আফগানিস্তানে তালেবানের অভাবিত জয়
আফগানিস্তানে তালেবানের অভাবিত জয় - ছবি : সংগ্রহ
আফগানিস্তানের সশস্ত্র গ্রুপ তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন শান্তি চুক্তিকে সামনে রেখে আফগান সরকার নিজেই যেন নিজের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ সাম্প্রতিক নির্বাচনে ফলাফল বর্জন করেছেন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানিকে সামান্য ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে তিনি নিজের মতো করে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠন করবেন।
এখন অনেক আফগানই মনে করছেন যে নির্বাচনী বিবাদের কারণে তালেবানের জন্য সুবিধা হবে। তালেবান ও মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি জালমাই খলিলজাদ একমত হয়েছে যে, মার্চে সাত দিনের যুদ্ধবিরতির পর তারা শান্তিচুক্তি করবে। যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে শনিবার। তালেবান কাবুল সরকারকে বৈধ হিসেবে কখনো স্বীকার করেনি এবং তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল সরকার আখ্যা দিয়েছে। তাদের সাথে আলোচনার বিষয়টিও নাকচ করে এসেছে তালেবানরা। এ কারণে শান্তি আলোচনায় তারা মূলত আফগানিস্তানের বিভিন্ন ‘অভ্যন্তরীণ পক্ষগুলোর’ সাথে বিনিময় করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের বিবৃতিতেও এই কথাই বলা হয়েছে।
কিছুদিন আগ পর্যন্ত সরকার নিয়মিত বলে এসেছিল যে তালেবান বিভক্ত এবং তাদের সাথে আলোচনা সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে কাবুলের অবস্থাই বেশি খারাপ এবং তারাই দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি বিভক্ত।
সরকারের টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসতে যাচ্ছে। বা তালেবানরা অন্তত তেমনটাই দাবি করবে বলে আশঙ্কা করছে অনেক আফগানরা। কাবুলের এক চিকিৎসক মোহাম্মদ হানিফ বললেন, “দুঃখের বিষয় হলো কিছু মানুষ ফলাফল নিয়ে খুশি নয়। সেটা আমি বুঝি। কিন্তু তাদের অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত সুবিধাটা শুধু দেখছেন। আফগান জনগণকে এক হয়ে মাথা উঁচু করে শত্রুর মুখোমুখি হতে হবে। এই সঙ্কটে শত্রুরাই শুধু লাভবান হবে”।
বৈধতার সমস্যাটা সবসময়ই ছিল। এটা তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যেখানে আনুষ্ঠানিক ফলাফল মানতে অস্বীকার করলেন আব্দুল্লাহ। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগতো রয়েছেই। ২০০৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের বিরুদ্ধে হেরে যান আব্দুল্লাহ। ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচনে ঘানির কাছে হারেন আব্দুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করে দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে সমঝোতা করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের বহু সমালোচক বিশ্বাস করেন যে, আফগানদের ভোটে নয়, বরং কেরির সিদ্ধান্তেই প্রেসিডেন্ট হয়েছেন গানি।
এই মুহূর্তে কেরির ভূমিকায় নেমেছেন খলিলজাদ। কাবুলে অবতরণের পর সরকারের উভয় ক্যাম্পেরই বেশ কয়েকজনের সাথে বৈঠক করেছেন তিনি। কিছু পর্যবেক্ষক এটাকে ‘দ্বিতীয় শান্তি প্রক্রিয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন। রয়টার্স সোমবার জানিয়েছে যে, খলিলজাদ ঘানিকে তার শপথ গ্রহণের সময় পিছাতে বলেছেন, যাতে বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্য সময় পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক আফগান আবার আশঙ্কায় আছেন যে, তালেবান হয়তো আবার দেশের দখল নিতে পারে। তাই, আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধেও সমালোচনা বাড়ছে এখন।
কাবুলে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আহমেদ ফাওয়াদ। তিনি বললেন, “[আব্দুল্লাহ] যেটা করছেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মনে করে এটা আইনবিরোধী হচ্ছে। কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে নিজের মতো সরকার গঠন করতে পারেন না তিনি। তার এমনকি বাজেট পর্যন্ত নেই”। স্থানীয় নাগরিক সমাজের এক কর্মী বললেন,“সব প্রার্থীকে ফল মেনে নিতে হবে। চলমান শান্তি প্রক্রিয়াকেও খাটো করা যাবে না”।
অনেক সমালোচক বলেছেন যে, পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটাই পুনরায় যাচাই করে দেখতে হবে। নির্বাচন কমিশনের মতে, নির্বাচনের সময় নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ছিল ৯.৭ মিলিয়ন। কিন্তু মাত্র ১.৯ মিলিয়ন মানুষ ভোট দিয়েছে। আর নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে এক লক্ষাধিক মানুষের ভোট বাতিল হয়ে গেছে।
এই সব বিভিন্ন কারণে তালেবান হয়তো নিজেদেরকে জোরালো অবস্থানে দেখতে পাবে। আমেরিকানরা যখন তালেবানকে সরকারের কর্মকর্তাদের বাইরের অন্য প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করতে বলেছিল, তখন তারা নিজেরাও ভাবেনি যে পরিস্থিতি এমন হবে।
সূত্র : ফরেন পলিসি