করোনায় তাদের লাভ!
করোনা - ছবি : সংগ্রহ
ইউরোপের জনতুষ্টিবাদী রাজনীতিকরা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্বাস্থ্য সঙ্কটকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে কভিড-১৯ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের ৯০ শতাংশই চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। এ পর্যন্ত কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক।
ইতালির প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উগ্র ডানপন্থী লীগ পার্টির নেতা মাত্তিও সালভিনির মতে করোনার প্রাদুর্ভাব ইতালিয়ানদের বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে যে তাদের ইউরোপপন্থী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পি যদি ইতালি ও ইতালীয়দের রক্ষা করতে না পারেন, তবে তার সরে দাঁড়ানো উচিত,’ ফেব্রুয়ারির শেষদিকে সালভিনি এ মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আমি সরকারের কাছে জানতে চাই, কারা এসেছিল এবং কিভাবে বেরিয়ে গেছে? এখনই আমাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে।’ করোনাভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যায় গত মঙ্গলবার ইরানকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে ইউরোপের দেশ ইতালি।
এমনিতেই চীনবিরোধী মনোভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, তার মধ্যেই সালভিনি আফ্রিকা থেকে আগত লিবীয় আশ্রয়প্রার্থীদের ইতালিতে প্রবেশের বিষয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সালভিনি গত মাসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আফ্রিকা থেকে আগত অভিবাসীদের উপকূলে ভেড়ার অনুমতি দেয়া, যেখানে ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে, এটি দায়িত্বজ্ঞানহীন।’
অথচ সেই সময়ে, মিসরই ছিল একমাত্র দেশ যেখানে একজন ভাইরাস আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করা হয়েছিল। তারপর থেকে গোটা আফ্রিকা মহাদেশে মাত্র কয়েকটি আক্রান্তের খবর জানা গেছে। দু’টি উদ্ধারকারী এনজিও জাহাজ, ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (মেডিসিনস সান ফ্রন্টিয়ার্স, এমএসএফ) ওশান ভাইকিং’ এবং ‘সি ওয়াচ ৩’ যথাক্রমে ২৩ ও ২৭ ফেব্রুয়ঢারি থেকে দু’টি সিসিলিয়ান বন্দরে অবরুদ্ধ ছিল, এ সময় তাদের যাত্রীদের দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারান্টাইনে (পৃথকীকরণ) রাখা হয়।
উদ্ধারকৃত অভিবাসী এবং শরণার্থীদের কাছের একটি কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল, যদিও উদ্ধারকারী জাহাজের ক্রুরা এখনো জাহাজের বোর্ডেই রয়েছেন। এর ফলে কোনো এনজিও মধ্য ভূমধ্যসাগরে কাজ করছে না। এমনকি জাহাজের কোনো ব্যক্তিকে আক্রান্ত পাওয়া যায়নি।
এমএসএফ ইতালি টুইটারে লিখেছিল, ‘একটি উদ্ধারকারী জাহাজকে পৃথক অবস্থায় রাখার অর্থ হল, জরুরি অবস্থার মাঝামাঝি সময়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার মতো।’ অথচ মুক্ত চলাচল ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি মূলনীতি।
ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থী রাসেম্বলমেন্ট ন্যাশনালের নেতা মেরিন লে পেন গত সপ্তাহে ইতালীয় ফুটবলভক্তদের লিওনের একটি খেলায় অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকারের সমালোচনা করেন এবং এই যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ‘একটি সীমান্ত জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন।’
নাগরিকদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সীমান্ত উন্মুক্তের মত ‘গোঁড়ামি’ সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য ইউরোপীয় নেতাদের সমালোচনা করে জার্মানি ও স্পেনের উগ্র ডানপন্থী দলগুলো শেনজেন চুক্তি স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। যা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৬ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে পাসপোর্ট-মুক্ত ভ্রমণের অনুমতি দেয়।
ইতোমধ্যে কিছু ইউরোপীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবাধ চলাচল সীমিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) পরিচালক, আন্দ্রে আমন বলেছেন, শেনজেন চুক্তি স্থগিত করা ‘বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায়সঙ্গত নয়।’
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়্যাল হলোওয়ের আধুনিক ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রভাষক আন্দ্রেয়া ম্যামোন আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘কিছু দেশ সীমান্ত বন্ধ করার জন্য এক ধরনের স্বৈরাচারী চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং সালভিনির মতো লোকেরা অভিবাসীদের প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার জন্য এটিকে ব্যবহার করেছেন।’
সূত্র : আলজাজিরা