উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সঙ্ঘাত নয়, সংঘর্ষ নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও উইন-উইন সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চায় চীন। চীন আশা করে, ড্রাগন ও হাতি একসাথে নৃত্য করার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে। অবশ্য ভারতের কূটনৈতিক ও কৌশলগত মহল অব্যাহতভাবে চীনের শক্তি পরীক্ষা করতে চায়। এটি নিশ্চিতভাবেই চীন ও ভারতের মধ্যকার অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকের কৌশলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
দা চুই ইয়ুন ঘটনাটি ভারত সরকার ও দেশটি পরিচালনাকারী হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরে শ্রেষ্ঠত্ব সুসংগত করার জন্য ভারত কেবল পাকিস্তানকে মর্যাদাহীন, নিঃসঙ্গ ও গুঁড়িয়ে দেয়ার চেষ্টাই করছে না সেইসাথে ভারত মহাসাগরে পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টাও করছে।
গত বছর ভারতীয় নৌবাহিনী আন্দামানের গভীর সাগর থেকে চীনা বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজকে ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে বহিষ্কার করেছিল। চলতি বছর তারা দা চুই ইয়ুন জাহাজকে জব্দ করার জন্য একটি অজুহাত তৈরী করেছে। চীনকে অবশ্যই ভারতের উস্কানিমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং চীনা কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই আইনগত চ্যানেলের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ কামনা করতে হবে।
গ্লোবাল টাইমস