আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান লড়াই

সৈয়দ আলী জিয়া জাফরি | Feb 20, 2020 08:04 am
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান লড়াই

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান লড়াই - সংগৃহীত

 

ইরানের ঐতিহাসিক ১৯৭৯ বিপ্লবের পর থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক স্থায়ী একটি রূপ নিয়েছে। আর তা হলো তিক্ততা ও পাল্টা অভিযোগ। আরো খারাপ বিষয় হলো, দুই দেশের কেউই দীর্ঘ দিনের বৈরিতা অবসানে কোনো প্রয়াস চালায়নি। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল এমনিতেই উত্তপ্ত। এর মধ্যেও সেখানে অব্যাহতভাবে চলছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অন্তর্ঘাতমূলক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে জয়েন্ট কম্প্রেহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে সরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান যাতে পরমাণু শক্তির অধিকারী হতে না পারে, কার্যত সেজন্যই ছিল এই চুক্তি। মার্কিনিীদের কাছে এর অর্থ হলো, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের চ্যালেঞ্জ করছে ইরান, এবং তা দেশটির জন্য অনেক বড় একটি উদ্বেগ। কী ঘটতে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য ইরানের ছায়াযুদ্ধের সম্রাট মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানিকে হত্যা ও এরপর যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর দিকে নজর রাখা দরকার। মধ্যপ্রাচ্যে ছায়াযুদ্ধের জাল যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সঙ্ঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, মধ্যপ্রাচ্যে ছায়া জালই সেখানে তার স্বার্থের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি। আর ইরান এটা হলো তার অন্যতম মধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র। ছায়াযুদ্ধ বন্ধ করতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র, আর ওই চেষ্টা প্রতিরোধ করার জন্য সমান প্রয়াস চালাবে ইরান।

জানুয়ারি মাসটি কেটে গেছে উত্তেজনা বৃদ্ধি ছাড়াই। তবে ভবিষ্যতে যেকোনো প্ররোচনা কেবল সহিংসতাই বাড়াবে। আর এক্ষেত্রে আফগানিস্তান হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সঙ্ঘাতের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সঙ্ঘাত যে আফগানিস্তানের জন্য খারাপ খবর, তার অনেক কারণ আছে।

প্রথমত, আফগানিস্তানে অবস্থানরত প্রায় ১৩ হাজার মার্কিন সৈন্য ইরানের কাছে আঘাত হানার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। মার্কিন ছায়ারা যদি ইরানি স্থাপনা বা তাদের কোনো ছায়ার ওপর আঘাত করে, তবে ইরান সরাসরি আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীকে টার্গেট করার কথা ভাবতে পারে। ইরানের জন্য এমন আক্রমণ বেশ আকর্ষণীয় বিবেচিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রও ছেড়ে দেবে না। ফলে ইরানের জন্য ওইসব হামলা হবে বিপুল ব্যয়সাধ্য।
কারণ ওইক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিশোধ নেবে, তারা ইরানের মূল ভূখণ্ডেও হামলা চালাতে পারে। এতে করে ভয়াবহ যুক্তরাষ্ট্র-ইরান যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ তালেবানের সাথে তেহরানের সম্পর্কে পরিবর্তন এসেছে। ইরান ও তালেবানের মধ্যকার বৈরিতার অবসান ঘটেছে। ইরান এখন কেবল শান্তিপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের জন্য তালেবানকে আমন্ত্রণই জানাচ্ছে না, সইসাথে তালেবানকে তহবিলও প্রদান করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও বলেছেন, ইরান সর্বাত্মকভাবে শান্তিপ্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ইরানের নোংরা কাজের পক্ষে পরিণত হচ্ছে তালেবান। অনেকে বিশ্বাস করে যে তালেবানের সাথে কারিগরি সমঝোতা জোরদার করেছে তেহরান। ইরানের ইন্ধন পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শান্তি আলোচনায় আরো কঠিন অবস্থান গ্রহণ করতে পারে তালেবান। সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের জবাবে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি বলেছেন যে বদলার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গুটিয়ে নেয়া পর্যন্ত। তেহরান-তালেবান শক্তিশালী জোটে ওই লক্ষ্য হাসিলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। অর্থাৎ ইরানের মার্কিনবিরোধী অবস্থানে আরেকটি হাতিয়ার হতে পারে তালেবান। আর সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রও তালেবানের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এর ফলে শান্তি আলোচনায় বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, আফগানিস্তানে আরো বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। আর বর্তমানে শান্তিপ্রক্রিয়ায় সামনের কাতারে থাকা পাকিস্তান ও চীনও এতে প্রভাবিত হতে পারে। তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের প্রয়াসও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তালেবানের ওপর ইরানি প্রভাব বাড়লে পাকিস্তানের কমবে।

তৃতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলের মতো আফগানিস্তানেও প্রক্সিদের সক্রিয় করতে পারে ইরান। আফগানিস্তানের ভেতরে শিয়াদের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছে ইরান। শিয়া আফগানদের ইরান নিয়োজিত করতে পারে। এরা বর্তমানে সিরিয়ায় ফাতেমিয়ুন ব্রিগেড হিসেবে কাজ করছে। সিরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার অবস্থায় উপনীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে কঠোর শিয়া যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।
অবশ্য ইরানের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তারাও তাদের প্রক্সিগুলো জোরদার করবে। ফলে আফগানিস্তান হয়ে পড়বে আরো ভয়াবহ যুদ্ধের একটি মঞ্চ।

এর ফলে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বহুল আলোচিত শান্তিপ্রক্রিয়ার ইতি ঘটতে পারে।
সংক্ষেপে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনার ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে আফগানিস্তানে। ওই দুই দেশের বৈরিতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান আরো কঠিন অবস্থায় পড়বে।

পাকিস্তান পলিটিকো


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us