ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সমীকরণে পাকিস্তান

সৈকত দত্ত | Feb 28, 2020 07:44 am
নরেন্দ্র মোদি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইমরান খান

নরেন্দ্র মোদি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইমরান খান - সংগৃহীত

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফরে তাকে যে বিপুল সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে, পরিশেষে তার ফলাফল হয়েছে দৃশ্যত সে তুলনায় একেবারেই বেমানান। উভয় দেশ তিনটি ছোট ক্ষেত্রে চুক্তির কথা ঘোষণা করেছে, আরো সামরিক হেলিকপ্টার দিতে একটি চুক্তিতে সই করেছে এবং ‘শিগগিরই’ একটি বাণিজ্যচুক্তি হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই ‘সহজাত অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত হয়ে এলেও প্রায়ই তারা ছায়াযুদ্ধে মেতে থাকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের জন্য বিপুল আয়োজন করেছিলেন, কিন্তু ফলাফল কী হলো তা প্রশ্নই রয়ে গেল।

দ্বিপক্ষীয়ের বদলে নির্বাচনী
এক সিনিয়র ভারতীয় কূটনীতিক বলেছেন, এত বিপুল জনসমাবেশ ট্রাম্পের নিজ দেশেও দেখার সম্ভাবনা নেই। এই দিক থেকে এটি একটি সফল সফর এবং নভেম্বরে দেশে ভারতীয় আমেরিকান ভোট ব্যাংকের সমর্থন লাভে তা সহায়ক হবে।
কিন্তু নির্বাচনী সাফল্য ও দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত রসায়ন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোতে মতানৈক্য অব্যাহত রয়েছে। বিদেশী পর্যবেক্ষকেরা লক্ষ্য করেছেন যে কয়েক মাস ধরে তীব্র আলোচনা সত্ত্বেও বাণিজ্যচুক্তি হয়নি এবং তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র শান্তিচুক্তি সই করার প্রস্তুতি গ্রহণের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান আবার চালকের আসনে ফিরে এসেছে।

ভারতীয় কূটনীতিকরা লক্ষ্য করেছেন যে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করা সত্ত্বেও ট্রাম্প কিন্তু পাকিস্তানকে টার্গেট করেননি। অবশ্য অতীত ঐতিহ্যে বড় ধরনের লঙ্ঘন ঘটিয়ে তিনি ভারত সফরের পর পাকিস্তান যাননি। আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সবসময় দক্ষিণ এশিয়ায় সরকারি সফরে উভয় দেশেই যেতেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশ তিনটি সমঝোতা স্মারকের কথা ঘোষণা করেছেন। মানসিক স্বাস্থ্য, চিকিৎসা পণ্যের নিরাপত্তা ও জ্বালানি সরবরাহ প্রশ্নে সহযোগিতা নিয়ে তারা চুক্তির কথা ঘোষণা করেছে।
এছাড়া আরো কিছু সামরিক হেলিকপ্টার বিক্রি করতে পেরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুশি হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অরুন সিং বলেন, তার মূল্যায়নে সফরটি সফল প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সফরটি ভালোমতোই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মিডিয়াতে নজিরবিহীন ও ঐতিহাসিক সফর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। উভয় দেশ আসলে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে।
সিং বিশ্বাস করেন যে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে, বিশেষ করে চলতি বছরের নভেম্বরের পর।

ব্যকরণ অনুসরণ করা
ট্রাম্প-মোদি বৈঠকের অংশ হিসেবে উপস্থিত থাকা ভারতীয় কূটনীতিকরা বলেছেন, ট্রাম্প তার সহজাত তাৎক্ষণিক মন্তব্য থেকে বিরত ছিলেন।

এক কূটনীতিক বলেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্যক্তিগত আলাপের সময়ও ট্রাম্প দৃশ্যত তার সফরটি যাতে ব্যকরণসম্মত হয়, সে দিকে সতর্ক ছিলেন। তিনি কোনো ফালতু বা সমালোচনামূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন।
দিল্লির কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে ভারতীয় কূটনীতিকরা উত্তেজিত ছিলেন। কিন্তু এই দাঙ্গা, কাশ্মিরের উত্তেজনা কিংবা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন- কোনো কিছু নিয়েই ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করেননি।
আরেক ভারতীয় কূটনীতিক এশিয়া টাইমসকে বলেছেন, এর মাধ্যমে দেশে ট্রাম্প এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে তিনি আন্তর্জাতিক মানের নেতা এবং বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতে সক্ষম।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান প্রস্তাবিত শান্তচুক্তি এবং এতে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দিল্লি এখনো উদ্বিগ্ন। ভারতীয় কৌশলবিদেরা নিশ্চিত যে এর ফলে পাকিস্তান চালকের আসনে বসবে এবং তাদেরকে বেশ বড় ধরনের ঝামেলায় ফেলবে।

আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট ওই কূটনীতিক আলো বলেন, আমরা এই চুক্তি নিয়ে আসলেই অস্বস্তিতে নেই। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে আমাদের স্বার্থ সুরক্ষা করা হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা ফিরে পেতে পারে ভারত। এ নিয়ে দুই পক্ষ শিগগিরই কাজ শুরু করবে।
রাষ্ট্রদূত সিং বলেন, দুই দেশ ব্যাপকভিত্তিক বাণিজ্যচুক্তি করার অপেক্ষা করছে। ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এইচ১বি ভিসার ওপর কড়াকড়ি অব্যাহত থাকবে। ফলে যারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য খুশির খবর আছে সামান্যই।

এশিয়া টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us