যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি : ভারত-ইরান কেন বিরোধী
ইরানি প্রেসিডেন্ট রুহানি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি - সংগৃহীত
দোহায় শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আফগানিস্তানবিষয়ক যে শান্তিচুক্তি হয়েছে তা নিয়ে প্রধান প্রধান আঞ্চলিক দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ায় বিভেদরেখাগুলো প্রকাশ করেছে, আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য এগুলো কার্যকর দিক-নির্দেশক।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের অবজ্ঞাপূর্ণ মন্তব্য এবং ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নজিরবিহীন বিস্ফোরণ বাদ দিলে আফগানিস্তানের শান্তি নিয়ে সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা সুস্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে।
পাকিস্তান
প্রত্যাশা মতোই পাকিস্তানের কাছ থেকে আনন্দদায়ক প্রতিক্রিয়া এসেছে। মার্কিন মনোভাব প্রবলভাবে অনুসরণ করেই দোহা চুক্তির ব্যাপারে পাকিস্তান বলছে যে এটা একটা ঐতিহাসিক সুযোগ এবং আফগান পক্ষগুলোকে তা গ্রহণ করা উচিত। পাকিস্তান নিজেকেই অভিনন্দিত করার অবস্থায় আছে। তারা দাবি করছে যে আফগানিস্তান নিয়ে তাদের অবস্থানই শেষ পর্যন্ত যথার্থ বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। আফগান শান্তিপ্রক্রিয়া ব্যক্তি গতি লাভ করবে বলেও ব্যাপক আশাবাদ রয়েছে।
আফগান সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে পাকিস্তান। কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানের ব্যাপারে পাকিস্তান যে নীতি অনুসরণ করে আসছিল, তা চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, কাবুলের নেতৃত্বে তাদের ‘কৌশলগত সম্পদ’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশ্বাস পেয়েছে। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্কও আবার চাঙ্গা হবে। আর এসবের ফলে পাকিস্তান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে গেম চেঞ্জারে পরিণত হবে।
ইরান
আরেক কোণে আছে ইরান। দেশটি দৃশ্যত শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে তিনটি প্রধান উপাদান আছে।
প্রথমত, ইরান জোর দিয়ে বলছে যে আসন্ন আন্তঃআফগান আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থই বিবেচনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়ে আছে তেহরান। তেহরান আমেরিকান পদক্ষেপকে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতিকে বৈধ করার প্রয়াস হিসেবে অভিহিত করছে। তৃতীয়ত, ইরান মনে করে যে আফগানিস্তান একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে।
তেহরানের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো আফগানিস্তানে প্রবল উপস্থিতি বজায় রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং একে ইরানকে অস্থিতিশীল রাখার কাজে ব্যবহার করা হবে। শান্তিপ্রক্রিয়াকে আঘাত করবে না তেহরান। সে চেষ্টা করবে চূড়ান্ত সমঝোতায় তার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে আফগান উপদলগুলোর মধ্যে তার প্রভাবকে ব্যবহার করতে।
শেষ কথা হলো, তালেবান-ইরান সম্পর্কের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র জানে। আর মুখে মুখে ইরানবিরোধী বক্তব্য প্রদান করলেও ট্রাম্প প্রশাসন চায় না যে ইরান শান্তিপ্রক্রিয়াটি ভণ্ডুল করে দিক।
ভারত
ভারতীয় বিবৃতিতে সুস্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যকার চুক্তিটিকে স্বাগত জানানো হয়ীন। তবে প্রতিশ্রুতি দেয়অ হয়েছে যে তারা সরকার, গণতান্ত্রিকব্যবস্থা ও নাগরিক সমাজকে নিয়ে আফগানিস্তানের সামগ্রিক ব্যবস্থায় কিছু হওয়াকে তারা স্বাগত জানাবে। দিল্লি জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের সরকার ও জনগণকে তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার প্রতি তাদের সব ধরনের সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
স্বাভাবিকভাবেই দিল্লি চরম অসন্তুষ্ট। আফগানিস্তানবিষয়ক ভারতের পুরো নীতি আফগান নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা ও পাকিস্তানকেন্দ্রিক। ভারত নিজেকে ডাঙ্গার মাছ মনে করছে। তারা মনে করছে, কাবুলে যে সরকার আসতে চলেছে, তা হবে পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন। তারা চাচ্ছিল, আশরাফ গনি সরকারই ক্ষমতায় থাকুক।
ওয়াশিংটন চায় ভারত তাদের সাথে থাকুক। সম্প্রতি ভারত সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দিল্লি ও ওয়াশিংটন একই অবস্থানে রয়েছে।
বর্তমানে শান্তিচুক্তির প্রতি শীতলতা প্রদর্শন করলেও আগে হোক বা পরে হোক, তালেবানের বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে নয়া দিল্লিকে।
রাশিয়া
রাশিয়র অবস্থান ভিন্ন। রাশিয়াই একমাত্র বড় শক্তি, যে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি নিয়ে এখনো নীরব রয়েছে। তবে তালেবানের সাথে রাশিয়া যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে এবং পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক করে ফেলেছে।
রাশিয়া এমনকি তালেবানসহ আন্তঃআফগান সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ফলে তালেবানকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রেখে যে শান্তিচুক্তি হয়েছে, তার বিরোধিতা করার কোনো কারণ নেই রাশিয়ার।
তবে রাশিয়া ও ইরানের অবস্থান অনেকটাই একই রকম। দুই দেশই চায় আমেরিকান মর্যাদা খাটো করতে।
চীন
চীন সর্বাত্মকভাবে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তিকে সমর্থন করছে। বেইজিং আফগান শান্তি ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সমর্থক, মধ্যস্ততাকারী হিসেবে তার ভূমিকায় সন্তুষ্ট।
বেইজিং আশা করছে, আগামীতে তারা আফগানিস্তানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারবে। এই চুক্তি চীনের জন্য ভালোই হয়েছে। প্রথমত, পাকিস্তানের সহায়তা নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি করেছে। আবার পাকিস্তান হলো চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ফলে চুক্তিকে সমর্থন করতে চীনের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন