করোনায় নারীদের চেয়ে পুরুষদের বিপদ বেশি কেন?

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Feb 21, 2020 09:44 pm
করোনায় নারীদের চেয়ে পুরুষদের বিপদ বেশি কেন?

করোনায় নারীদের চেয়ে পুরুষদের বিপদ বেশি কেন? - সংগৃহীত

 

চীন থেকে ছড়ানো করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীতেই আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। মূলত শিশুদের মধ্যে এ রোগ ছড়ালেও দেখা যাচ্ছে যে মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক পুরুষরা এ রোগের শিকার হচ্ছেন বেশি।

এ সপ্তাহেই চীনের সরকারি সংস্থা করোনা ভাইরাসের সাম্প্রতিকতম ঘটনার বৃহত্তম বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। নারী ও পুরুষ, উভয়ের মধ্যে এর সংক্রমণ প্রায় সমান হলেও, গবেষকরা দেখেছেন পুরুষদের মধ্যে মৃত্যুহার (২.৮ শতাংশ) নারীদের মৃত্যুহারের (১.৭ শতাংশ) চেয়ে বেশি।

সার্স ও মের্স-এর প্রকোপের সময়েও পুরুষদের সংক্রমণের হার বেশি ছিল, যে সংক্রমণের কারণ ছিল করোনা ভাইরাস। ২০০৩ সালে হংকংয়ে সার্সে নারীদের মধ্যে সংক্রমণের পরিমাণ বেশি হলেও পুরুষদের মৃত্যুহার ছিল নারীদের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

মধ্যপ্রাচ্যে শ্বাসের সংক্রমণে পুরুষদের মৃত্যু ঘটে ৩২ শতাংশ ক্ষেত্রে, নারীদের ক্ষেত্রে এ পরিমাণ ২৫.৮ শতাংশ। ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মড়কের সময়েও তরুণদের মৃত্যুহার, তরুণীদের চেয়ে বেশি ছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাম্প্রতিক মড়কে বেশ কিছু বিষয় পুরুষদের বিরুদ্ধে গিয়ে থাকতে পারে, যার মধ্যে কিছু শারীরিক, কিছু জীবনযাপনের সঙ্গেও যুক্ত।

সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রসঙ্গে পুরুষরা দুর্বল লিঙ্গ।

জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের বৈজ্ঞানিক সাবরা ক্লিন ভাইরাল সংক্রমণ ও টিকাকরণে লিঙ্গগত তফাৎ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি শ্বাসনালীতে ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে পুরুষদের হাল মেয়েদের চেয়ে খারাপ হয়। এটা একটা প্যাটার্ন।”

তিনি বলেন, “অন্য ভাইরাসের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি মেয়েরা লড়তে পারে বেশি”।

টীকাকরণের পর নারীদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে এবং প্রতিরোধের স্মৃতিও বর্ধিত হয়, যার ফলে প্যাথোজেনের হাত থেকেও সুরক্ষিত থাকতে পারেন প্রাপ্তবয়স্করা।

মেয়েদের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় একটা বিপুল কিছু রয়েছে, বললেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিট্যুট অব হেলথের ডক্টর জেনাইন ক্লেটন।

তবে একই সঙ্গে তিনি বলছেন, এর মূল্যও দিতে হয় বেশি- নারীরা আর্থ্রারাইটিসের মত স্বপ্রতিরোধী রোগের ক্ষেত্রে বেশি সংবেদনশীল, যেসব রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে এবং নিজের শরীর ও টিস্যুকেই আক্রমণ করে বসে।

ক্লেটন বলছেন, ৮০ শতাংশে মত ক্ষেত্রে স্বপ্রতিরোধী রোগের শিকার হন মহিলারাই।

নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ক্ষমতা কেন বেশি হয়, তা এখনো স্পষ্ট নয়, এবং এ সম্পর্কিত গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নারীদের প্রখরতর প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে একটা ধারণা হল, সন্তানদের বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত কিছু সুবিধা, যার মধ্যে মাতৃদুগ্ধের মধ্যে দিয়ে অ্যান্টিবডি পান করে নেয় ও তার ফলে শিশু-শরীর রোগকে তাড়াতে পারে। তার নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতা তখনও তৈরি হচ্ছে।

