আফগান-কাশ্মির আবহে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের পাকিস্তান সফর
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব - সংগৃহীত
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরেস ১৬-১৯ ফেব্রুয়ারি তিন দিন পাকিস্তান সফর করেন। পাকিস্তানকে স্বীকৃতি দিতেই গুটেরেস এই সফরটি করলেন। পাকিস্তান বহু দশক ধরে বহু মিলিয়ন শরণার্থীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে যে বদান্যতা দেখিয়েছে এবং পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় তারা যে ভূমিকা রেখেছে, তার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সফর করছেন মহাসচিব। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই তার প্রথম পাকিস্তান সফর। ২০১০ সালে তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন সবশেষ পাকিস্তান এসেছিলেন।
পরিবর্তিত আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে মহাসচিবের এই সফর এ অঞ্চলে বিভিন্ন ফ্রন্টে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য বিশেষ গুরুত্ববহ। পাকিস্তানকে যেহেতু এখন বেশ কিছু ইস্যুর মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে এই সফরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
পাকিস্তানে কয়েক মিলিয়ন আফগান ও কাশ্মিরি শরণার্থী বাস করছে। একটা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আবাসের খোঁজে তারা নিজ দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে এসেছে। সত্তরের দশকে আফগান সঙ্ঘাত শুরুর পর প্রায় চার মিলিয়ন আফগান দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়।
এ বিষয়ে মহাসচিবের সফরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান তার মাধ্যমে ইউএনএইচআসিআরের মনোযোগ আকর্ষণ করে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা পেতে পারে। এই সংস্থাটি যেহেতু সারা বিশ্বে শরণার্থীদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি নিয়ে কাজ করে, তাই পাকিস্তান আশা করতে পারে যে, তাদের মনোযোগ আকর্ষণের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা পাবে।
জাতিসঙ্ঘ ও কাশ্মির
মহাসচিব কাশ্মিরের বিবাদ এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা এলাকায় উত্তেজনার বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বারবার তিনি সংযম প্রদর্শনের উপর জোর দিয়েছেন। জাতিসংঘ সনদের ৯৯ নম্বর অনুচ্ছেদে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের যদি মনে হয় কোন বিষয় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে সেটা তিনি সিকিউরিটি কাউন্সিলের গোচরে আনতে পারেন।
২০০৫ সালে তৎকালিন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব কোফি আনান জিম্বাবুয়ের উত্তেজনা প্রশমনের জন্য এই অনুচ্ছেদ ব্যবহার করেছিলেন। ২০০৬ ও ২০১৩ সালে ফিজি আর সিরিয়ার সঙ্কট নিয়েও এই অনুচ্ছেদের ব্যবহার করেছিলেন তৎকালিন মহাসচিব বান কি মুন। বর্তমান মহাসচিব অ্যান্টনিও নিজেও এই ধারা অনুসরণ করতে পারেন এবং ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর বর্বরতার বিষয়টি সিকিউরিটি কাউন্সিলে তুলে ধরতে পারেন।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির মাধ্যমে এটা করা হয়। তখন থেকে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরের জনগণকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিগত ২০০ দিন ধরে সেখানে কারফিউ চলছে।
অ্যান্টনিও এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিবেন বলে আশা করা হচ্ছে যাতে এই বিষয়টির একটা রাজনৈতিক সমাধান হয়। পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে নিজেদের শর্তাদি উল্লেখ করে উপকৃত হতে পারে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ৭২ বছর ধরে চলে আসা বিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলার জন্য একটা রোডম্যাপ তুলে ধরতে পারে।
আফগান শান্তি প্রক্রিয়া ও পাকিস্তান
আফগান শান্তি প্রক্রিয়া এখন পূর্ণগতিতে চলছে এবং পাকিস্তান আফগানিস্তানে এমন একটা রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে আসার চেষ্টা করছে, যেটা হবে পাকিস্তান-বান্ধব এবং তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে যেটা ব্যাহত করবে না। এখানে পাকিস্তানের স্বার্থের জায়গাটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন রয়েছে।
ট্রাম্প তার জাতীয়তাবাদী নীতি এবং আমেরিকা-কেন্দ্রিক চিন্তাধারার কারণে আফগানিস্তানে ১৯ বছরের যুদ্ধের ইতি টানার চেষ্টা করছে এবং সেটাকেও পুলিশি আচরণের চেয়ে কোনভাবে খাটো করে দেখা যায় না। পাকিস্তান জাতিসংঘ মহাসচিবের বর্তমান সফরকে আশীর্বাদ হিসেবে নিতে পারে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে কোন অর্থপূর্ণ চুক্তি করার আগেই পাকিস্তান জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার শর্তাদি চুড়ান্ত করে নিতে পারে।
শান্তি প্রক্রিয়া যেহেতু জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমেই যাবে, সে কারণে পাকিস্তান আগেই মহাসচিবের কাছে তাদের নিজস্ব শর্তাদি তুলে ধরতে পারে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের আপত্তিগুলো নিয়েও আলোচনা করতে পারে। এ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশনের ব্যাপারে পাকিস্তান সে ক্ষেত্রে একটা রোডম্যাপ অনুসরণ করতে পারে। পাকিস্তান একই সাথে আফগানিস্তানের সাথে তাদের কৌশলগত গভীরতা বাড়ানোর জন্য এক দশকের পুরনো নীতি নতুন করে চালু করতে পারে।
সূত্র : গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস