দিল্লির দাঙ্গা : কী করণীয়

জুলিও রিবেরিও | Feb 29, 2020 07:45 am
দিল্লির দাঙ্গা : কী করণীয়

দিল্লির দাঙ্গা : কী করণীয় - সংগৃহীত

 

প্রধানমন্ত্রী যখন কথা বলেন, জনসাধারণ তখন শোনে। কিছু নাগরিক তার কথায় সন্দেহ প্রকাশ করছে, তবে নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী অনুসারীরা জানে, তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন এবং কাজ বলতে তিনি কী বুঝেছেন। দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব এনএসএ অজিত দোভালকে প্রদান করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে তার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন।

মোদি মুসলিম গরু ব্যবসায়ীদেরকে পিটিয়ে হত্যা করা শুরুর পর হামলাকারীদের নিরুৎসাহিত করেননি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিন্তু তিনি যখন কথা বলেছেন, এরপর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে সামান্যই এবং এই খবর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা থেকেও উধাও হয়ে গেছে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামাতে দীর্ঘ সময় নেয়া হয়নি। এই কাজ করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই, যেমনটা অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরামর্শ দিয়েছেন। সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে বাইরের শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য, আমাদের বিভ্রান্ত লোকদের নিয়ে কাজ করার জন্য নয়। আর দাঙ্গাবাজদের মোকাবিলার জন্য পুলিশকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলেও তাদের দেখা যায়নি। এই ব্যর্থতার কারণ হলো এই যে রাজনৈতিক শ্রেণি কখনো সেনাবাহিনীকে বলে না যে কিভাবে লড়াই করতে হবে, কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে নির্দেশের প্রয়োজন হয়, প্রত্যক্ষ না হলেও, পুলিশ সাড়া দেয়, যেখাবে দিয়েছিল ২০০২ সালে গুজরাটে।

দিল্লি পুলিশের পেশাদাত্বি নিয়ে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারা তা করেছে বলে আমি খুশি। কারণ পুলিশ কমিশনার এখন বলতে পারবেন, কারণ এ ধরনের ঘটনায় তার কথা বলা উচিত। দিল্লি পুলিশের সমস্যা হলো এই যে তারা মহারাষ্ট্রের মতো তেমন নয়, বরং অনেকটাই উত্তর প্রদেশের মতো। তারা বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বদলে ক্ষমতায় থাকা দলের ইচ্ছা বাস্তবায়নে বেশি আগ্রহী থাকে।
দিল্লি পুলিশকে খুব বেশি দোষও দেয়া যায় না। কারণ এই বাহিনীকে খুব বেশি মাত্রায় রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, বিশেষ করে তাদেরকে যখন অমিত শাহের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। তিন দশক আগে গুজরাট পুলিশের প্রধান থাকার কারণে এর সিনিয়র পর্যায়ের সাথে আমার কিছু যোগাযোগ আছে। আর আমি জানি অমিত শাহের নির্দেশনার সরাসরি বিরোধিতাকারী পুলিশ অফিসারের কী হতে পারে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামাকে কী কী করতে হবে, তা শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা জানেন। যদি এক ঝটকায় সব সম্প্রদায়ের ইন্ধনদাতা আর ঝামেলা সৃষ্টিকারীদের আটকানো হয়, তবে বিরোধ সহজেই মিটে যায়। ১৯৮৪ সালে মুম্বাইতে আর ১৯৮৫ সালে আহমদাবাদে এই পদ্ধতিই ব্যবহার করেছিলাম এবং সাথে সাথে সফল হয়েছিলাম। তবে এই পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন পেতে হবে। কিন্তু দিল্লিতে এখন তা পাওয়া কঠিন। কারণ কেন্দ্র ক্ষমতায় থাকা দলের নেতারাই কারারুদ্ধ হওয়ার কথা সবার আগে।
অমিত শাহ কি তার মন্ত্রিসভার সহকর্মী অনুরাগ ঠাকুর বা সাবেক এমএলএ কপিল মিশ্রকে আটক করার অনুমতি দেবেন? আমার সন্দেহ হচ্ছে। তবে তা না করা হলে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য প্রয়োজনীয় ‘শক ট্রিটমেন্ট’ দেয়া যাবে না।

মুম্বাই ও আহমদাবাদে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি যে মুসলিমদের পক্ষে আন্ডারওয়ার্ল্ড গ্যাং লর্ডরা সম্প্রদায়টির রক্ষায় সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার কাজটি করে। তারা আগ্নেয়াস্ত্র কিনে তাদের লোকজনকে দেয়। দিল্লিতে এবারের দাঙ্গার সময় গুলিতে হতাহতের ঘটনায় এসব মাফিয়ার হাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কংগ্রেস আমলে মুম্বাইয়ে হাজি হাস্তান ও করিম লালা এবং আহমদাবাদের লতিফের মতো গ্যাং লিডারদের পাকড়াই করতে কষ্ট হতো তাদের ওপর রাজনৈতিক আশীর্বাদ থাকায়। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এ ধরনের বাধা দেখা দেয়নি। তবে এক পক্ষীয় পদক্ষেপ এই সমস্যার সমাধান করবে না,দলটি নিজস্ব নেতাদেরও মুসলিম গ্যাং লর্ডদের পাশাপাশি কারারুদ্ধ করতে হবে।
এখন খেলা শুরু হয়ে গেছে। বুধবার হাই কোর্ট তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও এফআইআর দায়েরের অনুমতি দিতে কেন্দ্রকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী হলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা করার জন্য স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে এমন লোকদের আনতাম যাদের রয়েছে অপেক্ষাকৃত নমনীয় হিন্দু ইমেজ।

প্রধানমন্ত্রী বেশ চতুরতার সাথে তার এনএসএকে (অবসরপ্রাপ্ত ধূর্ত সাবেক পুলিশ সার্ভিস কর্মকর্তা) পাঠিয়েছিলেন রাজধানী নগরীতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে। অদূর ভবিষ্যতে কোনো এক সময় এই ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। এটি বড় সমস্যা দ্রুত সমাধানে সহায়তা করে, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করিডোরগুলোতে পরিবর্তন প্রয়োজন।
জুলিও রেবিরিও : সাবেক পুলিশ কমিশনার, মুম্বাই, ডিজিপি গুজরাট, ডিজিপি পাঞ্জাম, সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, রোমানিয়া।

দি ওয়্যার


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us