তিব্বতে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে চীন, ভারত উদ্বিগ্ন!
তিব্বতে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে চীন, ভারত উদ্বিগ্ন! - সংগৃহীত
চীনের পিপলস লিবারেশান আর্মি (পিএলএ) গত মাসে তিব্বত অঞ্চলে বড় ধরনের সামরিক মহড়ার আয়োজন করে। এতে চীনা অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভার প্রদর্শন করা হয়।
তিব্বতে গত মাসের মহড়ায় চীনের সামরিক সক্ষমতার বেশ কিছু নমুনা প্রদর্শিত হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ছিল টাইপ ১৫ হালকা যুদ্ধ ট্যাঙ্ক এবং নতুন ১৫৫ মিমি ভেহিকল-মাউণ্টেড কামান। গ্লোবাল টাইমসকে এক চীনা সামরিক বিশ্লেষক বলেন যে, “এই দুই অস্ত্রেরই শক্তিশালী ইঞ্জিন রয়েছে এবং তিব্বতের ভৌগলিক পরিবেশে এগুলো দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম”। গ্লোবাল টাইমসের একই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, পিএলএ তিব্বত মিলিটারি কমাণ্ড এরই মধ্যে এই পুরো অঞ্চলে হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান, ভারি আর্টিলারি, বিমান বিধ্বংসী মিসাইল মোতায়েন করেছে। ৩৭০০ মিটার উচ্চতার লাসা থেকে ইয়ে সীমান্তবর্তী ৪০০০ মিটার উচ্চতার বিভিন্ন এলাকায় এগুলো মোতায়েন করা হয়েছে।
এই মোতায়েন ও মহড়ার বিষয়টি মোটেই বিস্ময়কর কিছু নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই পিএলএ তাদের সামগ্রিক যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়াচ্ছে এবং প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চ অক্ষাংশ এলাকায় তারা এটা করছে। এটা চীনের সামরিক বাহিনী কিভাবে কাজ করবে এবং ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের অন্যান্য পক্ষগুলো কিভাবে কাজ করবে, তার উপর প্রভাব ফেলবে।
বিশেষ করে তিব্বতে পিএলএ বেশ কিছু মহড়ায় অংশ নিয়েছে। আর এর মাত্রা বাড়ছে। ২০১১ সালে তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলে পিএলএ দুটো যৌথ মহড়া চালায়।
ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে তিব্বত অঞ্চলে চীনের সামরিক প্রচেষ্টা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। যদিও ২০২০ সালে পিএলএ’র এটা প্রধান মহড়া, তবে বিগত এক দশকে এ অঞ্চলে পিএলএ’র সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বেইজিং যে এ অঞ্চলে সীমান্ত অবকাঠামো নির্মাণ করেছে, সেটা তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
সেই সাথে, পিএলএ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বহু সামরিক ক্যাম্প স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে এবং এ সব ক্যাম্পে বিভিন্ন সময় সেনা মোতায়েন করা হয়। এর অর্থ হলো পিএলএ উচ্চ অক্ষাংশ এলাকার আবহাওয়ার সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের দিক থেকে চীন-ভারত সীমান্ত এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত অধিকাংশ বাহিনী আসামের সমতলে মোতায়েন রয়েছে।
এটা নিজেই একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু নয়াদিল্লীর জন্য বড় উদ্বেগ হলো তিব্বত এলাকায় পিএলএ’র মহড়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। পিএলএ তাদের বিভিন্ন আভিযানিক ধারণাগুলো যাচাইয়ের জন্য বেশ কতগুলো একক ও যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
তিব্বত এলাকায় পিএলএ ঘন ঘন এবং যে সব জটিল মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো আগামীতে কি হতে পারে, সে সম্পর্কেও একটা ধারণা দেয়। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব মিডিয়াগুলোতে এইসব মহড়ার খবর ফলাও করে প্রচারের অর্থ হলো ভারতকে এই বার্তা দেয়া যে, সার্বিকভাবে পিএলএ’র যুদ্ধ সক্ষমতা তাদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। নয়াদিল্লী তাদেরকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।
সুস্পষ্টতই তিব্বত অঞ্চলে চীনের সামরিক তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। এটা সম্ভবত ভারতকে আরও তৎপরতা বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করবে। দোকলামের অচলাবস্থার যদিও শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে, কিন্তু দুই পক্ষে যেভাবে প্রস্তুতি চলছে, তাতে মনে হচ্ছে পরবর্তী অচলাবস্থার পরিণতিটা হবে ভিন্ন।
সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট/এসএএম