কেন মুখ থুবরে পড়ল মোদির মেইক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি

আকার প্যাটেল | Feb 17, 2020 08:28 am
নরেন্দ্র মোদি

নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত

 

‘মেইক ইন্ডিয়া’ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে
প্রধানমন্ত্রী তার ওয়েবসাইটে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে নীতি নির্ধারকেরা বছরের পর বছর ধরে বিতর্ক করে যাচ্ছেন কিভাবে ভারতের নির্মাণকাজে গতি আনা যায়, ভারতকে কিভাবে বৈশ্বিক নির্মাণের কেন্দ্রে পরিণত করা যায়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদিই কয়েক মাসের মধ্যে বিনিয়োগের সংস্থান করতে, উদ্ভাবন বিকশিত করতে, দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে, মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণ করতে, সেরা নির্মাণ কাঠামো নির্মাণ করার জন্য ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির সূচনা করেছেন।
কোনো জাতির প্রথমে মধ্য আয়ের ও তারপর উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে নির্মাণ তথা মেনুফেকচারিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমে হালকা শিল্প (প্রধানত পোশাক), তারপর উচ্চ প্রযুক্তির জটিল সংযোজন শিল্পে যাওয়া ছাড়া গ্রামীণ ও কৃষিজ অর্থনীতির উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়ার অন্য কোনো পথ নেই। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী তার গ্রহণ করা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন।

২০১৪ সালে ভারতের জিডিপিতে মেনুফেকচারিংয়ের হিস্যা ছিল ১৫ ভাগ, গত বছর হয় ১৪ ভাগ। মেইক ইন ইন্ডিয়া ব্যর্থ হয়েছে এবং হয়েছে ৫ বছর আগে পদক্ষেপটি গ্রহণ করার পর।
ভারতের অবস্থান তুলনা করতে ও ব্যর্থতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করার জন্য আমরা অন্য কয়েকটি দেশের দিকে তাকাতে পারি। আমরা চীনের দিকে তাকাতে পারি। দেশটির অর্থনীতি ভারতের চেয়ে ৫ গুণ বড়। চীনের জিডিপিতে মেনুফেচারিংয়ের হিস্যা ২৯ ভাগ (ভারতের দ্বিগুণ) এবং ২০১৪-২০২০ সময় কালে তা অপরিবর্তিত থাকে।
ভিয়েতনামের ১৬ ভাগ এবং তা ভারতের মেইক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি চালুর সময় ছিল ১৩ ভাগ। শ্রীলঙ্কার ১ ভাগ। থাইল্যান্ড (২৭ ভাগ), ইন্দোনেশিয়া (১৯ ভাগ), ফিলিপাইন (১৯ ভাগ), মালয়েশিয়া (২১ ভাগ), সিঙ্গাপুর (২০ ভাগ)- সবাই ভারতের চেয়ে এগিয়ে। ইউরোপে জার্মানির ২০ ভাগ। এটা বিস্ময়কর নয়। কারণ এটি বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোবাইল শিল্পের দেশ। পোশাক শিল্পের পর এটি হলো শিল্প বিকাশের দ্বিতীয় পর্যায়।
মেইক ইন্ডিয়ার সময়কালে বাংলাদেশের মেনুফেকচারিং হিস্যা ১৬ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশের জিডিপির সার্বিক বৃদ্ধি বছরে ৮ ভাগ। তা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি। আরো বিস্ময়কর বিষয় হলো, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি বেড়ে হয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলার, আর ভারতের ১৮ বিলিয়ন থেকে কমে হয়েছে ১৬ বিলিয়ন।

তৈরী পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এতে বিপুলসংখ্যক আধা দক্ষ শ্রমিক, বিশেষ করে নারীদের নিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৫ হাজার তৈরী পোশাক কারখানার কর্মীদের ৮৫ ভাগই নারী।
এমনকি ভিয়েতনাম পর্যন্ত ভারতের চেয়ে বেশি তৈরী পোশাক রফতানি করে ডলারের আলোকে।
মেনুফেকচারিং হলো পূর্ণকালীন চাকরি। এতে নির্ধারিত বেতন থাকে বলে খণ্ডকালীন শ্রম বা পাকারো বানানোর কাজের চেয়ে একে অগ্রাধিকার দেয়। এই খাত বিকাশে ভারত ব্যর্থ হলো কেন? আমার জবাব হলো, মেইক ইন্ডিয়া আসলে কোনো কৌশল নয়। এটি আসলে একটি লোগো, কিছু ফাঁকা বুলি এবং এ কারণেই তা অর্থহীন।

আপনার কাছে আধা দক্ষ শ্রমিক থাকলেই কেবল মেনুফেকচারিং শিল্পে যেতে পারেন। চীনের শিক্ষাব্যবস্থা ভারতের চেয়ে অনেক ভালো। যারা সেখানে গেছে ও তাদের শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় করেছে, তারা বিষয়টি জানে। শ্রমের মূল্য বেশি বলে চীনে মেনুফেকচারিং শিল্প প্রতিষ্ঠা ব্যয়বহুল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারত গত ৫ বছর ধরে মেইক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচির কথা বলে এলেও চীনে তার প্রতিষ্ঠা হ্রাস পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন, মেইক ইন ইন্ডিয়ার লক্ষ্য হলো ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করা। এটাও আসলে কোনো লক্ষ্য নয়।

আগে হোক, পরে হোক ভারতীয় অর্থনীতি ওই অঙ্কে পৌঁছাবেই। প্রশ্ন হলো, কত আগে যাবে এবং গতি বাড়াতে সরকার কী করবে। এগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়।
মোদি ভারতের অর্থনীতিকে মেইক ইন ইন্ডিয়ায় পরিচালিত করার কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। বাস্তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে আর কথাই বলেন না। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য দেয়া আছে, সেগুলোর সবই ২০১৪ সালের, হালনাগাদ করা হয়নি।
আমরা এই কৌশলের ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া দেখতে চাই। আমাদের প্রয়োজন নতুন কৌশল গ্রহণ। তা না হলে আমাদের মেনুফেকচারিং আরো পতনের দিকে যাবে।

ন্যাশনাল হেরাল্ড


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us