শারীরিক কিছু বিষয়ও এ বিষয়ে দায়ী হতে পারে, যার মধ্যে ইস্ট্রোজনের বিষয়টি থাকতে পারে, এবং নারী শরীরে দুটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে, যাতেথাকে প্রতিরোধী জিন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এক্স ক্রোমোজোমের সংখ্যা ১।

ইঁদুরের উপর সার্স ভাইরাস নিয়ে নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল পুরুষদের মধ্যে সংক্রমণের পরিমাণ বেশি এবং তা বয়সের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান।

এই গবেষণায় সংক্রমিত স্ত্রী ইঁদুরদের মধ্যে গবেষকরা যখন ইস্ট্রোজেন বন্ধ করে দেন বা ডিম্বাশয় বাদ দিয়ে দেন শরীর থেকে , তখন তাদের মরার উপক্রম হয়, কিন্তু পুরুষ ইঁদুরদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন বন্ধ করে দিলে কোনো তফাৎ ঘটে না। এ থেকে ইঙ্গিত মেলে যে এস্ট্রোজেনের ভূমিকা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

“পার্লম্যানের কথায় মানুষের ক্ষেত্রে যা ঘটে, তারই একটা চেহারা পাওযা যায় এতে- মানব-মানবীর মধ্যে তফাৎসূক্ষ্ম, ইঁদুরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তত সূক্ষ্ম নয়।

বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন লিঙ্গের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ব্যবহারের ভিন্নতাও সংক্রমণের ভিন্নতার জন্য দায়ী।

পৃথিবীর ধূমপায়ীদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যকের বাস চীনে। সংখ্যায় ৩১৬ মিলিয়ন। দুনিয়ার ধূমপায়ীদের এক তৃতীয়াংশ চীনে বাস করেন, এবং সারা পৃথিবীতে যত তামাক সেবন করা হয়, তার ৪০ শতাংশ হয় চীনে। এদিকে চিনা নারীদের মাত্র ২ শতাংশের সামান্য বেশি ধূমপান করেন।

চীনা পুরুষদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের হারও নারীদের তুলনায় বেশি। এ দুইই করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য ঝুঁকির বিষয় হতে পারে। ক্রনিক ফুসফুসের রোগও চীনা পুরুষদের মধ্যে নারীদের দ্বিগুণ।

আমেরিকায় হেলথকেয়ারের ব্যাপারে নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি তৎপর এবং কিছু ছোট গবেষণাতেও দেখা গেছে আমেরিকায় চীনা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও এরকমটাই ঘটে থাকে।

অপ্রকাশিত কিছু গবেষণায় চীনা গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, যেসব রোগীর সংক্রমণ ধরা পড়তে দেরি হয়েছে বা প্রথমবার সংক্রমণের সময়ে নিউমোনিয়া হয়েছে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

৪০২১ জন রোগীকে নিয়ে করা করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত এক গবেষণায় দ্রুত রোগ নির্ণয়ের উপর জোর দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে। যেসব পুরুষ হাসপাতালে যাচ্ছেন তাদের ইতিমধ্যেই রোগের সংক্রমণ অত্যধিক।

কিন্তু চীনের হুবেই প্রদেশে, যেখানে এই মড়কের কেন্দ্র সেখানে ছবিটা ভিন্ন। সেখানে রোগের কারণে মৃত্যুর হার অনেকটাই কম, এবং নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে সংক্রমণের হার অনেক বেশি বলে চীনের গবেষণায় জানা গেছে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিকো ইওয়াসাকি বলেছেন, পুরুষদের সুরক্ষা সম্পর্কিত ভুল ধারণাও থাকতে পারে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us