গভীর রাতে ফুর্তির আসর

গভীর রাতে ফুর্তির আসর - সংগৃহীত
শুধু হোটেল ওয়েস্টিনের বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটেই নয়, ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের রওশন’স ডমিনো রিলিভো ভবনের ফ্ল্যাটেও রাতে নিয়মিত আমোদ-ফুর্তির আসর বসাতেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া। সেখানে সুন্দরী তরুণী ও ভিআইপিরাও আসতেন বলে তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইন্দিরা রোডের ওই বাসায় রাতবিরাতে পাপিয়া নিয়ে আসতেন তরুণীদের। সেখানে আসতেন ভিআইপিরাও। তিন বছর ধরে ইন্দিরা রোডের বাসাটিতে থাকতেন তিনি। তবে মাসে ছয়-সাত দিনের বেশি অবস্থান করতেন না। মাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা ভাড়া দিয়ে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটটি রেখেছিলেন পাপিয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেয়ারটেকার সাংবাদিকদের জানান, প্রায়ই রাত বারোটা-একটার দিকে সাত-আটজন নারী নিয়ে বাসায় আসতেন পাপিয়া ম্যাডাম। কোনো দিন নিজের গাড়ি নিয়েই আসতেন, আবার কোনো দিন অন্য কেউ এসে নামিয়ে দিয়ে যেতেন। যে দিন রাতে আসতেন সে দিন রাতে থেকে পরের দিন দুপুরে চলে যেতেন। মাঝে মধ্যে সাথে অনেক বড় বড় স্যারও নিয়ে আসতেন। তারা বেশি সময় থাকতেন না। এক-দুই ঘণ্টা থেকে চলে যেতেন। ম্যাডাম তাদের নিচের পার্কিং পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন।
তদন্তসংশ্লিষ্টদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাপিয়ারা বেশির ভাগ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতেন। সবশেষ গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বিভিন্ন মেয়াদে ৫৯ দিন হোটেল ওয়েস্টিনের কয়েকটি বিলাসবহুল রুমে অবস্থান করে, যার মোট খরচ ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা ৩১ পয়সা নগদ পরিশোধ করে। এই বিপুল অর্থের প্রকৃত উৎস র্যাবকে জানাতে পারেনি তারা। জানা গেছে, পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরী বেশির ভাগ সময় থাইল্যান্ডে অবস্থান করলেও গত থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করেন। ওই রাতে তার কক্ষেও চার-পাঁচজন সুন্দরী নারী ছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। পাপিয়ার সব কর্মকাণ্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী সুমন। একসময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন সুমন। পরে ছিলেন নরসিংদীর মরহুম পৌর মেয়র লোকমানের বডিগার্ড। র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল জানান, তার বার্ষিক আয় ১৯ লাখ টাকা হলেও পাপিয়া গত তিন মাসে শুধু একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন! এ ছাড়া তার নামে একটি হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট সব সময় বুকড থাকত। ওই হোটেলে তার নিয়ন্ত্রণে ছিল সাতটি মেয়ে। জানা গেছে, হোটেলটির বারে পাপিয়া প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
শুধু ওয়েস্টিনেই নয়, গুলশানের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় আরো তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে নারী ব্যবসা চালান পাপিয়া। যারা ওয়েস্টিনে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে না তাদের যাতায়াত ছিল ওই সব অ্যাপার্টমেন্টে। দেশের কোনো পর্যটন এলাকায় ঘুরতে গিয়ে মনোরঞ্জনের জন্য নারী সংগ্রহ করতে চাইলে বাংলাদেশ স্কট সার্ভিসের নম্বরে ফোন দিলেই সেখানে তরুণীদের পাঠিয়ে দেয়া হতো। এ ছাড়াও মন্ত্রী-এমপি, আমলাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কাজ বাগিয়ে নিতেও ব্যবহার করা হতো সুন্দরী তরুণীদের। পাপিয়ার এই অনলাইন সার্ভিস দেখে বেশ কয়েকটি দেহ ব্যবসার অনলাইন সার্ভিস শুরু হয়। যার আদ্যোপান্ত জানতেন যুব মহিলা লীগের দুই শীর্ষ নেত্রী, এক নারী এমপি ও শীর্ষ আরো কয়েকজন নেতা। তাদের মাধ্যমেই মন্ত্রী-এমপিদের বাগে আনতেন তারা। সামাল দিয়েছেন ব্যবসার আইনি ঝামেলা।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি গোপনে দেশত্যাগের সময় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেনÑ পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার। এই নেত্রীর প্রকাশ্য আয়ের উৎস গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে জাল মুদ্রা সরবরাহ, বিদেশে অর্থপাচার এবং অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর সব কাহিনী।