কী আছে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে
এমএইচ-৬০আর সিহক হেলিকপ্টার - সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৬ ঘণ্টার সফর শেষ করে দেশে ফিরে গেছেন। এই সফরে অর্থনৈতিক বা ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছু না থাকলেও অস্ত্র বিক্রির চুক্তি হয়েছে। এখন দেখা যাক, কী আছে এই চুক্তিতে।
প্রতিরক্ষা চুক্তি
মঙ্গলবার নয়া দিল্লিতে ভারতের সাথে ৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি চুক্তি চূড়ান্ত করার ফলে ট্রাম্প নির্বাচনের আগ দিয়ে তার আমেরিকান ভোটারদেরকে বলতে পারবেন যে তিনি এই বিক্রির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় নৌবাহিনী ২৪টি এমএইচ-৬০আর সিহক হেলিকপ্টার পাবে। বিশ্বে এগুলোই সর্বাধুনিক সমুদ্র হেলিকপ্টার বিবেচিত হয়। লকহিড মার্কিটনের তৈরী এমএইচ-৬০আর সিহক হেলিকপ্টার ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াবে, আবার তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও লাভজনক হবে। কারণ চীনের বিরুদ্ধে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় ভারতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা চায় যুক্তরাষ্ট্র। এসব হেলিকপ্টার অত্যন্ত কার্যকর সোনার রিকনসান্সের মাধ্যমে সাবমেরিনে আঘাত হানতে পারে। এমএইচ ৬০ মাল্টি-রোল রোমিও কিরোর স্কাই পুরনো হয়ে যাওয়া ব্রিটিশের নির্মিত কিং হেলিকপ্টারের স্থলাভিষিক্ত হবে এবং দুই বছরের মধ্যে লকহিড মার্কিট এগুলো সরবরাহ করবে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ছয়টি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার পাবে। বোয়িং এএইচ-৬৪ অ্যাপাচি হলো টুইন-টার্বো শ্যাফট অ্যাটাক হেলিকপ্টার। এতে রাতে অভিযান চালানোর মতো ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ভারতীয় বিমান বাহিনী এ ধরনের ২২টি হেলিকপ্টারের অর্ডার দিয়েছিল। এর সাথে এবার আরো ছয়টি হেলিকপ্টার যুক্ত হচ্ছে। রাশিয়ার পুরনো এমআই ২৫/৩৫ গানশিপের স্থলাভিষিক্ত হবে অ্যাপাচিগুলো।
অ্যাপাচি হেলিকপ্টার দেশেই তৈরী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি মোদির মেক ইন ইন্ডিয়া প্রচারণাকে জোরদার করবে। বোয়িং ও টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমসের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে এগুলো তৈরী করা হবে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব হেলিকপ্টারের খুচরা যন্ত্রাংশ ভারতীয় সরবরাহকারীরা দেবে। অবশ্য মোদির মেইক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচির এখন পর্যন্ত যে অবস্থা এবং ভঅরতের শিল্পায়নের মন্থর গতির কারণে ভারতে হেলিকপ্টার নির্মাণের পরিকল্পনা অবাস্তব বিষয়।
মোদির সাথে ভারতীয়দের জন্য ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু নিয়ে কথা না বলে ট্রাম্প আমেরিকায় আমেরিকান নাগরিকদের জন্য চাকরির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইরান ও ভেনেজুয়েলার বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও গ্যাস কেনার জন্য ভারতের সাথে চুক্তির ফলে বর্তমানে মন্থর হয়ে পড়া মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সহায়তা করবে।
পররাষ্ট্রনীতি
হেলিকপ্টার বিক্রির মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরে চীনকে নিযন্ত্রণে রাখার কাজে ভারতকে কাছে পেয়েছেন ট্রাম্প। এসব সর্বাধুনিক হেলিকপ্টার চীনা রণতরী ও সাবমেরিনগুলোকে খুঁজে পেতে মহাসাগর চষে ফেলবে। এসব হেলিকপ্টার পেয়ে নয়া দিল্লি কোয়াড্রিলেটারাল (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া) জোট নিয়ে তার আপত্তি ঝেড়ে ফেলবে বলে আশা করছেন ট্রাম্প। চীনকে ক্ষুব্ধ করার শঙ্কায় কোয়াডে যোগ দিতে আগ্রহী নয় ভারত।
পাকিস্তান ফ্যাক্টর
ভারত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ থেকে বিরত রাখতে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিল। এ ব্যাপারে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান এড়িয়ে যান ট্রাম্প। তিনি বলেন যে পাকিস্তানি মাটি যাতে সন্ত্রাসীদের প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে তিনি পাকিস্তানি নেতা ইমরান খানের সাথে তার সুসম্পর্ককে কাজে লাগাবেন।
পাকিস্তানের ব্যাপারে সতর্কভাবে প্রণীত নীতি অনুসরণ করেন ট্রাম্প। আফগানিস্তানের তালেবানের সাথে টেকসই শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করা ও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই সেখান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা তার জন্য খুবই প্রয়োজন। তিন বলেন, যে পাকিস্তানের সাথে তার সম্পর্ক ভালো হচ্ছে। এর মানে হলো এই যে আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে না আসা ও মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের আগে পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করবেন না।