নেপালে কমিউনিস্ট পার্টিতে গৃহবিবাদ!

টিকা আর প্রধান | Feb 17, 2020 08:21 pm
ওলি ও দহল

ওলি ও দহল - ছবি : সংগৃহীত

 

ভুমবারাহিতে বৃহস্পতিবার পুস্প কমল দহল যখন ‘জনযুদ্ধের’ ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন, তখন দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি তার অনুপস্থিতির বিষয়টি সহজেই চোখে পড়েছিল। মাধব কুমার নেপাল ও জালা নাথ খানালের মতো সাবেক সিপিএন-ইউএমএলের নেতাও অনুষ্ঠানে হাজির হননি।

দহল ২৫ বছর আগে তার মাওবাদী দলের সূচিত জনযুদ্ধের তাৎপর্যের ওপর আলোকপাত করেন। ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি তার দলকে ওলির ইউএমএলের সাথে একীভূত করে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (এনসিপি) গঠন করেন।
ওই অনুষ্ঠানে সাবেক ইউএমএলের একমাত্র যে সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন তিনি হলেন বামদেব গৌতম। তিনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, ওই যুদ্ধের সময় মাওবাদীরা ইউএমএলর দুই শতাধিক নেতা ও ক্যাডারকে হত্যা করেছিল।

এনসিপি গঠনের পর বৃহস্পতিবার ছিল জনযুদ্ধের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত বছরের অনুষ্ঠানেও ওলি হাজির ছিলেন না।
দলের নেতারা বলছেন, ইউএমএল নেতারা ‘বৃহত্তর কমিউনিস্ট শক্তি’ গঠনের জন্য মাওবাদীদের সাথে একীভূত হতে রাজি হলেও তারা এখনো জনযুদ্ধকে পুরোপুরি অনুমোদন করেননি।
যুদ্ধের ব্যাপারে ওলির বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি অনেক আগে থেকেই পরিচিত বিষয়। এমনকি যদিও তিনি নিজে ১৯৬৯ সালে জাপায় এক রক্তাক্ত শ্রেণি সংগ্রামের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন।

ওলি অতীতে জনযুদ্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে সমালোচনা করতে কখনো পিছপা হননি। ওই যুদ্ধ ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এর ফলে ১৭ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে, হাজার হাজার লোক বাস্তুচ্যুত ও গুমের শিকার হয়।
একীভূত হওয়ার দুই বছর পর দলের নেতারা এখনো বলছেন যে কাজটি হয়েছিল তাড়াহুড়ার মধ্যে এবং তা কখনো মৌলিক ছিল না। ফলে মতাদর্শ ও জনযুদ্ধের মতো বিষয়গুলোতে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
সাবেক মাওবাদী নেতা হিসেবে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়া মনি থাপা বলেন, আমাদের কমরেডদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতির অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অনীহা প্রমাণ করে যে ইউএমএল নেতৃত্ব সাবেক মাওবাদীদের আদর্শগত অংশটুকু এখনো গ্রহণ করেনি। অবশ্য, এটি অদ্ভূত বিষয়। কারণ দলের রাজনৈতিক নথিপত্র ও দলের গঠনতন্ত্রে জনযুদ্ধের অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দলের নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই যে বিপরীত চিন্তাধারার এই দুই দলের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল মোটামুটিভাবে কৌশলগত।

২০১৫ সালে ভারতের সীমান্ত অবরোধের পর জাতীয়তাবাদী অবস্থান নিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন। তিনি মোটামুটিভাবে বিশ্বাস করতেন যে তিনিই ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটে সংবিধান প্রশ্নে নেপালি কংগ্রেস ও মাওবাদী পার্টিকে একমতে এনেছিলেন। ২০১৬ সালে তার আগের প্রধানমন্ত্রীর আমলটি ছিল সংক্ষিপ্ত এবং তিনি চেয়েছিলেন ক্ষমতায় ফিরতে, আরো বেশি শক্তি নিয়ে। কিন্তু তার দল অর্থসঙ্কটে ছিল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়াও নিশ্চিত ছিল না। অন্যদিকে ২০১৩ সালের সাংবিধানিক পরিষদের নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই শক্তিশালী দল হিসেবে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছিল। তিনি এমনকি তার মাওবাদী আদর্শ পর্যন্ত ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন।
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির এক সাবেক মাওবাদী নেতা বলেন, অবশ্য তা সত্ত্বেও দহল কখনো জনযুদ্ধের তাৎপর্য খাটো করেননি। কারণ এই জনযু্দ্ধই তাকে জাতীয় রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিল।

ওলি ও দহলের মধ্যে পার্থক্যের পাশাপাশি ইউএমএল ও মাওবাদীরাও তাদের মতাদর্শভিত্তিক বিভক্ত।
দহলের আশঙ্কা, মাধব নেপাল, জালা নাথ খানাল ও বামদেব গৌতমের মতো নেতাদের যদি ইউএমএলের জনগণের বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মাওবাদীদের একুশ শতকের জনগণতন্ত্রের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়, তবে তারা তাকে ত্যাগ করতে পারেন। সাবেক ইউএমএল শিবির মনে করে, জনগণের বহুদলীয় গণতন্ত্রই নেতাদের একত্রিত রাখতে পারে।

বর্তমানে দলটির কোনো দৃঢ় রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই এবং তারা কিছু সময়ের জন্য মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করেছে।
জনযুদ্ধ ত্যাগ করার পর থেকে মাওবাদীরা ১ ফালগুনকে জনযুদ্ধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে এবার জনযুদ্ধ ও গণআন্দোলনের নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হিসেবে অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়। অনেকে মনে করছেন, এমনটি করা হয়েছে ইউএমএলকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও লেখক রাজেন্দ্র মহারজন বলেন, ওলি ও দহল উভয়েরই সহিংস অতীত রয়েছে। তবে ওলি তার ওই সময়ের ক্যারিয়ার নিয়ে চুপ থাকেন আর দহল তার যুদ্ধ নিয়ে সবসময়ই উচ্চকণ্ঠ থাকেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই দুই কমিউনিস্ট পার্টির একীভূত হওয়ার ভিত্তি ছিল দুর্বল, তাদের মধ্যে জনযুদ্ধ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে এবং তা থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শ্যাম শ্রেষ্ঠার মতে, একীভূত হওয়ার প্রস্তাবটি কিন্তু ওলি দেননি।
তিনি বলেন, দহলই তার সাবেক সব আদর্শ ত্যাগ করে ওলির সাথে হাত মেলাতে চেয়েছিলেন। প্রকৃতিগতভাবেই ওলি হলেন অনমনীয়, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি অন্যদের কথা শোনেন খুবই কম। তিনি জনযুদ্ধ গ্রহণ করেননি।

কাঠমান্ডু পোস্ট

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us