ইসরাইলকে সৌদিদের শর্ত
নেতানিয়াহু ও সালমান - প্রতীকী ছবি
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বলেছেন, ফিলিস্তিনের সাথে শান্তিচুক্তি হওয়ার পর তার দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক বাড়িয়ে তুলবে। গত রোববার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের উন্নতি কেবল তখনই ঘটবে যখন একটি শান্তিচুক্তি ফিলিস্তিনের শর্ত অনুসারে স্বাক্ষরিত হবে।’
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনায় ‘ইতিবাচক উপাদান’ রয়েছে বলে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের মন্তব্য করার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান।
গত মাসে যখন ট্রাম্প প্রশাসন বিতর্কিত ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ উন্মোচন করেছিল, তখন সৌদি আরব এই পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান সমর্থক ছিল। পরিকল্পনাটি প্রকাশের পর থেকেই ফিলিস্তিনি সরকার, তুরস্ক ও ইরান এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছে। অন্য দিকে মিসরসহ উপসাগরীয় দেশগুলো এই পরিকল্পনাকে সমর্থন দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব ও অন্য বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় আরব দেশ ইসরাইলের সাথে তাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের একটি রাষ্ট্রগঠনের সংগ্রামকে পাশ কাটিয়ে ইহুদি রাষ্ট্রটির সাথে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মিডল ইস্ট আই এর আগেও উল্লেখ করেছে যে, প্রাক্তন মিসরীয় নেতা আনোয়ার সাদাতের আদলে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) শান্তিস্থাপক হিসেবে উপস্থাপনের জন্য ২০১৮ সাল থেকে পরিকল্পনা চলছে। একটি সূত্র সে সময় মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছিল যে, সৌদি রাজপুত্র এই ভূমিকা গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন।
গত সপ্তাহে ইসরাইলি সংবাদপত্র ইসরাইল হায়ম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র মার্চ মাসের প্রথম দিকে একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করার চেষ্টা করছে, যেখানে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ইসরাইলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরিহি দিরি জানান, দু’টি ক্ষেত্রে ইসরাইলিদের সৌদি আরব যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, হজ পালনের জন্য এবং দ্বিতীয়টি বিনিয়োগ আলোচনা তথা ব্যবসার জন্য।
এরই মধ্যে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ অ্যারনোথ জানিয়েছে, অ্যালেক্স লেভচেন নামে এক ইসরাইলি ব্লগার সৌদি আরবে সফর করেছেন। তিনি ইসরাইলি পাসপোর্ট দিয়েই দেশটিতে ভ্রমণ করেন। তিনি জানান, সৌদি পৌঁছানোর পরই দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
এ দিকে মিউনিখ সম্মেলনে সংবাদ সংস্থা মা’আরিবের সাথে আলাপকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ অভিযোগ করেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য এখন ইরানকে দোষারোপ করা হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা কিভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ও এই অঞ্চলে উত্তেজনা এবং কথিত সহিংসতা বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি উল্লেখ করেন এর জন্যও তেহরানকে সম্ভবত দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজের মিউনিখ সম্মেলনে যোগ দেয়া এবং আরব মন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা থাকলেও তার এই সফর বাতিল করা হয়েছে।
মা’আরিবকে মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনার বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘‘ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ উভয় পক্ষকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনে কি না তা দেখার জন্য পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।’’ ট্রুডো বলেন, ‘তবে এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে, এটি মনে হয় না হবে।’ ট্রুডো আরো বলেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে আবারো আলোচনা শুরু করার যেকোনো উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানাবেন।’
গত সপ্তাহে জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, ‘কনফারেন্স অব প্রেসিডেন্টস’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী ইহুদি সংস্থার সদস্যরা সৌদি আরব সফর করেছেন। ১৯৯৩ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে এই প্রথম এ ধরনের প্রতিনিধিদল সৌদি আরব সফরে যায়। গত কয়েক বছর ধরে ইসরাইল এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণতর করার যে চেষ্টা চলছে তারই অংশ হিসেবে এ সফর হল বলে মনে করা হচ্ছে।
মিডল ইস্ট আই ও জেরুসালেম পোস্ট