আফগানিস্তানে যেভাবে জয়ী হলো পাকিস্তান

কামরান ইউসুফ | Feb 25, 2020 08:40 am
আফগানিস্তানে যেভাবে জয়ী হলো পাকিস্তান

আফগানিস্তানে যেভাবে জয়ী হলো পাকিস্তান - সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান তালেবান ২৯ ফেব্রুয়ারি শান্তিচুক্তি সই করতে সম্মত হয়েছে। আসন্ন চুক্তির ফলে দুই দশকের যুদ্ধ অবসান হবে বলে আশাবাদ সৃষ্টি হলেও তালেবান তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কিনা এবং অন্যান্য গ্রুপ কোনো ধরনের ক্ষমতা ভাগাভাগির ফরমুলাতে রাজি হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে। সবচেয়ে বড় সন্দেহ এই গুরুতর প্রশ্নকে কেন্দ্র করে যে ৯/১১ হামলার আগে ক্ষমতায় থাকার সময় কট্টর নীতি নিয়ে তালেবানের যে কুখ্যাতি ছিল তা পুনর্বিবেচনা তারা করবে কিনা।

তালেবানের উপপ্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে এসব ভয় প্রশমনের চেষ্টা করেছেন। হাক্কানি কেবল নারীদের অধিকারের কথাই বলেননি, সেইসাথে তিনি বলেছেন যে বিদ্রোহী গ্রুপটি অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত। যে ব্যক্তিটি দীর্ঘ দিন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন এবং তার মাথার দাম ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার, তার প্রবন্ধ নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশ করাটা ছিল অবাক করা ব্যাপার।

এর ফলে অনেক লোক বিশ্বাস করছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান প্রকাশনার মতামত পৃষ্ঠায় হাক্কানির প্রবন্ধ প্রকাশে ট্রাম্প প্রশাসনের হাত থাকতে পারে। এটাও সত্য হতে পারে যে শান্তিচুক্তি করার ঠিক আগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগান তালেবান এবং আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে (তারা আমেরিকান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে কয়েকটি ভয়াবহ প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে) শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে তুলে ধরতে আগ্রহী। হাক্কানির প্রবন্ধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে তা এই যে আফগান তালেবান ও তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো তাদের পথ পরিবর্তন করতে আগ্রহী এবং তারা কেবল সাধারণ আফগানদের কাছেই নয়, বহির্বিশ্বেও গ্রহণযোগ্য হবে।
হাক্কানিদের গ্রহণ করার মার্কিন পদক্ষেপ দৃশ্যত পাকিস্তানের আফগান কৌশলকেই যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন। উল্লেখ্য, আসন্ন শান্তিচুক্তিতে প্রধান ভূমিকাই পালন করেছে পাকিস্তান। আর পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে দীর্ঘ দিন কাঁটা বিবেচিত হতো হাক্কানি নেটওয়ার্ক। যুক্তরাষ্ট্র অনেকবার এই গ্রুপকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। মার্কিন চাপ সত্ত্বেও পাকিস্তান পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে তারা কখনো আফগান যুদ্ধে বা সেখানকার মাটিতে লড়াই করবে না। কর্মকর্তারা একান্ত আলাপচারিতায় বলতেন যে হাক্কানি নেটওয়ার্ক বা আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে সরাসরি অ্যাকশনে যাওয়া মানেই হলো পাকিস্তানে নতুন একটি রণাঙ্গন খোলা, অথচ স্থানীয় মিলিশিয়া সংগঠনগুলো দিয়ে আগে থেকেই দেশটিতে সহিংসতা জারি রয়েছে।

মার্কিন চাপের কাছে পাকিস্তানের নতি স্বীকার না করার আরেকটি কারণ হলো, দেশটি জানত যে যুক্তরাষ্ট্রকে শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত গ্রুপগুলোর সাথেই আলোচনা করতে হবে। ২০১৮ সালে ওই মূল্যায়ন যথাযথ প্রতীয়মান হয়। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে বুঝতে পারে যে আফগান যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না এবং তাই তাদেরকে তালেবান ও অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কোনো পথ বের করতে হবে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক চিঠিতে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করতে সহায়তার অনুরোধ জানান। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয় তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি আলোচনায় পাকিস্তান মধ্যস্ততা করলে।
পাকিস্তানের সিনিয়র সাংবাদিক ও আপগানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রহিমুল্লাহ ইউসাফজাই বলেন, পাকিস্তান যদি তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে সরাসরি সঙ্ঘাতে নামার মার্কিন আহ্বানে সাড়া দিত, তবে সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার যে ভূমিকা পালন করছে, তা করতে পারত না।

পাকিস্তান বছরের পর বছর ধরে একান্ত আলাপে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে আসছিল যে আফগান তালেবানকে স্রেফ একটি বিদ্রোহী গ্রুপ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত হবে না, বরং একে একটি রাজনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। আমেরিকার সামরিক কৌশল কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পাওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হন। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এখন তালেবান ও হাক্কানিদেরকে রাজনৈতিক খেলোয়াড় মনে করছে, আফগানিস্তানের ভবিষ্যত রাজনৈতিকব্যবস্থায় তাদের ভূমিকার কথা স্বীকার করছে। এখন একমাত্র যে প্রশ্নটি রয়ে গেছে তা হলো আফগানিস্তানের অন্যান্য গ্রুপ ও সেইসাথে অন্যান্য দেশ (যারা আসন্ন শান্তিচুক্তিতে অসন্তুষ্ট হয়েছে) তাদেরকে বৈধ রাজনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে গ্রহণ করবে কিনা। শান্তির পথে যাত্রা কেবল শুরু হলো।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us