কী হচ্ছে সার্ক নিয়ে?
সার্কের জৌলুস কি ফিরবে? - সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর উদযাপন উপলক্ষে শনিবার নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গয়াওয়ালি বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া সার্কের (দক্ষিণ এশিয়ান আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) পর্যবেক্ষক। এই সংস্থাই দুই দেশকে আঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামোর মধ্যে কাজ করার ব্যবস্থা করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এই সংস্থার অন্যান্য পর্যবেক্ষক দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সার্ক নিয়ে এই মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে যে নেপাল এখনো সংস্থাটির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার পর থেকে নির্জীব হয়ে রয়েছৈ। ওই সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছিল যে পরবর্তী সম্মেলন ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে গঠিত সংস্থা সর্বসম্মতভাবে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও উপস্থিত ছিলেন। নেপালের ওই সময়ের প্রধানম্ত্রী সুশীল কৈরালার উদ্যোগে এই অঞ্চল ও সার্বিকভাবে পুরো বিশ্বকে আশ্বস্ত করার জন্য মোদি ও শরিফ প্রকাশ্যে হাত মেলান। তারা এই অঞ্চল, বিশ্বের স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় মতপার্থক্য ও বৈরিতা ভুলে এগিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
কিন্তু কাশ্মির সীমান্তে সঙ্ঘাতের জের ধরে পাকিস্তানের নির্ধারিত সম্মেলনে অংশ নিতে রাজি হয়নি ভারত। নয়া দিল্লির এই অবস্থান দেখে আরো কয়েকটি দেশও সম্মেলন থেকে সরে যায়। এদিকে পাকিস্তানি কূটনীতিক আমজাদ হোসাইন বি সাইল সার্ক মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এর ফলে ভারতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান নেপাল মনে করে, বর্তমান অচলাবস্থা সাময়িক। বর্তমান বৈরিতা পর্ব অবসান হওয়া মাত্র অতীতের মতো আবারো ভারত ও পাকিস্তান প্রকাশ্যে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কাজ করা শুরু করবে। নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলিও এই বিশ্বাসে আশাবাদী। গত ৭ ফেব্রুয়ারি কাঠমান্ডুতে সার্ক সচিবালয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এই সংস্থা এই অঞ্চলের ১৭০ কোটি লোকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার প্রতিনিধিত্ব করে।
নেপাল ২০১৮ সালে বিমস্টেক (মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) নামের একটি গ্রুপের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের সম্মেলন আয়োজন করেছিল। ১৯৯৭ সালে সার্কের ৫টি দেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি দেশ- মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে এই গ্রুপ গঠিত হয়। এই গ্রুপ থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে বাদ দেয়া হয়। এ কারণেই এই গ্রুপটির ওপর গুরুত্ব বেশি দিতে থাকে ভারত। ভারতীয় নেতা ও কূটনীতিকেরা প্রকাশ্যেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এটি একটি নিরাপত্তা জোটে পরিণত হবে। কিন্তু নেপাল এই পরিকল্পনা গ্রহণে রাজি হয়নি। তারা কোনো নিরাপত্তা বা সামরিক জোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।
নেপাল মনে করে যে সার্কের বিকল্প হতে পারে না বিমস্টেক। ভৌগোলিক এলাকা, ঐতিহাসিক সম্ভাবনা, জনসংখ্যা ও সাংস্কৃতিক মাত্রার কারণে এই অঞ্চলে সার্ক অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড আগে থেকেই আসিয়ানের সদস্য।
নেপালের রাজা জ্ঞানেন্দ্রের প্রস্তাবে ঢাকা সম্মেলনে চীন সংস্থার পর্যবেক্ষক হয়। অবশ্য অনেক সদস্য এর বিরোধিতা করেছিল। আফগানিস্তান শুরুতে এর সদস্য না হলেও ভারতের প্রস্তাবে তারা পূর্ণ সদস্যপদ পায়। এটি ছিল ভারতের একটি পাল্টা পদক্ষেপ। তবে নেপাল এই আইডিয়া নিয়ে উদ্দীপ্ত ছিল না। কারণ দেশটিতে অব্যাহতভাবে আমেরিকান সৈন্য রয়েছে।
গ্লোবাল টাইমস