খালেদা জিয়ার মুক্তি : দুই বিকল্প
খালেদা জিয়া - সংগৃহীত
বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য হলেও খালেদা জিয়া এবার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাবেন এমন আশা জিইয়ে রেখেছে বিএনপি। যদিও দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ এমন আশায় বুক বাঁধতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে আদালতের ওপর তাদের আস্থাহীনতা যেমন রয়েছে, তেমনি তারা মনে করছেন, কঠোর আন্দোলন ছাড়া বেগম জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। সরকারের সাথে বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে কোনো সমঝোতার কথাও তারা আমলে নিতে চাইছে না। যদিও বেশ কিছু দিন ধরে এমন তৎপরতার কথা শোনা যাচ্ছে। অন্তরালের ঘটনা যাই হোক বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে উদ্বিগ্ন বিএনপির নেতাকর্মীরা। যেকোনো উপায়ে হোক মুক্তিই চাওয়া তাদের বেশির ভাগের।
গত রোববার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি হয়। ওই দিন আদালত মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী- খালেদা জিয়া অ্যাডভান্স থেরাপির জন্য সম্মতি দিয়েছেন কি না, দিলে সেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না, চিকিৎসা শুরু হলে এখন কী অবস্থা, তা জানিয়ে আজ বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন আদালত।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ প্রতিবেদন জমা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদালতের রায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে বিএনপি। আজ চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে রায় এবং এর পরে দলের সিদ্ধান্ত কী হওয়া উচিত তা নিয়ে নেতারা আলোচনা করবেন। বৈঠকে আদালতে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ কী ধরনের প্রতিবেদন দিচ্ছে, আইনজীবীরা কতটা প্রস্তুত এসব বিষয়ে পর্যালোচনার পাশাপাশি জামিন না হলে পরবর্তী করণীয় কী হবে তা ঠিক করা হবে।
জানা গেছে, জামিন না হলে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে একাধিক কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। এ ছাড়া জামিন না হলে জিয়া পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী প্যারোলের আবেদন করা হবে কি না তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
বিএনপির সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের একটি অংশ প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির পক্ষে। খালেদা জিয়ার মত নিয়ে পরিবার যে সিদ্ধান্তই নেবে দলীয়ভাবে বিএনপি তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। তবে বিএনপির নেতাদের একটি অংশের প্যারোল নিয়ে ভিন্ন মত আছে। তারা মনে করে, জামিনে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়ার আইনগত অধিকার। প্যারোল নেয়ার অর্থ হলো সরকারের অনুকম্পা নেয়া এবং নতি স্বীকার করে নেয়া।
খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ও পরবর্তী করণীয় প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, উচ্চ আদালত বিএসএমএমইউর কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন। বিএসএমএমইউর চিকিৎসক, মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা চিকিৎসকের বিবেক-সততা ও দায়িত্ববোধ থেকে রোগী হিসেবে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থার প্রকৃত তথ্য হাইকোর্টে দেবেন এবং উচ্চ আদালত তার প্রতি সুবিচার করবেন সেই প্রত্যাশা করছি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করছে। সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা না হলে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। আদালতে জামিন না হলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বিএনপি।
প্যারোলে মুক্তির আবেদনের সম্ভাবনার বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এটা একান্তই বিএনপির চেয়ারপারসন ও তার পরিবারের বিষয়।