মোদিকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা তুললেন ট্রাম্প!
তাজমহলের সামনে ট্রাম্প দম্পতি - সংগৃহীত
ট্রাম্প-মোদি দহরম-মহরমের যৌথ বিবৃতি কেবল হেলিকপ্টার চুক্তি দিয়েই শেষ হয়েছে। ট্রাম্প তার চতুর কূটনীতির আশ্রয় নিয়ে মোদিকে ফাঁকা বুলিতে তুষ্ট করার কাজ করে গেছেন।
যৌথ বিবৃতির সময় মোদির কাঁধ সোজা হয়েই থাকে, এবার আর এবার মোদিকে কোলাকুলি করা থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হন ট্রাম্প। ট্রাম্প যখন চরমপন্থার ব্যাখ্যা দীর্ঘ করতে থাকেন, তখন আশাবাদী মোদি হতাশার সাথে পাঞ্জা লড়েন আবারো। এই চরমপন্থা মোদির আমলে তার থাবা বেশ বিস্তৃতই করেছে।
যৌথ বিবৃতি যখন ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন হিন্দুত্ববাদের প্রাণঘাতী আগুনে পুড়ছিল নয়া দিল্লি। চরমপন্থা অঙ্কুরেই গুঁড়িয়ে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি যৌথ বিবৃতিতে দেয়া হয়েছে, সেটি দেশেই শুরু করতে হবে। ভারতে চরমপন্থা বাড়ছে এবং মোদিই এ জন্য দায়ী।
প্রলাপ বকতে থাকা ভারতীয় মিডিয়া নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারছে না। পাকিস্তানকে রাষ্ট্রগুলোর তালিকা থেকে মুছে ফেলার তাদের বুনো ইচ্ছা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ট্রাম্প পাকিস্তান সম্পর্কে নমনীয় অবস্থান প্রকাশ করায় ভারতীয় আকাঙ্ক্ষাকে ভাসিয়ে দিয়েছে। অথচ এর জন্যই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একইসাথে নমস্তে ট্রাম্প ধাঁধা নিয়ে নানা সুর চড়ালেও মিডিয়া শেষ পর্যন্ত ফাঁকা আওয়াজ করেই শেষ করেছে।
অন্য দিকে প্রচণ্ড বিক্ষোভ ফেটে পড়েছে দিল্লিতে। সহিংসতায় প্রাণ গেছে ডজন খানেক লোকের।
অমিত শাহ শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোঝা গেছে যে যুক্তি আর মতাদর্শের বিকল্প কোনোভাবেই শক্তি আর ক্ষমতা হতে পারে না। দিল্লির রাজপথে যারা নেমে এসেছে তারা যুক্তি আর মহৎ উদ্দেশে কাজ করছে। তবে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সে দিকে কর্ণপাত করার চেষ্টা করেনি।
হিন্দুত্ববাদ মতাদর্শের মূল উপাদান ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়েছে এবং এটিই সবদিকে সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কোনো যুদ্ধের তত্ত্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
নমনীয় ভারতের কৃত্রিম ভাবমূর্তি ছিল ভ্রান্তিবিলাস। এখন এর কদর্য রূপটি প্রকটভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্ব সতর্ককভাবে উদাসীন মোদিকে লক্ষ্য করছে। মোদি অবশ্য একই ছবির দুটি ভুয়া দিককে প্রদর্শন করার বেপরোয়া ও ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। মোদির শান্তি, সুষমতা, সামাজিক ও ধর্মীয় সাম্য, নিরপেক্ষতার বার্তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। বিশ্ব ভারতকে চরমপন্থায় গ্রাস করার দৃশ্য দেখে যাচ্ছে।
ভারতীয় রাষ্ট্রের বিভেদ রেখাটি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে এবং অতি উগ্রপন্থার ধাক্কা ভারতকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলছে। এই উগ্রপন্থা সেক্যুলার ভারতের জন্য কেবল খারাপই নয়, সেইসাথে বিশ্বের মধ্যেও এর একটি খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করে দেশটির বিশেষ অবস্থানের কারণে।
ভারতের মিডিয়া, সরকার ও বিশ্লেষকদের বাস্তবতার আরেকটু ভালো অমৃত পান করতে হবে, আর স্বীকার করতে হবে যে ট্রাম্প ভারতে এসেছিলেন ৩৬ ঘণ্টার সাংস্কৃতিক সফরে এবং এর পুরোটাই ছিল ট্রাম্পের জন্য।
ট্রাম্পের সফরকে বিপুল কৌশলগত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে নতুন অবয়বে গড়ে তোলা ফলপ্রসূ কিছু নয়। এসব কিছু চাওয়া থেকে ভারতকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলোতে কোনোই ফায়দা নেই। ভারতে সাংস্কৃতিক সফরে এসে ট্রাম্প পরিবার দারুণ সময় কাটিয়েছে এবং তাজমহলের মাধ্যমে ফুটে ওঠা মোগল স্থাপত্যে চমকে গেছে।
ট্রাম্পের ৩৬ ঘণ্টার ভারত সফর খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। এখন বিস্ময় সৃষ্টির ট্রাম্পের প্রতিভার প্রশংসা করতেই হবে। তিনি দুবার কাজটি করেছেন, সরকার ও মিডিয়া উভয়কেই বিস্মৃত করেছেন। একবার মনতেরায় এবং তারপর যৌথ বিবৃতিতে। মোদি একাকী পড়ে আছেন সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ বিভাজন ব্যবস্থাপনায়।
গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস