৪৫০ দিন পর...
ডবল সেঞ্চুরির পর মুশফিক - ছবি : ইএসপিএনক্রিকইনফো
টেস্ট ক্রিকেটে একটি জয়ের জন্য হাহাকার করছিল বাংলাদেশ। দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই জয়ের দেখা পাচ্ছিল না টাইগাররা। একের পর এক হারে হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে উদ্দীপ্ত হওয়ার জন্য অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। এই জয় যেন-তেন ছিল না, এক ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল ব্যবধানের জয়। সফরকারী জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দীর্ঘ ৪৫০ দিন পর জয়োল্লাসে মাতল বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। তাদের সাথে হাসল বাংলাদেশ।
গতকাল মঙ্গলবার মিরপুরে জিম্বাবুয়ে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৮৯ রানে অল আউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের স্কোর ছিল যথাক্রমে ১৬৫ ও ৬ উইকেটে ৫৬০ রান।
বাংলাদেশের এই জয়ে অনেকটা অবদান রেখেছেন তরুণ নাঈম হাসান। তিনি একাই জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন-আপ ধসিয়ে দিয়েছেন। শিকার করেছেন ৯ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি বেশি ভয়ঙ্কররূপে দেখা দেন। পাঁচটি উইকেট ঝুলিতে পুরেন। এর আগে প্রথম ইনিংসে শিকার করেন চারটি উইকেট।
তার সাথে ছিলেন অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম। তিনি দুই ইনিংসে মোট ছয়টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে দুটি আর দ্বিতীয় ইনিংসে চারটি। আবু জায়েদ রাহিও কম যাননি। তিনি পেয়েছেন মোট চারটি উইকেট।
তবে বোলারদের লড়াই করার ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানেরা। এর মধ্যে অন্যতম মুশফিকুর রহিম। তার অনবদ্য ২০৩ রানে বড় লিড পায় বাংলাদেশ। পরে অবশ্য বলেছিলেন, সুযোগ দেয়া হলে তিনি ট্রিপল সেঞ্চুরিই করতে পারতেন।
মুশফিকের আগে সেঞ্চুরি হাঁকান টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল হক। অধিনায়ক হিসেবে এটি তার প্রথম শতক। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পেরে তিনি গর্বিত হতেই পারেন। এছাড়া অর্ধশত করেন লিটন দাস। আর ৪১ রান করেন তামিম ইকবাল।
হারের বৃত্ত থেকে বের হওয়া
এই ম্যাচের আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২ ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ছয়টি টেস্টে হেরেছে তারা।
গত বছর মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এরপর চট্টগ্রামে সফরকারী টেস্ট পরিবারে নবাগত আফগানিস্তানের কাছে বড় ধরণের পরাজয়ের লজ্জায় ডুবে। ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
নভেম্বরে ভারত সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও হোয়াটওয়াশ হয়ে ফিরে টাইগাররা। এরপর পাকিস্তান সফরে গিয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচেও হারে।
মুমিনুলের নেতৃত্বে এই হারের বৃত্ত থেকে অবশেষে বের হয়েছে বাংলাদেশ। পেয়েছে জয়। এই জয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে টাইগারদের। এমনটাই জানিয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'আমাদের ভালো খেলা খুব প্রয়োজন। কারণ এই ধরণের জয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।'
ম্যাচ জয়ের নায়ক তরুণ নাঈম হাসানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'সে দারুণ খেলেছে।'
পরে দলের অন্যদেরও প্রশংসা করেন মুমিনুল। বলেন, 'শান্ত, তামিম, লিটনও ভালো খেলেছে। আসলে সবাই-ই ভালো খেলেছে। এই জয়ে আমি খুব খুশি।'
'এই জয়ের খুব প্রয়োজন ছিল'
'এই জয়ের খুব প্রয়োজন ছিল’- এটিই ছিল মুশফিকুর রহীমের কথা। তার কণ্ঠ থেকে আসরে পুরো বাংলাদেশের চাওয়াই বের হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ দলকে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য একটা জয়ের দরকার ছিল খুবই বেশি। দলকে উজ্জীবিত করতে এর বিকল্প নেই। সেই জয়টাই আজ পেয়েছে বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। উচ্ছ্বসিত হয়ে মুশফিক ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, 'আমাদের এ জয়টি খুব প্রয়োজন ছিল। উইকেটটি আসলেই খুব ফ্ল্যাট ছিল। তবে আমাদের বোলাররা দারুণ বোলিং করেছেন।'
তিনি আরো বলেন, 'আমাদের কারো বড় একটি স্কোর করার প্রয়োজন ছিল। এবং নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি কারণ আমি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছি। তবে শুরুটা চমৎকার করেছে তামিম ও শান্ত। এরপর লিটন কার্যকরী কিছু রান করে গেছে।'