আপনি কি স্টেসে আক্রান্ত : যেভাবে বুঝবেন

আপনি কি স্টেসে আক্রান্ত : যেভাবে বুঝবেন - ছবি : সংগ্রহ
স্ট্রেস নিজে কোনো ক্ষতিকর নয়। প্রতিটি মানুষেরই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে বা তাকে জীবনের নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তবে এসব কিছু যখন বেশি মাত্রায় হয়ে যায় তখনই তা খারাপ পরিণতি নিয়ে আসে। আর এ সময় ব্যক্তির মধ্যে সৃষ্টি হয় দরকারহীন মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেস। লিখেছেন ডা: জিনাত ডি. লায়লা
স্ট্রেস হলো ডিপ্রেশন শুরু হওয়ার অন্যতম পরিচিত ফ্যাক্টর এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যকেও অসুস্থ করে দিতে পারে। তাই আপনার জীবনের যেসব স্ট্রেস আছে তার কারণ খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং স্ট্রেসকে কমানো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো ধরনের ক্ষতি, শোক, বিচ্ছেদ, ডিভোর্স, সন্তান বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া- এসব স্ট্রেস তৈরি করে এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ করে দেয় ও অক্ষম করে দেয়। এ ছাড়া বিয়ে, বাড়ি পাল্টানো, নতুন চাকরি, ছুটির দিন এসবও উচ্চমাত্রার স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। কাজকর্মে, সময়ানুবর্তিতার ভাবনা অথবা কোনো চ্যালেঞ্জের সঙ্গে পেরে না ওঠাও স্ট্রেসের জন্ম দিতে পারে।
স্ট্রেসের লক্ষণ-উপসর্গ
অত্যধিক স্ট্রেসের কিছু কমন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায়-
* অত্যধিক রাগ দেখা দেয়।
* সমালোচনার প্রতি খুব বেশি মাত্রায় স্পর্শকাতরতা।
* টেনশনের চিহ্ন যেমন- নখ কামড়ানো।
* ঘুমাতে না পারা বা ঘুম না আসা।
* ঘুম থেকে খুব ভোরে জেগে ওঠা।
* খুব বেশি ধূমপান করা।
* বদহজম।
* মনোযোগের অভাব।
একটা অত্যন্ত অপরিহার্য বিষয় হলো ক্ষতিকারক স্ট্রেস আপনার মন ও শরীরকে আঘাত হানার আগেই তাকে দূর করার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
স্ট্রেসের ব্যাপারে করণীয়
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করার গোপন কথা হলো নিজের প্রতি যত্ন নেয়া এবং যেখানে সম্ভব স্ট্রেসের কারণ দূর করে ফেলা দরকার। যেসব কাজকর্ম আপনাকে স্ট্রেস দিচ্ছে তা থেকে কিছু সময় দূরে থাকুন, তাকে সহজভাবে নিন, গৃহস্থালি সমস্যা যা আপনার মধ্যে স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয় তার চটজলদি একটা সমাধান টানুন। এমন কাজ করুন যা আপনাকে টেনশন ফ্রি রাখে এবং যা আপনার মধ্যে ভালো লাগা বোধ জন্মাবে। এগুলো সবই এক অন্যরকম ব্যাপার সৃষ্টি করবে এবং আপনার ভালো থাকার থ্রেটকে কমিয়ে দেবে।
আরো কিছু উপায়ে যা দিয়ে স্ট্রেস থেকে পেরে ওঠা যাবে, যেমন-
* কারো বাস্তবিক সাহায্য গ্রহণ করে নিন।
* এক সময়ে একটি কাজই করুন।
* স্ট্রেসের বোঝা একে একে বাড়াবেন না।
