জীবনের শেষ খেলায় হেরে গেলেন মাহাথির!
মাহাথির মোহাম্মদ - সংগৃহীত
মাহাথির মোহাম্মদ, সারা বিশ্বে এক নামে তিনি পরিচিত। একটি অনুন্নত দেশকে এগিয়ে নেয়ার পথিকৃত তিনি। দেশটির দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডও গড়েছেন। নানা খেলায় তিনি দক্ষতার পরিচয়ও দিয়েছেন। এমনকি ২০১৮ সালে অবসর থেকে বের হয়ে ক্ষমতাসীন দলকে পরাজিত করেও চমক সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু সেই তিনিই শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে হেরে গেলেন। দুই বছর আগে ক্ষমতায় এসেছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু ওই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ক্ষমতায় থেকে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, আনোয়ার ইব্রাহিমকে বাদ দিতে গিয়ে নিজেই ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গেছেন। আনোয়ার ইব্রাহিমও ক্ষমতায় আসতে পারেননি, কিন্তু মাহাথিরের স্বপ্নও পূরণ হয়নি। মাঝ খান দিয়ে যে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিলেন মাহাথির-আনোয়ার, তারাই ক্ষমতায় ফিরে এলো।
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রোববার শপথ গ্রহণ করবেন। তিনি কিন্তু ঠিকই ঝোপ বুঝে কোপ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদটি বাগিয়ে নিলেন। আনোয়ার ইব্রাহিম চেষ্টা করেছিলেন মাহাথিরকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেখে দিয়ে তাদের আশার জোটটি টিকিয়ে রাখতে। মাহাথির মোহাম্মদও মনে করেছিলেন, তিনি কোনো না কোনো হিসাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি যে অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে তাতে নিজেকেও পড়তে হতে পারে। যখন তিনি বুঝেছেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর বাজি জীবন তাকে কি বিবেকের দংশনেই যন্ত্রণাতেই কাটতে হবে? সেটিই দেখার বিষয়। ২০১৮ সালে জোট গঠনের সময় বলেছিলেন, আগেরবার ক্ষমতায় থাকার সময় আনোয়ার ইব্রাহিমের ওপর তিনি অবিচার করেছিলেন। এর অবসান তিনি করতে চান। কিন্তু তিনি সম্ভবত ভুলটি আবারো করলেন।
মুহিউদ্দিনের পুরো নাম - তানশ্রী মুহিউদ্দীন ইয়াসিন। তিনি মালয়েশিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার বর্তমান বয়স ৭২ বছর। মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করছেন এই রাজনীতিবিদ। প্রায় ৯ বছর মালয়েশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য জোহরের পাগোহ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মুহিউদ্দিন। জোহর রাজ্যের জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ধর্মীয় শিক্ষকের ছেলে তিনি।
যে কারণে ছোট বেলা থেকেই স্থানীয়ভাবে সবার দৃষ্টিতে ছিলেন মুহিউদ্দিন। রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে বাবার প্রভাবও সাহায্য করেছে এ ক্ষেত্রে।
মালয়েশিয়ায় বেশ পরিচিত মুখ মুহিউদ্দিন। দেশটির ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস পার্টির প্রধান ও মাহাথিরের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারাপানের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট তিনি। ১৯৭৮ সালে পাগোহ থেকে প্রথম পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন মুহিউদ্দিন। এরপর থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
তবে দুর্নীতি নিয়ে রাজাকের সমালোচনা করার পর তাকে বহিষ্কার করেছিলেন তিনি।
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন একজন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞও। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ১৯৭০ সালে অর্থনীতিতে সম্পন্ন করেন মুহিউদ্দিন। এছাড়া মালায় ভাষা নিয়ে স্নাতক রয়েছে তার।