ভারতে সাবমেরিনের ধাক্কায় ডুবছে বিমানবাহিনীর রণতরীর পরিকল্পনা!
ভারতে সাবমেরিনের ধাক্কায় ডুবছে বিমানবাহিনীর রণতরীর পরিকল্পনা! - সংগৃহীত
ভারতের নতুন প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত সাবমেরিনকে অগ্রাধিকার দিতে চাচ্ছেন। এর ফলে নৌবাহিনীর তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী হাসিলের পরিকল্পনা নস্যাৎ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চীন ও পাকিস্তানের মতো আঞ্চলিক খেলোয়াড়রা যখন তাদের নৌবাহিনীকে আধুনিক করে চলেছে তখন এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি ও দুর্বলতাকে প্রকাশ করে দেবে।
ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াত সম্প্রতি বলেছেন যে, ভারতের হাতে দুটি বিমানবাহী রণতরী থাকার পর সাবমেরিন বহরকে নি:শেষ হতে দেয়া যাবে না। ফলে সাবমেরিনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১০ ফেব্রুয়ারি দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি ভারতের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীর প্রয়োজন আছে কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন। রাওয়াত বলেন, প্রয়োজন হলে সেটা কেনা হবে। কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর পর পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা আপানি বলতে পারেন না। আমরা জানি না কি হবে।
ভারতের সাবমেরিন কর্মসূচির মধ্যে স্থানীয়ভাবে পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরি থাকতে পারে। বিশেষ করে দেশটি চায় পরবর্তী প্রজন্মের ছয়টি অ্যাটাক সাবমেরিনের বহর গড়ে তুলতে। এতে ভারতীয় নৌবাহিনীর সক্ষমতা ও পাল্লা অনেক বাড়বে। ফ্রান্সেরও সমসংখ্যক পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে।
ভারতের অরিহন্ত ক্লাস পারমাণবিক সাবমেরিন এরই মধ্যে প্রতিরোধক টহল শুরু করেছে। ভারতের নতুন কে-৪ ব্যালিস্টিক মিসাইল গত জানুয়ারিতে সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া একটি এস-৫ শ্রেণীর মিসাইল সাব নির্মাণের কাজ চলছে।
অনেক দিন ধরেই তৃতীয় একটি বিমানবাহী রণতরী নির্মাণের পরিকল্পনা করছে ভারত। আশা করা হয়েছিলো যে এটি বর্তমানে হাতে থাকা দুটির চেয়ে আরো দীর্ঘ হবে। রণতরীর নামও দেয়া হয়ে গেছে – আইএনএস বিশাল। অথচ ভারতের দ্বিতীয় ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রান্ত এখনো নির্মাণাধীন। এই প্রকল্প অস্বাভাবিক ধীর গতিতে চলছে এবং এখনো সার্ভিসে যোগদানের উপযুক্ত হয়নি। তাই তৃতীয় ক্যারিয়ার বাতিলের কথা রাওয়াত বলতে পারেন।
ক্যারিয়ার নিয়ে সিডিএস-এর ইতস্তত ভাবটি গুরুত্বপূর্ণ। চীনের দুটি ক্যারিয়ার সার্ভিসে রয়েছে। প্রতিটি ৬৫,০০০ টনের, যা ভারতীয়গুলোর চেয়ে বড়। বিশাল একই আকারের হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়। চীন তৃতীয় ক্যারিয়ার তৈরি করছে এবং চতুর্থটির পরিকল্পনা করছে বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে পাকিস্তান ও চীন- দুই দেশই তাদের সাবমেরিন বহন আধুনিকায়ন করে চলেছে। পাকিস্তান তার সাবমেরিনগুলোকে ক্রুজ মিসাইল ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তুলছে। এতে তুরস্কের জারগানা এন্টি-টর্পেডো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্ত করা হচ্ছে। চীনের কাছ থেকে তারা ৮টি টাইপ-০৩৯বি সাবমেরিন কিনছে। এগুলো হবে এয়ার-ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার (এআইপি)-যুক্ত। ফলে এগুলোর স্টেলথ ক্ষমতা বাড়বে। ভারতের অপারমাণবিক সাবমেরিনগুলোতে এআইপি ব্যবস্থা নেই।
ভারত বিশাল প্রকল্প বাদ দিলে তা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি আঘাত হবে। মূলত আমদানি করা সরঞ্জাম দিয়ে এই ক্যারিয়ার তৈরি করা হতো। বর্তমানে নির্মাণাধীন বিক্রান্ত ক্লাস ক্যারিয়ার ডিজাইন করা হয়েছে ইটালির সহায়তা নিয়ে। ফলে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়রা আশা করেছিলো তারাই বিশালের ডিজাইন করবে। রাশিয়া ও ব্রিটেন এই লাইনে ছিলো।
বিশাল নির্মাণ করা হলে ভারতীয় সাবমেরিন কর্মসূচিও উপকৃত হতো। এগুলো ক্রমেই দেশে তৈরি করা হচ্ছে রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের ডিজাইন অনুসরণ করে। ভারতে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্পগুলোও রাশিয়ার দ্বারা প্রভাবিত। যদিও সার্বিকভাবে এগুলোকে স্থানীয় ডিজাইন হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অরিহন্ত ক্লাস সাবমেরিনে রাশিয়ার কিলো-ক্লাস সাবমেরিনের ছাপ স্পষ্ট।
তবে মনে হয় আইএনএস বিশাল প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাব বাতিল করা হবে না। কিন্তু কখনো যদি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হয় সেটা হবে অনেক অনেক বছর পর।
সূত্র : এসএএম