আবারো কপাল পুড়বে নেতানিয়াহুর!
নেতানিয়াহু - ছবি : সংগ্রহ
মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইল সরকার গঠন নিয়ে টালমাটাল অবস্থায় আছে বছরখানেক ধরেই। গত ১২ মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো গত সোমবার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো দলই পার্লামেন্টে একক সরকার গঠন করতে পারেনি। যার ফলে আবারো নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো দেশটিতে।
এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের এবং তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইসরাইলের এই নির্বাচনে ৬৪ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। নির্বাচনে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টি এবং সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গান্টিজের মধ্যপন্থী জোট ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট জোটের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কিন্তু উভয় দলই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কিছু জরিপে নেতানিয়াহু যদিও এগিয়ে আছে, তারপরও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কয়েক মাসের মধ্যে আবারো পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
ইসরাইলে গত এপ্রিলে নির্বাচনের পর আবারো সেপ্টেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুইবারই নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থী রক্ষণশীল দল বা ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী জোটেরা সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত আসন নিতে পারেনি। ফলে নেতানিয়াহু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করছে। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ার ফলে তার সম্পূর্ণ ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারবেন না বা বাজেটও দিতে অক্ষম। এসব সমস্যা থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ যেকোনো জোটের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন।
ইসরাইলের নির্বাচনে বিভিন্ন দলে প্রার্থী থাকে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকতে পারে। পার্লামেন্টের ১২০টি আসন দলগুলোর ভোটার অনুপাতে ভাগ করা থাকে। ফলে কোনো একটি দলের ৬১ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এককভাবে সরকার গঠন প্রায় অসম্ভব। বিজয়ী বড় দলকে ছোট দলগুলোর সাথে জোট বা শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হয়। অনেক সময় ভিন্ন মতাবলম্বী কোনো দলের সাথে জোট বেঁধে সরকারে থাকতে হয়। তবে, এসব নির্বাচনে দখলকৃত ফিলিস্তিনের নাগরিকরা ভোট দিতে পারেন না।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী ব্লকটি তার নিজের দল লিকুদ পার্টিসহ ধর্মনিরপেক্ষ রক্ষণশীল গোষ্ঠী, মুষ্টিমেয় কট্টরপন্থী অর্থোডক্স ও উগ্র-ডানপন্থী দল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গান্টিজ ধর্মনিরপেক্ষ মধ্যপন্থী ব্লকের প্রধান। তার দল ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট ছাড়াও তিনি মধ্য ও বামপন্থী দল যেমন- গেসার, মেরেৎজ ও লেবার পার্টির সাথে জোট গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন।
এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাত সমাধানে প্রস্তাবনা নিয়ে আসেন। ইসরাইলের অধিকারকর্মীরা ফিলিস্তিনের স্বার্থকে অবহেলার জন্য এই পরিকল্পনার নিন্দা করেছে। অন্য দিকে, ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা বলেছে, এই চুক্তির ফলে তারা ফিলিস্তিনিদের পর্যাপ্ত ভূমি দখল করতে পারবে না।
এদিকে নেতানিয়াহু গত নভেম্বরে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। যদি তিনি পুনরায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তবে তিনি হবেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী; যিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। গান্টেজ বলেন, ইসরাইলের গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে। আর নেতানিয়াহুর বক্তব্য- গান্টেজ অযোগ্য ব্যক্তি, একমাত্র তিনিই ইসারাইলের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা রাখেন।
তবে এই নির্বাচনেও সম্ভবত কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। করোনাভাইরাসের কারণে এই নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে।
ইসরাইল বিয়াইটাইনু পার্টির প্রধান ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডোর লিবারম্যানের দিকে সবার নজর। তিনি নেতানিয়াহুর সাবেক মিত্র। তিনি এখন ইসরাইলের রাজনীতির ‘কিংমেকার’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী ছোট গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন। তবে এ নির্বাচনে তিনি কাকে সমর্থন করছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। গান্টেজ আরবগোষ্ঠীগুলোর সমর্থন পেতে পারেন। কিন্তু আরবদের সমর্থন পেলে লিবারম্যান আবার গান্টেজকে সমর্থন দেবে না তা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।
নেতানিয়াহুর ওপর দুর্নীতির অভিযোগ চলাকালীন তিনি সরকার গঠন করতে সক্ষম কি না, এমন প্রশ্ন রয়েছে অনেক ভেতর। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে। যদি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিচারপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত তার পদে বহাল থাকতে পারবেন। তবে কোনো আইনপ্রণেতা যদি প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হন, তখন কী হবে এসব নিয়ে সবাই একমত হতে পারায় এর সুযোগ নিয়েছেন নেতানিয়াহু।
তবে এই নির্বাচনে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে মনে হয়। তবে নির্বাচনী দলগুলো আবারো একটি ব্যয়বহুল নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে চায়। বারবার নির্বাচনের ফলে রাজনৈতিক দলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি নতুন বাজেট দিতে অক্ষম। এর ফলে সরকারি শিক্ষা ও সামাজিক সেবা খাতগুলোতে তহবিল পেতে দেরি হচ্ছে ও প্রকল্পগুলো শেষ করতে পারছে না। আর জনগণও এখন আর এসব সমস্যার ভেতরে নিজেদের টেনে নিয়েছেন।