অর্থ সঙ্কটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচন
অর্থ সঙ্কটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচন - সংগৃহীত
গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার তিন মাস পর শ্রীলঙ্কা এখন পার্লামেন্ট নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে।
যুদ্ধ হবে শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি, তাদের প্রার্থী গোতাবায়া রাজাপাকসা নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হন) ও রনিল বিক্রমাসিঙ্গে ও সাজিথ প্রেমাদাসার দ্বন্দ্বে-জর্জরিত ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা ২ মার্চ পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ২৫ এপ্রিল পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করবেন।
আসলে গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই এসএলপিপি পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে কর হ্রাসের মতো কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে। অবশ্য এতে সরকারের কোষাকার কার্যত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
অর্থ সঙ্কটে থাকা দেশটির জন্য নির্বাচন মানে একটি বিশাল বোঝা। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্যয় হবে ৬ বিলিয়ন শ্রীলঙ্কান রুপি। এটি বেড়ে ৭.৫ বিলিয়ন রুপিতেও দাঁড়াতে পারে।
নির্বাচন কমিশনও অর্থ সঙ্কটে ভুগছে। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরিচালনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের ২ বিলিয়ন শ্রীলঙ্কান রুপি এখনো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে দেশটির ইউএনএইচআরসি প্রস্তাব ৩০/১ কো-স্পন্সর থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রেক্ষাপটে। আগের ইউএনপি-নেতৃত্বাধীন সরকার পাশ্চাত্যের শক্তিগুলোকে খুশি করার জন্য এই প্রস্তাবটির কো-স্পন্সর হয়েছিল। এতে গৃহযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনেশ গুনবর্ধনে বুধবার জেনেভায় ইউএনএইচআরসির ৪৩তম অধিবেশনে বলেছেন যে তারা কো-স্পন্সরশিপ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে এই কারণে যে এটি অবাস্তব, অসাংবিধানিক ও অপ্রয়োগযোগ্য।
কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন যে এর ফলে দেশটি পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক অবরোধ ডেকে আনছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২০১০ সালে মহিন্দা রাজাপাকসার আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে যে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রত্যাহার করেছিল, সেটা ২০১৭ সালে পুনর্বহাল করা হলেও তা আবার আরোপ করা হতে পারে।
তবে বর্তমান সরকারের সাথে সম্পৃক্ত জাতীয়তাবাদীরা মনে করছে, এতে করে একটি কষ্টকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আবার অন্যরা বলছে, অবরোধের ফলে অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুথুকৃষ্ণা সর্বনান্দন বলেন, কর হ্রাসের ফলে সরকারের জন্য দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাবে। এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, সরকার যে ঋণ নিয়েছিল, তা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কর হ্রাস করার ফলে প্রতিদিনই সরকার অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বোপরি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ওইসব দেশ আবার অবরোধ আরোপ করতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন যে বর্তমান সরকারের ইউএনএইচআরসি প্রস্তাবের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণের মূল টার্গেট হলো সিংহলি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের খুশি করা। এখন হলো নির্বাচনের সময়। আর এই সরকার সিংহলি বৌদ্ধ ভোটের ওপর নির্ভরশীল। এই ভোটের জন্য তাদের কিছু কাজ করতেই হবে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনার মাইকেল ব্যাচেলেট ৩০/১ প্রস্তাবের কো-স্পন্সর থেকে শ্রীলঙ্কার প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশীয় প্রক্রিয়া ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন না। এই ব্যবস্থায় অতীতে কখনো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।
এসএএম