ফিলিস্তিনে নতুন আন্দোলন : বিক্ষোভ ফজর-এশা

ফিলিস্তিনে নতুন আন্দোলন : বিক্ষোভ ফজর-এশা - সংগৃহীত
ইসরাইলকে খুশি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’র ঘোষণা দিয়েছে, সেটির বিরুদ্ধে এবার বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনিরা। অবশ্য, তারা জানে প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো পথ নেই তাদের সামনে। এ কারণে ফজরের পর থেকেই আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে স্লোগান ওঠে ‘নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবার’। এরপর ‘ইসরাইল নিপাত যাক, আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা রুখে দাও’।
ফিলিস্তিনিদের নাবলুস ভিক্টরি স্কয়ারের মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে এসব স্লোগানে স্লোগানে কেঁপে ওঠে চরাচর। এভাবে সারা দিনই চলে প্রতিবাদ। এশার পরও আরো অনেকটা সময় পর্যন্ত। অবশেষ রাত বাড়লে আস্তে আস্তে ঘরে ফেরে ফিলিস্তিনিরা।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’র প্রতিবাদে তিন সপ্তাহ ধরে চলছে এই বিক্ষোভ। মূলত ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
নাবলুসের ভিক্টরি স্কয়ারে উঁচু মিনার নিয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটির দিকে দলে দলে ছুটে চলে মুসল্লিরা। নামাজের সময় যতই ঘনিয়ে আসে, ততই বাড়তে থাকে জনস্রোত।
এরপর নামাজ শেষ হলেই ভিক্টরি স্কয়ারে সমাবেশ হয়, শুরু হয় বিক্ষোভ; উচ্চকিত কণ্ঠে জোরদার স্লোগান। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। শুধু নাবলুসই নয়। একই চিত্র পশ্চিম তীর, জেরুসালেম ও আল-আকসাসহ অন্য শহরগুলোয়ও।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্প ফিলিস্তিনের বিপক্ষে একটার পর একটা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন।
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়া ও পশ্চিম তীরে ইহুদিদের অবৈধ বসতিকে বৈধতা দেয়া প্রভৃতির পর সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে (২৭ জানুয়ারি) ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে বিতর্কিত ‘মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেন তিনি। সাথে সাথে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিন।
ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গাজা, পশ্চিম তীর, বেথেলহাম, আল-আকসা, দক্ষিণ জেরুজালেম, জর্ডান উপত্যকা ও হেবরনে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু থেকেই ব্যাপক দমন-পীড়ন ও ধরপাকড় চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী।
টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটের সঙ্গে সঙ্গে কখনো কখনো তাজা গুলিও চালাচ্ছে তারা। এতে গত তিন সপ্তাহে কয়েক ডজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক শ’।
আটক করা হয়েছে অসংখ্য। মিডল ইস্ট মনিটর বুধবার জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর সহিংসতা, হয়রানি, গ্রেফতার ও হত্যার ভয় উপেক্ষা করেই মসজিদে মসজিদে শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। বিক্ষোভের লক্ষ্যে ফজরের আজানের আগেই দলে দলে মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হয় তারা।
নামাজ শেষ হলেও সমবেত কণ্ঠে স্লোগান ধরে। মসজিদকেন্দ্রিক এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ‘মহান ফজর জাগরণ’ বলে অভিহিত করছে ফিলিস্তিনিরা।
নাবলুসের ভিক্টরি স্কয়ারের বিক্ষোভকারীদের বিশাল ভিড়ের মধ্যে সাইফ আবু বকর নামে এক রেস্তোরাঁ মালিক বলেন, ‘এটা একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। এখান থেকেই আমরা ইসরাইল ও আমেরিকাকে একটা কঠিন বার্তা দিতে চাই।’
সূত্র : পূবের কলম