কাশ্মিরে মোদির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না!

মোহাম্মদ জিশান | Feb 19, 2020 07:40 am
নরেন্দ্র মোদি

নরেন্দ্র মোদি - সংগৃহীত

 

ভারতের মোদি সরকার ২০১৯ সালের আগস্টে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানের আওতায় থাকা কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সময় একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষণা করেছিল। আশা ছিল যে আইনগত ও রাজনৈতিক একীভূত হওয়ার পর কাশ্মির শিগগিরই বাইরের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে, স্থানীয়দের জন্য চাকরি সৃষ্টি হবে এবং এমনকি পুরনো ভুলের কিছু সংশোধনও হবে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ছিল যে মোদির সিদ্ধান্তের ফলে নয়া দিল্লি হয়তো তার নতুন স্বার্থগুলো রক্ষার জন্য আরো অর্থপূর্ণ ও সক্রিয় কৌশলগত জোট গড়ে তুলবে।

কিন্তু ছয় মাস পরও ওইসব প্রতিশ্রুতি পূরণ আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। পুরো সময়কালেই ইন্টারনেট আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, উপত্যকাজুড়ে চলাচল সীমিত থাকায় ব্যবসায়ের সম্ভাবনা সীমিত হয়ে পড়েছে। প্রথম দিকে বিশ্বজুড়ে সীমিত বিরোধিতা দেখা গেলেও সরকার ইন্টারনেট বন্ধ রাখায় ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের আটক করায় গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে।

সর্বশেষ আঘাত এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের দিন কতেক আগে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান মিত্র সাউথ ক্যারোলিনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামসহ চার শীর্ষ মার্কিন সিনেটর কাশ্মিরের ‘মারাত্মক পরিণাম’ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওকে একটি জ্বালাময়ী পত্র লিখেছেন।
কাশ্মিরে যখন বিধিনিষেধের সমালোচনা শুরু হলো, তখন ভারতীয় কূটনীতিকেরা যুক্তি দিচ্ছিলেন যে এই যন্ত্রণা সাময়িক। কিন্তু দিল্লির জন্য খারাপ খবর হলো, অচলাবস্থার কারণে নতুন যুক্তি খুঁজতে হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতি উভয়কেই কঠোর জননিরাপত্তা আইনের (পিএসএ) আওতায় আটক দেখানো হয়। ফলে তাদের দুজনকে দু’বছর পর্যন্ত বিনা অভিযোগে বা বিনা বিচারে কারাগারে থাকতে হতে পারে।
নয়া দিল্লির কাছে চ্যালেঞ্জ হলো কাশ্মিরে আবার নাগরিক অংশগ্রহণ ও স্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু উভয়টিই ক্রমবর্ধমান হারে অসম্ভব বিবেচিত হচ্ছে। অচলাবস্থার কোনো স্পষ্ট মিত্র বা সম্ভাব্য পথ না থাকায় মোদি সরকার বরং নতুন স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে।

স্বায়াত্তশাসন বাতিলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নয়া দিল্লি স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা কাশ্মিরের কাউকেই বিশ্বাস করে না। আর কঠোর বিধিনিষেধ ও উপত্যকার ভারতপন্থী রাজনীতিবিদদের আটক করার ফলে সংলাপের একটি সেতুবন্ধ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য পথও বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে ভারতপন্থী স্থানীয়দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বেড়েছ। আরো খারাপ বিষয় হলো, ছয় মাস হয়ে গেলেও সরকার এমন কাউকে খুঁজে পায়নি, যাকে তারা বিশ্বাস করতে পারে, অর্থপূর্ণ অংশীদার করতে পারে। কাজ করার কোনো ভিত্তি খুঁজে না পাওয়ায় এবং ভয় দূর করার কোনো পথ না থাকায় ভারতের পক্ষেও জনমত তৈরী করা যাচ্ছে না।

সরকারের সাথে রাজনৈতিক জোট গড়ার সম্ভাব্য একটি গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত হতো কাশ্মিরি পণ্ডিতেরা। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে আক্রমণের মুখে পড়ে এই হিন্দু গ্রুপটি কাশ্মির থেকে পালিয়েছিল। গত তিন দশক ধরে তারা ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করেছে। তারা অব্যাহতভাবে তাদের দেশের তাদেরকে আবার বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিল। স্বায়াত্তশাসন বাতিলের পর অনেক পণ্ডিত আশা করেছিলেন, এবার তাদের ফেরার পথ তৈরী হবে। কিন্তু কাশ্মিরে এখনো বসবাসরত স্থানীয়দের সাথে সংলাপ সীমিত পর্যায়ে থাকায়, কাশ্মিরের ভেতরে বা বাইরে কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সৃষ্টি না হওয়ায় ওই আশা এখন মরিচিকায় পরিণত হচ্ছে ক্রমবর্ধমান হারে।

মোদি সরকার যে পথটি গ্রহণ করতে পারে তা হতে পারে কাশ্মিরের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে আবার সম্পৃক্ত হওয়া, কাশ্মিরি নাগরিক সামজের সাথে সংলাপ আবার শুরু করা। আন্তরিক উদ্যোগ ছাড়া এই জটিলতা অতিক্রম করা সম্ভব হবে না। গত বছর সাংবাদিক আতিশ তাসিরের সাথে আলাপকালে মেহবুবা মুফতি বলেছিলেন, ভারতের সংবিধানের প্রতি আমাদের মতো যাদের বিশ্বাস ছিল, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
মোদি সরকার যখন কাশ্মিরের স্বায়াত্তশাসন বাতিল করেন, তখন আশা ছিল যে উপত্যকায় নতুন রাজনীতির যুগ শুরু হবে। তবে বাস্তবক্ষেত্রে কারো সাথেই সম্পৃক্ত হতে আগ্রহ না থাকায় সরকার এখন দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থার ঝুঁকিতে রয়েছে।

দি ডিপ্লোম্যাট

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us