* আপনার নিজের সীমাবদ্ধতাকে বা নিজের ক্ষমতাকে বুঝতে চেষ্টা করুন, ক্ষমতার বাইরে কিছু করতে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* খুব বেশি প্রতিযোগী হবেন না।
* খুব বেশি আশা করবেন না।
* স্ট্রেসফুল পরিস্থিতি বা পরিবেশকে এড়িয়ে চলুন।
* এমন কোনো ব্যক্তির সাথে সময় কাটান যে কি না সমালোচনা করার চেয়ে ভালো পরামর্শ দেয়, বিবেচক হয়।
কাজকর্ম সম্পর্কিত স্ট্রেস
ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বড় স্ট্রেসের কারণ হলো পেশাগত স্বাস্থ্য সমস্যা। কর্মীরা প্রায়ই স্ট্রেসের সঙ্গে পেরে না ওঠার ফলেও তার জন্য সাহায্য নিতে অনিচ্ছুক হয়।
অনেক পরিস্থিতিই কাজকর্মে স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-
* কলিগের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকা।
* সমর্থনহীন বস বা প্রধান কর্মকর্তা।
* কনসালটেশন এবং যোগাযোগের অভাব।
* আপনার পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বেশি মাত্রায় বাধাদান করা।
* কোনোকিছু করতে খুব বাড়াবাড়ি করা বা খুব তুচ্ছ করা।
* বাস্তবতাহীন সময়ানুবর্তিতা বা নিয়মনীতির বাড়াবাড়ি চাপ।
* খুব কঠিন কাজ বা খুব কদরহীন কাজ।
* কাজ যেভাবে হয় তার প্রতি নিয়ন্ত্রণ কম থাকা।
* কাজ করার খুব করুণ অবস্থা বা পরিবেশ।
* অবমূল্যায়ন অনুভব করা।
* নিরাপত্তাহীনতা এবং
* চাকরি হারানোর হুমকি।
যখন মানুষ কাজকর্মে অস্বাভাবিক চাপ অনুভব করে, তখন তারা আরো কঠোর পরিশ্রম করে তারা তাদের কাজের দ্বারা যা অর্জন করেছে বা যতটুকু অর্জন করা উচিত তার শূন্যতা বা গ্যাপ পূরণের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করে; ফলে এ সময় তারা বিশ্রাম নেয় না, ঠিকমতো খায় না এবং তাদের নিজেদের প্রয়োজন বা চাহিদাকে উপেক্ষা করে। আর এর ফলে ব্যক্তির মধ্যে জন্ম নেয় চরম স্ট্রেস।
কর্মক্ষেত্রের স্ট্রেস মোকাবেলায় করণীয়
* যাকে বিশ্বাস করেন তার সাথে নিজের সমস্যার কথা বলুন।
* প্রতিদিন নিয়মিত সময় অনুযায়ী কাজ করুন।
* কাজকর্মে বিরতি বা বিশ্রাম নিন, ছুটির দিন উপভোগ করুন।
* নিজের প্রতি যত্ন নিন।
* কাজের সহনীয় সময় বেছে নিন ও বাড়াবাড়ি করবেন না।
* ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকাসক্তি থেকে বেঁচে চলুন।
* আপনার কাজকর্মের পরিবেশ স্বাচ্ছন্দ্যময় করুন এবং যে কাজ আপনার জন্য প্রযোজ্য তাই করার চেষ্টা করুন।
* আপনার সমস্যার জন্য সুপারভাইজার বা ম্যানেজারের সাথে আলোচনা করুন, যদি কোনো সমস্যা সমাধান করা না যায় তাহলে আপনার কর্মক্ষেত্রের ব্যক্তিগত বিভাগের বা ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি বা তাদের সদস্যের সাথে কথা বলুন।
* আপনার কর্মক্ষেত্রের নিয়মনীতি মেনে চলুন আর প্রয়োজনে মনোরোগ চিকিৎসকের সহায়তা নিন।
লেখিকা : সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
চেম্বার : উত্তরা ল্যাবএইড, ইউনিট-২, সেক্টর-১৩,
উত্তরা, ঢাকা। ফোন : ০১৭৬৬৬৬২০৫০