পাকিস্তানের প্রতি নমনীয় হয়ে পড়েছেন ট্রাম্প?

স্ট্যানলি জনি | Feb 26, 2020 09:21 am
ইমরান খান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

ইমরান খান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প - সংগৃহীত

 

সোমবার আহমদাবাদের নবনির্মিত মোতেরা স্টেডিয়ামে বিপুলসংখ্যক লোকের সামনে বক্তৃতা করার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও এর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশংসা করে স্পষ্টভাবে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। ট্রাম্প ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রশংসা করেছেন, ভারতকে ‘সর্বোত্তম ও সবচেয়ে ভীতি প্রদর্শনকারী সামরিক সমঞ্জাম’ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং একসাথে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা আবার ব্যক্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেছেন, যেটাকে তিনি অভিহিত করেছেন ‘খুবই ভালো...’ হিসেবে। তিনি আরো বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সাথে বিপুল অগ্রগতি হাসিলের সূচনা করতে যাচ্ছি আমরা।‘

আহমদাবাদে প্রকাশ্য একটি সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাশে রেখে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নতি নিয়ে ট্রাম্পের দৃঢ় ঘোষণাটি বেশ মজার। বিষয়টি ঘটনাক্রমে উল্লেখ নয়। পাকিস্তানকে নিঃসঙ্গ করার ভারতের প্রাণান্তর চেষ্টা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন ও ইসলামাবাদ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করার টেকসই প্রয়াস চালিয়েছে।
তালেবানের সাথে শান্তি
ট্রাম্প যখন ভারত সফর করছিলেন তখন আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও তারেবান সাত দিনের সহিংসতা হ্রাস কর্মসূচি পালন করছিল। এই পরীক্ষামূলক মেয়াদে যদি বড় ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে তবে উভয় পক্ষ একটি শান্তি চুক্তিতে সই করবে। এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্র তার সৈন্য প্রত্যাহার করবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে।
আফগান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের (তারা তালেবানের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান) নেতাদের আতিথ্য প্রদানকারী পাকিস্তান তাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনার ব্যবস্থা করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান ত্যাগ করে, তবে তা সরাসরি আফগানিস্তানের তালেবানের হাতকে শক্তিশালী করবে। এর অর্থ হলো, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের মর্যাদা বেড়ে যাবে। ফলে ভবিষ্যতে আফগান রাজনীতি বিনির্মাণে পাকিস্তানের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।

পাকিস্তানের সাথে নতুন করে সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে বিন্যস্ত করার বৃহত্তর প্রেক্ষাপট এটি হলেও আরো কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ও উপেক্ষা করা যায় না। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলার পর ও এরপর হওয়া ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার আকাশযুদ্ধের পর ট্রাম্প প্রশাসনকে মন্ত্রমুগ্ধ করার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ইমরান খান যখন ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন, তখন ট্রাম্প কাশ্মির সঙ্কট নিরসনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য মধ্যস্ততা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর এর মাধ্যমে তিনি বস্তুত পাকিস্তানি অবস্থানকেই অনুমোদন করেছিলেন। উল্লেখ্য, ভারত সবসময়ই বলে আসছে যে কাশ্মির হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় ইস্যু।

ইমরান খানের সফরে সামরিক মাত্রাও ছিল। ওই সফরের কয়েক দিন আগে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ মর্যাদার অফিসার জেনারেল মার্ক মিলে বলেছিলেন যে পাকিস্তানের সাথে জোরালো সামরিক সম্পর্ক রক্ষা করা হলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সর্বোত্তমভাবে রক্ষিত হবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল মিলের দৃষ্টিভঙ্গি অনুমোদনকারী এক পদক্ষেপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আবার শুরু করে। ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং প্রগ্রাম (আইএমইটি) অনেক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতার মূল স্তম্ভ বিবেচিত হয়ে আসছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে ধ্বংস করতে পাকিস্তানকে বাধ্য করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালে পাকিস্তানের ২ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর পুলওয়ামা হামলা হয়েছিল। জামায়াত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সাঈদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের ছাড়া আর তেমন কিছুই করেনি পাকিস্তান। কিন্তু ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা শুরু করে।

কালো তালিকাভুক্তি নয়
পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয় নীতির সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো চীনের পাশাপাশি ওয়াশিংটনও ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) পর্যালোচনা সভায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেনি। পাকিস্তান এই অর্থপাচার প্রতিরোধক এই সংস্থার ধূষর তালিকায় রয়েছে। ভারত চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানকে কালো তালিকায় ফেলার জন্য। তা করতে পারলে পাকিস্তানের আর্থিকব্যবস্থার ওপর বিধিনিষেধ নেমে আসত। কিন্তু বেইজিংয়ের বৈঠকে কালো তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি হলো সীমিত সুরক্ষা দিয়ে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে ভারতের সাথে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা। ট্রাম্পের সফরের আগে পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা দি হিন্দুকে বলেন যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ট্রাম্প কাশ্মির ইস্যুটি তুলতে পারেন। ভারতের প্রকাশ্য প্রতিবাদ সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট একাধিকবার দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দিয়েছেন। ভারতীয় পক্ষের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক গভীর করার প্রায়স অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পাকিস্তান ফ্যাক্টরের সাথে সমন্বয় সাধন করা কিংবা তা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় বের করা কিংবা এর সমাধান করা।

দি হিন্দু


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us